Logo
×

Follow Us

চিঠি

ফিদেলের কাছে চে গুয়েভারার বিদায়ী চিঠি

Icon

ফিদেল ক্যাস্ট্রো

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৩, ১৩:৩০

ফিদেলের কাছে চে গুয়েভারার বিদায়ী চিঠি

সংগৃহীত ছবি: ফিদেল ক্যাস্ট্রো

এপ্রিল ১, ১৯৬৫

হাভানা

আপনাকে বলার মত এ মুহূর্তে আমার অনেক কথাই মনে পড়ছে। যখন আপনার সঙ্গে মারিয়া আন্তোনিয়ার বাড়িতে দেখা হয়েছিল, আপনার সঙ্গে যোগ দেয়ার জন্য যখন আপনি প্রস্তাব দেন— প্রস্তুতি পর্বের সব উত্তেজনা, সব কিছুই যেন আজ খুব বেশি মনে পড়ছে।

একদিন তারা এসে যখন জিজ্ঞেস করল যদি মৃত্যুর মুহুর্ত চলে আসে তবে মনের এ অনুভূতির কথা কাকে জানাতে হবে ! এ প্রশ্নের উত্তর ছিল- বাস্তবিক মৃত্যুর আশঙ্কা আমাদের সবাইকে আঘাত করবে।

পরে জানতে পারলাম এটাই সত্য, বিপ্লবে (যদি এটা সত্যিকারের বিপ্লব হয়) একজন জয়ী হয় কিংবা মৃত্যুবরণ করে। অনেক কমরেড বিজয়ের পথে মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছেন।

তবে আজ সবকিছুরই নাটকীয় স্বর বেশ লাঘব পেয়েছে, কারণ আমরা অনেক বেশি পরিপক্ব হয়ে উঠেছি কিন্তু ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে।

কিউবার অধিক্ষেত্রে আমার যে কর্তব্যবোধ কিউবার বিপ্লবের সঙ্গে বেঁধে দিয়েছিল, আমি মনে করি আমি তা এখনও লালন করে যাচ্ছি।

আমি বিদায় নিচ্ছি আপনার কাছ থেকে, কমরেডদের কাছ থেকে, আপনার জনগণের কাছ থেকে।

পার্টির নেতৃত্বে আমার যে অবস্থান, মন্ত্রীর পদ থেকে, কমান্ডারের র‌্যাঙ্ক থেকে পদত্যাগ করলাম এবং আমার কিউবান নাগরিকত্ব সমর্পণ করলাম।

আইনি কোনো প্রক্রিয়া আর কিউবার সঙ্গে আমাকে বেঁধে রাখছে না। একমাত্র বন্ধনটি অন্য ধরনের, যা কখনো ভাঙা যায় না— নিয়োগকৃত কোনো পদ থেকে যেমন সরে আসা যায়।

আমার বিগত জীবন পর্যালোচনা করে বিশ্বাস করি আমি পর্যাপ্ত সততা ও আত্মত্যাগের সঙ্গে কাজ করে বৈপ্লবিক বিজয় সংহত করতে পেরেছি।

হয়ত আমার একমাত্র বড় ব্যর্থতা ছিল সিয়েরা মেস্ত্রার সেই প্রথম মুহূর্ত থেকে আপনার ওপর আরো আস্থা না রাখার পাশাপাশি একজন নেতা ও বিপ্লবী হিসেবে আরো দ্রুত আপনার গুণাগুণ বুঝতে না পারা।

আপনার পাশে আমার কাটানো দিনগুলো অত্যন্ত চমকপ্রদ ছিল। উজ্জ্বল ও দুঃখময় ক্যারিবীয় দিনগুলোয় ক্যারিবীয় (মিসাইল) সংকটে আমি যে আমাদের মানুষের পাশে থাকতে পেরেছি, এ আমার অনেক অহংকার।

সেসব দিনে আপনি যে রকম রাষ্ট্রনায়কোচিত ভূমিকা রেখেছিলেন, এমন নজির খুব দেখা মিলে। 

আমি যে নির্দ্বিধায় আপনাকে অনুসরণ করতে পেরেছি, আপনার চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে নিজেকে মেলাতে পেরেছি, বিপদ ও নীতির মূল্যায়ন করতে পেরেছি, সেজন্যও অনেক গর্বিত।

পৃথিবীর অন্যান্য জাতি আমার সহযোগিতার বিনীত উদ্যোগ প্রত্যাশা করে। সেটা আমি করতে পারি কিন্তু কিউবার প্রধান হিসেবে আপনার যে দায়িত্ব, তা ছেড়ে আসা আপনার পক্ষে সম্ভব নয়, কাজেই আমাদের বিচ্ছিন্ন হওয়ার সময় চলে এসেছে।

আপনি এটা অনুধাবন করবেন আনন্দ ও বেদনার মিশ্র এক অনুভূতির মধ্য দিয়ে আমাকে এটা করতে হচ্ছে। একজন নির্মাতা হিসেবে আমি এখানে আমার বিশুদ্ধতম আশা এবং এখানে যাদের আঁকড়ে ধরে ছিলাম, সেই প্রিয়তম মানুষদের রেখে যাচ্ছি।

যে মানুষেরা আমাকে পুত্রের মতো বরণ করেছিল, আমি তাদের ছেড়ে যাচ্ছি। এটা আমার আত্মার একটি অংশকে জখম করে। আপনি আমাকে যে শিক্ষা দিয়েছেন, আমার মানুষের বিপ্লবী উদ্যম সবচেয়ে পবিত্র দায়িত্ব পালন করার তাগিদ— গভীরতম ক্ষতকেও সারিয়ে তোলে— আমি এসব নিয়ে নতুন রূপায়ণে যাচ্ছি।

আমি আরো একবার বলতে চাই, আমি কিউবাকে আমার ব্যাপারে সব দায়িত্ব থেকে মুক্ত করে দিয়েছি। কেবল এর উদাহরণ থেকে যে দায়িত্বের জন্ম হয়, তা বাদে আর সকলই।

জীবনের শেষ মুহূর্তগুলোয় আকাশের নিচে থাকি, আমার শেষ চিন্তা হবে এই মানুষদের নিয়ে এবং আপনাকে নিয়ে।

আপনি আমাকে যে শিক্ষা ও আপনার যে উদাহরণ দিয়েছেন, সেজন্য আমি কৃতজ্ঞ, আমার কাজের শেষ পরিণতি পর্যন্ত আমি থাকব বিশ্বস্ত আজীবন আপনার জন্য।

আমাদের বিপ্লবের পররাষ্ট্র নীতির সঙ্গে আমাকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এখনো তা হচ্ছে। আমি যেখানেই থাকি না কেন কিউবান বিপ্লবী হিসেবে আমি আমার দায়িত্ব অনুভব করি।

আমি যে আমার স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য বস্তুগত কিছু রেখে যাচ্ছি না, সেজন্য আমি দুঃখিত নই, বরং এমনটাই যে হয়েছে সেটাই আমার তৃপ্তি।

আমি তাদের জন্য কিছুই চাই না। কারণ রাষ্ট্র তাদের বেঁচে থাকার জন্য ও পড়াশোনার জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা দেবে।

আপনাকে এবং আমাদের জনগণকে বলার মতো আমার অনেক কিছুই ছিল, কিন্তু এখন ভাবছি এর সবই অপ্রয়োজনীয়। আমি যেভাবে আমার শব্দের কথামালা প্রকাশ করতে চাই সেভাবে তা প্রকাশ করতে না পেরে শুধুমাত্র কাগজের ওপর আঁকিবুঁকি করার কোনো  যুক্তি নেই।

সংগৃহীত 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫