Logo
×

Follow Us

চিঠি

প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতির পথ রুদ্ধ হবে কেন?

Icon

অলোক আচার্য

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬:০৯

প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতির পথ রুদ্ধ হবে কেন?

ফাইল ছবি

যেকোনো চাকরিতেই পদোন্নতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটি যুক্তিযুক্ত বেতন কাঠামোর পাশাপাশি পদোন্নতির সুযোগ সেই চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করে। শিক্ষকতার ক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষা শিক্ষাস্তরের প্রাথমিক স্তর এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

এই স্তরে মেধাবী থেকেও মেধাবীদের প্রবেশ করা দরকার। এখন ছেলে মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই যোগ্যতা স্নাতক  করা হয়েছে। সুতরাং একদল মেধাবী উচ্চশিক্ষিত প্রাথমিক শিক্ষায় আসবে যারা মন থেকে প্রাথমিক শিক্ষাকে কিছু দিতে চাইবে। কিন্তু এসবের সাথে সাথে প্রাথমিক শিক্ষায় মেধাবী শিক্ষকদের পদোন্নতির সুযোগ প্রশস্ত করলে আরও অধিক মেধা সম্পন্নরা এখানে আবেদন করবে। প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষার্থীদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির সাথে সাথে শিক্ষকদের কয়েকটি বিষয়ও গুরুত্ব দিতে হবে।

কারণ প্রাথমিক শিক্ষাসহ শিক্ষার সব স্তরে মেধাবী এবং আন্তরিক মানুষ প্রয়োজন যারা কেবল শিক্ষকতাকেই নিজের জীবনের ব্রত হিসেবে দেখে থাকেন। এমন এক সময় আসবে যখন একজন তার মেধাকে সরকারি অন্য উচ্চ শ্রেণির চাকরিতে না দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষায় নিয়োজিত হওয়ার জন্য নিজেকে তৈরি করবে। এটা হয়তো অনেক দূরের কল্পনা। কিন্তু শিক্ষার জন্য উত্তম। একজন সহকারি শিক্ষক হিসেবে যখন কেউ যোগদান করেন তখন তাদের ভেতর পদোন্নতি পেয়ে প্রধান শিক্ষক বা সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে বা শিক্ষা কর্মকর্তা বা তার থেকেও বড় পদে চাকুরির আশা করতে পারে। কারণ অন্য সরকারি চাকরিতে পদোন্নতির সুযোগ যতটা রয়েছে এখানে ততটা নেই। সহকারি শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষকে উন্নীত হলেও সেই প্রক্রিয়াও খুব দীর্ঘ।

কিন্তু শিক্ষা কর্মকর্তা নিয়োগে প্রস্তাবিত যে নিয়োগ বিধি চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে তা সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতির পথ রুদ্ধ হওয়া আশঙ্কা রয়েছে।

অলোক আচার্য

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক পদোন্নতি পেয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পর্যন্ত হতে পারতেন। কিন্তু কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ বিধি ১৯৮৫ তে শিক্ষকদের পদোন্নতির পথ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে পিএসসির নিয়োগ বিধি ১৯৯৪ জারি হলে সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকরা বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে ইউএইও বা উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে আবেদন করতে পারতেন। আর ২০০৩ সালে সরকারি গেজেটেও উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা পদে বিভাগীয় প্রার্থী বলতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি ও প্রধান শিক্ষকদের কথা বলা ছিল এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পদে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক ও সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বোঝানো হয়েছে।

কিন্তু ২০১৯ সালে নিয়োগবিধিতে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে সহকারী শিক্ষকদের আবেদনের পথ রুদ্ধ করা হয়েছে। এমনটি সত্যিই প্রাথমিকের মেধাবী শিক্ষকদের জন্য হতাশার। এখন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারের পদে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে শুধু প্রধান শিক্ষকদের বোঝানো হয়েছে এবং প্রধান শিক্ষক হিসেবে ন্যূনতম ৩ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। বিভাগীয় প্রার্থীদের জন্য ৮০ শতাংশ পদ সংরক্ষিত থাকবে এবং ২০ শতাংশ পদ উন্মুক্ত প্রার্থীদের মধ্য থেকে পূরণ করা হবে। বিভাগীয় প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বয়স ৪৫ বছর পর্যন্ত শিথিলযোগ্য।

এমন একটি সুযোগ থাকা খুব প্রয়োজন যেখানে মেধাবী শিক্ষকরা চাকুরি শুরু থেকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতির মাধ্যমে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বা ইনষ্ট্রাকটর পর্যন্ত যেতে পারে। এর ফরে প্রাথমিক শিক্ষাই সমৃদ্ধ হবে না বরং যারা সহকারী শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘদিন কর্মরত আছেন তাদের মাঝেও নিজের মেধা প্রকাশের সুযোগ পাবেন। অন্যথায় সারা জীবন সহকারি শিক্ষক হয়েই যদি অধিকাংশ শিক্ষক অবসরে যান তাহলে আবেদনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও মেধাবীদের আকৃষ্ট করা কঠিন হবে।

সবচেয়ে বড় কথা সহকারি শিক্ষকরা বঞ্চনার শিকার হবে। এই স্তর থেকে শিশু যেভাবে গড়ে উঠবে তার ভবিষ্যতেও তার প্রভাব থাকবে। তার লেখাপড়া থেকে আচরণিক বৈশিষ্ট্য সবই এ স্তর থেকে গড়ে ওঠে। এ স্তরের পরিবেশ এবং শিক্ষকদের দক্ষতা, আন্তরিকতা অত্যন্ত প্রয়োজন। প্রতিনিয়তই প্রাথমিক স্তরকে উন্নয়নের জন্য, কাঙ্খিত ফল লাভের জন্য,শিক্ষার ভিত্তি শক্তিশালী করতে নতুন নতুন সিদ্ধান্ত প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সময়ের সাথে সাথেই সরকার প্রাথমিক শিক্ষাকে আকর্ষণীয় এবং গ্রহণযোগ্য করার উদ্যেগ গ্রহণ করেছে।

সহকারি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার পর তার মেধা এবং দক্ষতা, কাজের ক্ষেত্রে যথেষ্ট উৎসাহ এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পার হলেও সেই পদ থেকে পদন্নোতি না হয় তখন তার মনে হতাশা বিরাজ করে। আর সেটাই স্বাভাবিক। প্রত্যেকেই তার কাজের মূল্যায়ন চায়। সেই মূল্যায়ন যে কেবল বেতন বৃদ্ধির ভেতরেই সিমাবদ্ধ থাকে এমন ধারণা ঠিক নয়। চাকরিতে পদন্নোতি থাকা তাই একান্ত আবশ্যক।

প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়নে এটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। একজন সহকারি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার পর নির্দিষ্ট সময় শেষে সহকারি প্রধান শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক,সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হওয়ার সুযোগ থাকে তাহলে শিক্ষকদের মধ্যে আগ্রহ সঞ্চার হবে। তারা তাদের দায়িত্ব পালনে সচেতন হবে। কারণ এই পদন্নোতির মাপকাঠি যদি শিক্ষকদের মেধা,দক্ষতা ইত্যাদি বিবেচনায় হয় তাহলে তারা তাদের সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে কাজ করবে। তারা তাদের কাজে অসন্তুষ্টি থাকবে না এবং সর্বোচ্চ সামর্থ্য কাজে লাগিয়ে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা দেয়ার কাজটি করে যাবে।

কিন্তু নতুন নিয়োগ বিধি কার্যকর হলে তা সহকারী শিক্ষকদের স্বপ্ন ভঙ্গ করবে। সেইসাথে তা প্রাথমিক শিক্ষার মানেও প্রভাব ফেলতে পারে। বিপরীতে দক্ষতা যাচাইপূর্বক দক্ষ ও যোগ্য সহকারী শিক্ষকদের কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি দিলে তা প্রাথমিক শিক্ষাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। প্রচুর মেধাবীরা শিক্ষকতায় আকৃষ্ট হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫