Logo
×

Follow Us

চিঠি

পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু প্রতিরোধে প্রয়োজন জনসচেতনতা

Icon

সিফাতুল্লাহ তাসনীম

প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:৪২

পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু প্রতিরোধে প্রয়োজন জনসচেতনতা

পানিতে ডুবে মৃত্যুর প্রতীকী ছবি।

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য নদ-নদী, হাওর, খাল-বিল, দিঘি ও পুকুর। বর্ষাকালে এসব উৎসের পানির মাত্রা আরও বেড়ে যায় এবং বিভিন্ন অঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়। সাঁতার না জানার কারণে প্রতি বছর অসংখ্য শিশু পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করছে। বাংলাদেশ সরকার আমাদের দেশে শিশুমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু হওয়াকে চিহ্নিত করেছে।

সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) এক গবেষণা অনুযায়ী, প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ১৯ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করছে, যার মধ্যে প্রায় ১৪ হাজার ৬০০ জনের বয়স ১৮-এর নিচে। প্রতিদিন বাংলাদেশে ৫০ জন পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করে, যার মধ্যে ৪০ জনই শিশু। পরিসংখ্যান আরও বলছে, পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণকারী শিশুদের সবচেয়ে বড় অংশ এক থেকে চার বছর বয়সী। তাছাড়া পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার মেয়ে শিশুদের তুলনায় পুরুষ শিশুদের মাঝেই বেশি। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরে সর্বাধিক শিশু পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করে।

সুতরাং, যে শিশুরা আগামী দিনে দেশ ও জাতির কর্ণধার, আমরা যদি তাদের হারাতে না চাই তাহলে পানিতে ডুবে মৃত্যু হওয়ার ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সিআইপিআরবির তথ্য অনুযায়ী, পানিতে ডুবে মারা যাওয়া শিশুদের ৬৬ শতাংশই পুকুরে ডুবে মারা যায়। যেহেতু বাংলাদেশের গ্রামগুলোয় পুকুর ও খাল-বিলের সংখ্যা বেশি, তাই পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি গ্রামীণ শিশুদের মধ্যেই বেশি। তাছাড়া নৌকাডুবি, ট্রলারডুবি প্রভৃতি দুর্ঘটনায়ও অনেক শিশু মারা যায়। এজন্য শিশুদের সাঁতার শেখানোর ব্যাপারে মা-বাবাকে সর্বোচ্চ সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি জলযানগুলোয় জীবনরক্ষাকারী সামগ্রীর সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। শহরের শিশুদের সাঁতার শেখানোর জন্য সুইমিং পুলের সংখ্যা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে যেহেতু পানিতে ডুবে মৃত্যুর সর্বোচ্চ ঝুঁকি থাকে এবং বর্ষাকালে আশপাশে পানির পরিমাণ বেড়ে যায়, তাই এ সময় শিশুদের আরও বেশি নজরদারিতে রাখতে হবে। পাশাপাশি কোনো শিশু পানিতে পড়ে গেলে তাকে যে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া যায়, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে তাও জেনে রাখা প্রয়োজন।

পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে। মসজিদ, মন্দির, ধর্মীয় উপাসনালয়, রাজনৈতিক সমাবেশসহ যেসব জায়গায় অনেক মানুষের সমাগম হয়, সেখানে থেকে সর্বসাধারণকে সচেতন করার চেষ্টা চালাতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লোকজনকে সচেতন করতে বিভিন্ন পোস্টার, ভিডিও ক্লিপ, শর্ট ফিল্ম প্রভৃতি তৈরি করে প্রচার করা যেতে পারে। টেলিভিশনগুলোয় পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে নানা সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের প্রচার মানুষকে আরও সচেতন হতে উদ্বুদ্ধ করবে। সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়ে শিশুরা এই দেশের মুক্ত পরিবেশে জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে বেড়ে উঠুক।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫