
বনভোজন ও শিক্ষা সফর। ছবি: সংগৃহীত
শীত এলেই সবার মনে হয় দূরে কোথাও যাই। চেনা পরিবেশের বাইরে গেলে মন ভালো হয়ে যায়। এ সময়ে যাদের পড়াশোনার চাপ থাকে না তারা সবাই বেড়াতে যেতে চায়। এ যুগের ছেলেমেয়েরা বনভোজন বা শিক্ষা সফরের চেয়ে ঘরে বসে মোবাইল ফোন নিয়ে বসে থাকতে পছন্দ করে। তাদেরকে যদি বিচিত্র প্রকৃতি, ইতিহাস বা বিখ্যাত মানুষের স্মৃতি বিজড়িত জায়গা দেখানো যায় তা হলে তারা খুব খুশি। খুশি হওয়ার প্রয়োজন আছে। মানসিক শান্তি ছাড়া শারীরিক সুস্থতা আসে না।
বনভোজন বহু পুরনো একটা বিনোদন। এর আয়োজন করে সমমনা কিছু মানুষ। গ্রামের প্রত্যেকটা বাড়িতেই গাছপালার বাগান আছে। তার মধ্যে ঢুকে সবাই একত্র হয়ে রান্না করে। নদীর পাড়ে বা খোলা মাঠেও এই আয়োজন করা যায়। ঘাসের ওপর সবাই গোল হয়ে খেতে বসে। ভীষণ আনন্দের সেই আয়োজন। আজকাল পরিবারের সবাই মিলে একই বনভোজনে অংশ নেয়। কেউ রান্না করে, কেউ খেলে, কেউ গান গায়। খাওয়ার সময় চেয়ার ও টেবিল ব্যবহার করে। এত বড়ো আয়োজনে বেশি আনন্দ হয় না। ব্যবস্থাপনা ভালো না হলে অনেকেই কষ্ট নিয়ে ঘরে ফেরে। দূরে গিয়ে বনভোজন করলে এই সমস্যাটা বেশি হয়। হয়তো বলা হলো বাস সাতটায় ছাড়বে। কিন্তু আটটায়ও ছাড়ল না। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বয়স্কদের দিকে খেয়াল রাখা। তাদেরকে ভালো জায়গায় বসতে দিতে হবে। খাবারটা আগে দিতে হবে। ওয়াশরুমে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে। আজকাল তো অনেকেই এসব দিকে খেয়াল রাখে না।
কিছু মানুষ সব সময় সুবিধা নেয়। আয়োজনের দায়িত্বও তারা হাতে রাখে। কিছু মানুষ সব সময় কষ্ট করে। সবার টাকায় র্যাফেল ড্র হয়। কিন্তু সবাই অংশ নিতে পারে না। এখানে ধর্মীয় একটা ব্যাপার আছে। কিছু মানুষ অতিরিক্ত শব্দ সহ্য করতে পারে না। বাসের মধ্যে জোরে গান বাজানো হলে তার কষ্ট হয়। সবার যাতে ভালো লাগে সে জন্য কাছাকাছি আয়োজন করতে হবে। নিজের খরচে যাবে। ভালো না লাগলে বাড়িতে চলে যাবে। কাউকে জোর করে কষ্ট দেওয়া যাবে না।
শিক্ষার্থী বা প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য শিক্ষা সফর বাধ্যতামূলক। এ জন্য নম্বর আছে। যে যাবে না সে নম্বরটা পাবে না। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হয়, না গেলেও টাকা দিতে হবে। এটা অন্যায়। যে যাবে না সে মিথ্যে প্রতিবেদন লিখবে বা অন্যের আনা জিনিস জমা দেবে। দুই দিনের শিক্ষা সফরে থাকা ও খাওয়ার জন্য বেশি টাকা খরচ করা উচিত নয়। মূল কাজের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। দশ দিন বা তার চেয়ে বেশি সময়ের সফরে এক বেলা ভালো খাবার দিতে হয়। সেটা সাধারণত রাতেই হয়। সকালে সবজি ভাজি দিয়ে রুটি বা পরাটা, দুপুরে পাউরুটি ও কলা এবং মাঝখানে দুবার আপেল, কমলা ইত্যাদি দিতে হয়।
যে আয়োজন সবার টাকায় হবে সেটা সবার জন্য আনন্দের হতে হবে। এতটুকু মানবতা যাদের নেই তাদের সঙ্গে কোথাও যাওয়া যায় না। তার চেয়ে সমমনা অল্প কিছু মানুষ মিলে বনভোজন বা শিক্ষা সফর করা যায়। তাও সম্ভব না হলে রেস্টুরন্টে গিয়ে এক বেলা খেয়ে আসা যায়। ওখানেও শিশুদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা আছে। শিশু পার্কের মধ্যেও খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। আগে নিজের সুখ, পরে সামাজিকতা। অভদ্র মানুষের সঙ্গে সামাজিকতা রক্ষা করার জন্য সময় নষ্ট করার কোনো প্রয়োজন নেই।