অবসরপ্রাপ্তদের দুর্দশা দেখার কি কেউ নেই?

একেএম সামিউল হাসান ভূঞা অবসরপ্রাপ্ত চিফ (এমআইএস) বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন
প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২০, ২০:০২

শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন একটি সরকারি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এ কর্পোরেশনের অধীনে ১৫টি চিনিকল ও একটি যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা রয়েছে। আখ চাষ ও চিনি শিল্পের সঙ্গে দেশের প্রায় ৫ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত। এ কর্পোরেশনের অবসরপ্রাপ্ত প্রায় ২৭৫০ শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা ২০১৪ সাল থেকে তাদের প্রাপ্য গ্র্যাচুইটির প্রায় ২৫৫ কোটি টাকা না পাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তারা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। অনেকেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে পারছেন না। চিকিৎসার অভাবে অনেকে ইতোমধ্যে মারাও গেছেন। টাকার অভাবে সন্তানদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিবাহযোগ্য ছেলেমেয়েদের বিয়ে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। বাসাভাড়া দিতে না পারায় সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হতে হচ্ছে। যেখানে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, মানুষের জীবনযাত্রার মান বাড়ছে, সেখানে আমরা দিন দিন অসহায়বোধ করছি। অথচ আমাদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করা হলে আমরাও উন্নয়নের অংশীদার হতে পারতাম।
বিশ্বজুড়ে এখন করোনাভাইরাসের করাল থাবা। একজন বয়োবৃদ্ধ মানুষের দেহে অনেক রোগ বাসা বাঁধে এবং এটাই স্বাভাবিক। ফলে দেহের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে গিয়ে অ্যান্টিবডি বা যোদ্ধা সেল তৈরি করার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় বয়োবৃদ্ধদের ভাইরাস প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। গ্র্যাচুইটির টাকা পেলে এসব বয়োবৃদ্ধ পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিরোধ সক্ষমতা বাড়িয়ে টিকে থাকার লড়াইটা অন্তত চালিয়ে যেতে পারতেন। আমরা তো কোনো ভাতা কিংবা অনুদান চাচ্ছি না, কারও দয়া-দাক্ষিণ্যও কামনা করছি না। আমরা শুধু আমাদের ন্যায্য পাওনাটুকু চাচ্ছি। এ থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি কেন?
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বয়োবৃদ্ধদের একটু বেশি অসুখ-বিসুখ হওয়াটাই স্বাভাবিক। এ বিবেচনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্তদের জন্য সব সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে মেডিকেল ভাতা প্রদান করেছেন। পাশাপাশি অবসরপ্রাপ্তদের জন্য ঈদ বোনাস ও বৈশাখি ভাতা প্রদানেরও নির্দেশ জারি করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে ২৮.০৫.২০১৯ তারিখে উৎসব ভাতা, চিকিৎসা ভাতা এবং বাংলা নববর্ষ ভাতা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানানোর পরও আমরা উল্লেখিত ভাতা পাচ্ছি না।
করোনাভাইরাস এসে আমাদের জীবনযাত্রা স্থবির করে দিয়েছে। অমানিশার অন্ধকার আমাদের চারপাশ ঘিরে ধরেছে। এ পরিস্থিতি একদিন কেটে যাবে ইনশাআল্লাহ। সচল হবে উন্নয়নের ধারা। উন্নয়নের হাওয়ায় আমরা পাল উড়িয়ে উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশের দিকে ধাবিত হবো। সেই যাত্রায় আমরা যেন হারিয়ে না যাই।