Logo
×

Follow Us

প্রচ্ছদ প্রতিবেদন

বকেয়ার জেরে বিদ্যুৎ সরবরাহ ৬১ শতাংশ কমিয়েছে আদানি

Icon

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৭:১৩

বকেয়ার জেরে বিদ্যুৎ সরবরাহ ৬১ শতাংশ কমিয়েছে আদানি

আদানি গ্রুপের গোড্ডা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র।

ভারতের আদানি গ্রুপ বাংলাদেশের কাছে প্রায় ৪৬৪ মিলিয়ন ডলার বকেয়া থাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ৬১ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। সোমবার বিকেল ৩টার পিক আওয়ারে এই সরবরাহ কমানো হয়।

চুক্তি অনুযায়ী ন্যূনতম ১,৪০০ মেগাওয়াট সরবরাহের কথা থাকলেও আদানি সাধারণত ভারতের গোড্ডা প্ল্যান্ট থেকে প্রায় ১,২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। কিন্তু পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, ১৩ নভেম্বর পিক আওয়ারে কোম্পানিটি মাত্র ৪৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে। এর আগে ১১ নভেম্বর সন্ধ্যায় সরবরাহ ছিল ১,২২০ মেগাওয়াট এবং ১২ নভেম্বর পিক আওয়ারে ছিল ১,১৯৬ মেগাওয়াট।

এদিকে বিদ্যুৎ আমদানি বন্ধের ঝুঁকি এড়াতে অন্তবর্তী সরকার আদানি পাওয়ারকে মোট ৪৯৬ মিলিয়ন ডলার বকেয়ার মধ্যে ১০০ মিলিয়ন ডলার চলতি মাসেই পরিশোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কোম্পানিটি বকেয়া না মেটালে সরবরাহ বন্ধের হুঁশিয়ারি দিলেও ১১ নভেম্বর অফ পিক আওয়ারে ৮৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রেখেছিল। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, ধাপে ধাপে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধের একটি সমঝোতায় রাজি হয়েছে আদানি।

তবে কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, মোট বকেয়া নিষ্পত্তির বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি সরকার ধাপে ধাপে ১০০ মিলিয়ন ডলার করে ছাড় করবে।

গত মঙ্গলবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফয়জুল কবির খান সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, “আদানির গোড্ডা প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ যেন ব্যাহত না হয়, সে লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা চাপ কমাতে আংশিক পরিশোধে এগোচ্ছি।”

ফয়জুল কবির যোগ করেন, “কিছু আইনি ও মূল্যসংক্রান্ত জটিলতা এখনো সমাধান হয়নি, তবে সরকার আকস্মিক সরবরাহ বন্ধের ঝুঁকি নিতে পারে না।”

তবে বাংলাদেশ আদানির দাবি করা পাওনার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে আসছে। সরকারের দাবি, কোম্পানিটি কয়লার মূল্য ও জরিমানার অঙ্ক ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানোয় মূল বকেয়া ২৬২ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।

এই মাসের শুরুতে আদানি পাওয়ার এক চিঠিতে সতর্ক করে, ১০ নভেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধ না হলে পরদিন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হবে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, “চুক্তির ধারা যেভাবে আদানির পক্ষে করা হয়েছে, তাতে কোম্পানিটি নিজের ইচ্ছামতোই আচরণ করবে। তাদের হাতে ক্ষমতা আছে। তাছাড়া বর্তমান সরকারের সঙ্গে কোম্পানির সম্পর্কও শীতল হয়ে গেছে।”

পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড চুক্তিটি পুনর্মূল্যায়নের জন্য আন্তর্জাতিক সালিশে যাওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে, যা জনমনে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

পিজিসিবির তথ্য অনুযায়ী, ভারতের অন্যান্য গ্রিড সংযোগের মাধ্যমে ১,০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিপরীতে বিদ্যুৎ আমদানি ৯৮৭ মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে।

আদানি প্রায়ই বকেয়া বিলের কারণে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দেয়। সরকার মনে করে, চুক্তিতে নির্ধারিত কয়লার দাম অযৌক্তিক, এবং এ নিয়ে তারা এখন আদানির সঙ্গে আলোচনায় আছে।

ভারতের গোড্ডায় আদানি পাওয়ারের দুটি ইউনিট বিশিষ্ট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ২০২৩ সালে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। প্রতিটি ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৭৫০ মেগাওয়াট। রোহনপুর চাঁপাইনবাবগঞ্জ ট্রান্সমিশন লাইনের মাধ্যমে এই বিদ্যুৎ আসে। ২০১৭ সালে স্বাক্ষরিত ২৫ বছর মেয়াদী বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) অনুযায়ী এই কেন্দ্রের পুরো বিদ্যুৎ বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডকে বিক্রি করা হয়।

বাংলাদেশের জন্য প্রতিকূল এমন অভিযোগ ওঠায় চুক্তির শর্তগুলো পর্যালোচনায় একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি কাজ করছে। তবে আইনি বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, চুক্তি বাতিল বা সংশোধনের চেষ্টা করা হলে আন্তর্জাতিক সালিশে মামলা এবং বিপুল অঙ্কের জরিমানার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র নয়াদিল্লি থেকে যে কর সুবিধা পেয়েছিল, আদানি পাওয়ার তা বাংলাদেশকে দেয়নি বলে সরকার অভিযোগ করেছে।

বর্তমানে বাংলাদেশ আদানি পাওয়ার থেকে প্রায় ১,৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করে, যা দেশজুড়ে শিল্প ও গৃহস্থালির সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫