একদিনের এক ঘটনা আজ আমার চিঠিতে আপনাদের জানাচ্ছি। আমি সেদিন ট্রেনে করে ঢাকা থেকে লালমনিরহাট যাচ্ছিলাম। আমার কামরার পাশেই এক বৃদ্ধা ছিলেন। আমার বগির শেষ প্রান্তে থাকায় সহজেই ওই বৃদ্ধাকে দেখা যাচ্ছিল আমার নাক বরাবর। উপরোক্ত বগিতে বৃদ্ধ একাই ছিলেন। হঠাৎ ১২ জন যুবক চলন্ত ট্রেনের ওই বগিতে উঠেই চিৎকার করে গান গাওয়া শুরু করলেন। তারা সবাই ছুরি দিয়ে আম কেটে কেটে খাচ্ছিলেন।
হঠাৎ একটি যুবক বলে উঠলোঃ "চল আমরা ট্রেনের চেইনটা টেনে ট্রেনটাকে থামিয়ে দেই।"
জবাবে ২য় যুবক বললেনঃ "না দোস্ত, লেখা আছে পাঁচ শত টাকা জরিমানা অন্যথায় ছয় মাস জেল।"
১ম যুবকঃ "আমরা একশো টাকা করে চাঁদা তুলি। বারোশো টাকা হবে বাকী সাত শো টাকা দিয়ে লাঞ্চ করবো। ‘’
দেখলাম এ কথা বলেই বারোশো টাকা তুলে ১ম যুবকের পকেটে রাখলো সবাই।
এদিকে ৩য় যুবক বললেন- "দোস্ত, আমরা চেইন টেনে ঐ বুড়োটাকে দেখিয়ে দিলে পাঁচ শো টাকাও বাঁচলো আমরা ১২ জনে সাক্ষী দিলে টিটি মেনে যাবে।"
বৃদ্ধ কাঁদতে কাঁদতে হাত জোড় করে তাদের কাছে এ বিষয়ে রেহাই চাইলেন। কিন্ত যুবকগুলো বৃদ্ধের অনুরোধ অবজ্ঞা করে চেইনটা টান দিতেই টিটি এসে জিজ্ঞাসা করলেন, "কে চেইন টেনেছে?"
যুবকগুলো বৃদ্ধকে দেখিয়ে তার কথাই বলল। টিটি বৃদ্ধকে বললেন, অকারনে চেইন টানলে পাঁচ শত টাকা জরিমানা অথবা ছয় মাস জেল।
যুবকগুলো চিৎকার করে বললো, স্যার, বুড়োটা অকারনেই টেনেছে। হো হো হো হো........."
বৃদ্ধ একটু দাঁড়িয়ে বললো, টিটি সাহেব আমি বিপদে পড়েই চেইন টেনেছি। টিটি জানতে চাইলেন কি বিপদ? বৃদ্ধ বললেন, ঐ যুবকগুলো আমার গলায় ছুরি ধরে আমার বারো শো টাকা ছিনতাই করেছে। ওই দেখুন পকেটে বারো শো টাকা আর পকেটে ছুরি।
টিটি তা দেখা ও শুনে বিস্মিত হয়ে পুলিশ কল করে ১২ জন যুবককে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেলেন।
তখন বৃদ্ধ তার পাকা চুল/দাড়ি দেখিয়ে যুবকগুলোকে বললেন, এইগুলো বাতাসে পাকে নাই।
আমি পুরো ঘটনাটি দেখে এটাই বুঝলাম অভিজ্ঞতার কাছে যৌবনের উদ্দামতাও হার মানে।
আলম আহমেদ
শিক্ষার্থী, ঢাকা।