Logo
×

Follow Us

চিঠি

শিক্ষকতা পেশাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে

Icon

মো. বোরহান উদ্দিন সরকার

প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:৫২

শিক্ষকতা পেশাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে

মো. বোরহান উদ্দিন সরকার

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। আর শিক্ষার মেরুদণ্ড হলো শিক্ষক। শিক্ষককে বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। আর এই কারিগর যদি উপযুক্ত সম্মান এবং সম্মানী না পান তখন এই পেশায় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আর মেধাবী শিক্ষার্থীরা আসতে আগ্রহ দেখাবে না। প্রত্যেক মানুষই উন্নত জীবনযাপন করতে চায়। একজন ক্ষুধার্ত মানুষ বরাবরই চিন্তা করেন খাদ্য অন্বেষণের। অর্থনীতির ভাষায় একটা কথা আছে, দরিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করা মানুষকে দিয়ে কখনো দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। যদি তাই হয়, নিশ্চয় শিক্ষকতা পেশাকে অবশ্যই আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। কারণ, অল্প সম্মানিতে যেমন মেধাবী শিক্ষক খুঁজে পাওয়া কঠিন, তেমনি তাদের আন্তরিকতা এবং মনোযোগ আকর্ষণ করাও কঠিন।

বাংলাদেশে ৯০ ভাগেরও বেশি শিক্ষার্থী এমপিওভুক্ত শিক্ষfক প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে। আর এই এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ৫ লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারিদের সম্পর্কে দুটি কথা বলতেই হচ্ছে। শিক্ষকদের চেয়ে কম শিক্ষিতরা কমিটির সদস্য কিংবা সভাপতি হয়ে শিক্ষকদের অযাচিত জ্ঞান দান করেন। এমনকি শিক্ষক-কর্মচারিদের নির্যাতনের জন্য টর্চার সেল গঠন করেন। হায়রে কমিটি ব্যবস্থা! কমিটির সদস্যরা কোন অপরাধে অভিযুক্ত প্রমাণিত হলে অধিদপ্তর সেই কমিটি ভেঙে দিয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানের শাস্তির ব্যবস্থা করেন। কার অপরাধের শাস্তি কে ভোগ করে? এ অবস্থা থেকে কি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মুক্তি পাবে না?

শিক্ষক-কর্মচারিদের উৎসব ভাতা নিয়ে কথা বলতে অনেকেই লজ্জা পায়। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত সকল শিক্ষক ও কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া এক হাজার টাকা। সভ্য সমাজে কি কোথায় এই একহাজার টাকায় বাড়ি ভাড়া পাওয়া সম্ভব? মেডিকেল পাঁচশত টাকা, বদলি এবং অবসর ভাতা নাই, এটা কি শিক্ষার মানোন্নয়নে যথাযথ ভূমিকা রাখবে? দশ টাকার লোক দিয়ে একহাজার টাকার কাজ করানোর চেষ্টা করা নিশ্চয় বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কারণ, উপযুক্ত সম্মান এবং সম্মানী ছাড়া উপযুক্ত কাজ প্রত্যাশা করা কি অনুচিত কাজ নহে? 

নিয়োগ প্রক্রিয়ার জটিলতাও শিক্ষকদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। আজও নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থানীয় কমিটির হাতে। এতে কতটা স্বচ্ছতা বজায় থাকছে। সহকারি শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া আরো জটিল করে তুলেছে। কি আজব এই প্রক্রিয়া! একজন সহকারি শিক্ষক নির্দিষ্ট অভিজ্ঞতা অর্জনের পর সম্পূর্ণ নুতন প্রক্রিয়ায় সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে আবেদন করে নিয়োগের যোগ্য বিবেচিত হতে পারেন। আবার, সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে তিন বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষক সম্পূর্ণ নতুন প্রক্রিয়ায় প্রধানশিক্ষক পদে আবেদনের যোগ্য বিবেচিত হবেন। যে নিয়োগ প্রক্রিয়া নির্ভর করছে স্থানীয় কমিটির হাতে। এই প্রক্রিয়াকে পদোন্নতি বলা নিশ্চিত বুদ্ধিহীনতা এবং অনভিজ্ঞতার পরিচয়ই বহন করে। কারণ, পদোন্নতি কখনো নিয়োগ হতে পারে না আর তা বলাটাও বোকামি। যদি নিয়োগের মধ্যে দিয়েই প্রধানশিক্ষক হতে হয় কেন তবে এত ঝামেলা?  

আমি মনে করি, এ প্রক্রিয়া থেকে বের হওয়ার সন্তোষজনক দুটি উপায় আছে। ১. নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অভিজ্ঞ সকল সহকারি শিক্ষকদের জন্য পদটি খোলা রাখতে হবে। ২. সরকারি চাকুরির নিয়ম অনুসরণ করে সহকারি শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি প্রদান করতে হবে। সন্তোষজনক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষকদের মধ্যে সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে। সেই সাথে প্রতিটি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে হবে।

আমরা সবাই জানি, কাউকে সংকটে রেখে তার নিকট থেকে ভালো কিছু আশা করা ঠিক না। উন্নত বিশ্বের দিকে তাকিয়ে আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সাজাতে না পারলে উন্নত বা মানসম্মত গুণগত শিক্ষা কামনা করাটাও কামনা করা ঠিক হবে না। এজন্য প্রয়োজন উন্নত শিক্ষাব্যবস্থার জন্য উন্নত শিক্ষা কাঠামো প্রয়োজন। শিক্ষাব্যবস্থার শুধু জাতীয়করণ করে নয় শিক্ষকদের সম্মান এবং সম্মানি বৃদ্ধি করে মানসম্মত এবং গুণগত শিক্ষা অর্জন করতে হবে।

প্রাথমিকভাবে সকল শিক্ষাব্যবস্থাকে জাতীয়করণ করে শিক্ষাব্যবস্থাকে একধাপ এগিয়ে নিতে হবে।  কারণ, পিপীলিকাও নিজ স্বার্থে জীবনচালনা করে। আকর্ষণীয় বস্তু সকলে প্রত্যাশা করে। শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষানুরাগী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেই শিক্ষকতা পেশাকে আকর্ষণীয় করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। 

লেখক: প্রধান সমন্বয়ক,
বাংলাদেশ মাধ্যমিক সহকারি শিক্ষক সমিতি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫