
প্রতীকী ছবি
মানুষ একটি সামাজিক জীব। আমাদের চারপাশের পরিবেশকে কেন্দ্র করে আমাদের বেড়ে ওঠা। জীবনের চলার পথে আমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে ঘাত-প্রতিঘাত অতিক্রম করতে হয়। চলার পথে সকল সমস্যা নিজে সমাধান করা সম্ভব নয়, প্রয়োজন হয় অন্যের সাহায্যের। যার কারণে আমরা বিভিন্ন গুনিজনের দ্বারস্থ হই। আমাদের অস্তিমজ্জায় থাকে তার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। বুকে থাকে একরাশ আশা ও বিশ্বাস।
কিন্তু আমাদের সকল আশা ও বিশ্বাস ভেঙ্গে তারা ছুটে চলে স্বার্থের পিছনে। যখন নীতি নির্ধারকেরা নীতি বহির্ভূত কাজ করে তখন সাধারণ মানুষ হতাশাগ্রস্থ হয়, ভেঙ্গে পড়ে, সরকারি মহলের উপর চলে আসে বিতৃষ্ণা। আইনকে সম্মান করবে মানুষ তখন; যখন তারা তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন। কিন্তু আমাদের দেশের প্রতিটি কার্যক্রম তার উল্টো চিত্র বহন করে। প্রশাসন মূলত কাজ করেন চলমান সরকারি মহলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য। আইনের লোক যদি হয় ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ; তবে তাকে দিয়ে আমরা আর কতটুকু দেশের উন্নয়ন আশা করতে পারি।
ভালো কাজে বালাই বেশী। ভালো কাজ করতে গেলে কেউ তেমন সঙ্গ দিতে চায় না। সৎ উপায়ে কর্ম সম্পাদন করতে গেলে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হবার পরেও কাজটি রয়ে যায় অপূর্ণ। ১০০ টাকা ধরিয়ে দিলে ১ সপ্তাহের কাজ হয়ে যায় ১ দিনে। এই দেশে ভালো থাকাকে বোকামি মনে করা হয়। চতুরতা বলতে তারা যেটা বুঝায় তার সাথে মিশে আছে জোচ্চুরি। যদি আপনি কাউকে ঠকিয়ে কিছু আত্মসাৎ করতে পারেন তবেই আপনি তাদের মত চতুর হতে পারবেন নতুবা নয়। যদি আপনি সৎ থেকে রাজনীতি করতে চান তবে আপনার মৃত্যু আপনার সন্নিকটে। আপনার দলের লোক, আপনজন আপনার মৃত্যুনামা লিখবে। ভালো মানুষ কখনো ঝামেলায় যেতে চায় না। সেটা যদি সৎ কাজের জন্যেও হয়। তারা চায় খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে। যেই দেশে ৫০ টাকা দিলে সিরিয়াল নাম্বার ১০০ থেকে নেমে ১০ চলে আসে সেই দেশের মানব মনের উন্নতি কিভাবে করবেন! দোষীদের বিচার হয় না, বিচার হয় গরীবের। আইন শুধু নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের জন্য প্রযোজ্য। উচ্চবিত্ত যা বলে তাই আইন। অন্যায়কারীর যথাযথ বিচার হয় না বলে সবাই ছুটছে অন্যায়ের দিকে। ন্যায়ের পাল্লায় হাত রেখে দেখা যেন বেমানান হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমানে।
যেখানে নৈতিকতার মূল্য যেখানে শূন্য, সেখানে অনৈতিকতা তো স্থান পাবেই। মানুষ কাজকে নয় ভালোবাসে অর্থকে। সেটা হোক ভালো কিংবা খারাপ কাজ থেকে উপার্জিত। সঠিক পথে সেবা লাভ যেখানে দীর্ঘসময়ের ভোগান্তি বয়ে আনে। অনৈতিকতা সেখানে পছন্দের তালিকায় ১ নম্বরে থাকা স্বাভাবিক। সাধারণ মানুষের বিশ্বাস সরকারি মহলের উপর ফিরিয়ে আনতে চাই নিরপেক্ষতা, আইনের যথাযথ ব্যবহার, জবাবদিহিতা, মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
সরকারি সেবা পেতে মানুষের ভোগান্তির নিরসন পারে মানুষকে সঠিক পথে ধাবিত করতে। যে যাকে পারছে মেরে দিচ্ছে। এর কারণ হিসেবে আমি সঠিক শাস্তির অভাবকে দায়ী করব। অপরাধীর যদি সঠিক বিচার হতো তাহলে এত অন্যায়ের বীজ বাংলাদেশে রোপন হতো না। লঘু শাস্তি মানুষকে অন্যায় করতে আগ্রহী করে তোলে। এমন আইন করুন যাতে করে কেউ কাউকে দুষ্টুমি করে গালি দিতেও ১০০ বার ভাবে। সংবিধান শুধু কাগজের পাতায় না লিখে বাস্তবতায় রূপ দিন। প্রশাসনিক বিভাগের স্বচ্ছতা বজায় রাখুন।
আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যেন গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে জীবনের নিরাপত্তা শূন্যে সেখানে অন্য সকল বিষয় মূল্যহীন। পুরো সরকারি মহল দুর্নীতিতে ভরাডুবি। বাঙালিরা নিজেরাও জানে না আসলে তারা কী চায়। এই অসভ্য বর্বর মানুষগুলোই সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াতে গিয়ে কত শান্ত-শিষ্ঠ, নিয়ম মানতে তৎপর! এর কারণ হিসেবে আপনি কোন বিষয়টাকে দায়ী করতে চান? চলমান পরিবেশ, বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ, মনুষ্যত্ববোধ। আমি মনে করি, সব কয়টি বিষয় কম-বেশী দায়ী। যেটা মানুষের মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে থাকে। দেশের মানুষকে সুন্দর একটি দেশ উপহার দিতে এগুলোর পুরোদমে সংস্কার ছাড়া বিকল্প নেই। ইট, পাথর আর কংক্রিটের ইমারত গড়ে তোলার আগে মানব মস্তিষ্কে মনুষ্যত্বের ইমারত গড়ে তুলুন। সরকারি মহলের উপর জনগনের আস্থা তৈরি হলে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব।
ইমন হাওলাদার
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ