Logo
×

Follow Us

চিঠি

কিশোর অপরাধ থামাতে পদক্ষেপ নেই কেন?

Icon

সিফাত রাব্বানী

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২২, ১৪:৩১

কিশোর অপরাধ থামাতে পদক্ষেপ নেই কেন?

কিশোর গ্যাংয়ের হটস্পট এখন নারায়ণগঞ্জ। ছবি: সংগৃহীত

অপরাধের নানা শাখা বাংলাদেশে বেড়েই চলেছে। নিয়ন্ত্রণ নেই কোনো অপরাধের, তাই থেমে নেই অপরাধচক্রের কলাকৌশলও। কিশোর অপরাধ তারই মধ্যে একটি। দিনে দিনে বাংলাদেশে কিশোর অপরাধ বেড়েই চলছে।

ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা থেকে সারা দেশে বিস্তার করেছে কিশোর অপরাধ। এ নিয়ে নানা আলোচনা হলেও নেই কোনো প্রতিকার।

আজ থেকে ৫-৭ বছর আগেও বাংলাদেশের চিত্র এমন ছিল না। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভ থেকে সরে এসে এখন নানা অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে যাচ্ছে কিশোররা। বেশির ভাগই ছাড় পেয়ে যাচ্ছে রাজনৈতিক শক্তি বা প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে। অভিভাবকরাও সন্তানরা কোথায় যাচ্ছে, কী করছে ন্যূনতম খোঁজ নিচ্ছেন না। 

মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকে পড়া এই শিক্ষার্থীরা ব্যবহৃত হচ্ছে নানা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে। একজন কিশোরের অপরাধের দায় ভোগ করতে হচ্ছে পুরো পরিবারকে। 

আবার কিশোর অপরাধ আইন ও ধারা অনুযায়ী বড় অন্যায় করেও পার পেয়ে যাচ্ছে অনেকে। ছাড়া পেয়ে আবার যুক্ত হচ্ছে নতুন অপরাধে। কিশোর অপরাধের শেষ দেখবে কোথায় বাংলাদেশ? নাকি মহামারি রূপে ছড়িয়ে যাবে সারা দেশে?

সংবাদমাধ্যমে যাদেরই কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, দেখা যায় তারা কেউ না কেউ মাদক চোরাচালান, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার ও বহনের সাথে জড়িত। 

গঠনমূলক পারিবারিক পরিবেশ থেকে উঠে আসা কিশোররাও নানা অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে। সন্তানের খোঁজ খবর প্রথমত পরিবারকেই নিতে হয়। কিন্তু প্রযুক্তির যুগে অনেক অভিভাবক তাল মিলিয়ে চলতে না পারায় অনেক সময় সন্তানের খোঁজ খবর নিতে পারছেন না।

টিকটক আসক্তি থেকে গ্যাং তৈরি করা, অনলাইন গেম থেকে অস্ত্র চালনায় অনুপ্রাণিত হয়ে জঙ্গি গোষ্ঠীতে নাম লেখাচ্ছে অনেক মেধাবী সম্ভাবনাময় তরুণ। ক্রাইম পেট্রোল দেখে হত্যাকাণ্ড শিখছে। তাহলে কেন এই ধরনের অনলাইন গেমস, টিভি সিরিজ নির্মাণ বন্ধ করা যাচ্ছে না। সম্প্রতি চট্টগ্রামে শিশু আলিনা ইসলাম আয়াতকে কতটা নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে আমরা গণমাধ্যমে দেখেছি।

কিশোর গ্যাংয়ের হটস্পট এখন নারায়ণগঞ্জ। পুলিশ তালিকাও করেছে বিপথগামী তরুণদের। প্রতিটি শান্তিকামী নাগরিকের প্রত্যাশা প্রশাসন কিশোর অপরাধ দমন করলে সফল হবে কিন্তু এর বাস্তব চিত্র ভিন্ন। কমিউনিটি পুলিশিং, বিট পুলিশিং সিস্টেম কোনো কিছুই কাজে আসছে না। নিয়মিতই প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিশোর অপরাধ চক্র সক্রিয় হয়ে উঠছে। কেন প্রশাসন একে থামাতে পারছে না?

এ ছাড়াও বাংলাদেশের শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী ১৮ বছর বা এর কম বয়সী যেসব শিশু কিশোরের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদেরকে জেলে না নিয়ে উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠাতে হবে যেন তারা সেখান থেকে সংশোধিত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। এখানেও উল্টো চিত্র। অব্যবস্থাপনার জন্য নিরাময় কেন্দ্রেও সংঘর্ষ ঘটে থাকে। প্রকৃত পক্ষেই এই আইন কতটুকু যুক্তিসংগত সাম্প্রতিক সময়ে?

আমি মনে করি কিশোর অপরাধ নীতিমালা আরও কঠোর করা প্রয়োজন। যেখানে একজন কিশোর খুনের মতো ঘটনা ঘটাতে পারে সেখানে কীভাবে তাকে নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে সংশোধন করার চিন্তা আসে?

সাধারণ মানুষের কাছে এখন আতঙ্কের নাম কিশোর অপরাধ। শহরে বা গ্রামে কিশোররা শিক্ষক, বয়স্ক কাউকেই তোয়াক্কা করে না। তামাকদ্রব্যের সহজপ্রাপ্যতা কিশোরদের অপরাধ জগতে শুরুটা করে দিচ্ছে। স্থানীয় রাজনীতি, পদ পদবির জন্য কিশোররা রাজনৈতিক নেতাদের অনুসারী হয়ে থাকে। এলাকাভিত্তিক দ্বন্দ্বে কিশোরদের ব্যবহার করা হচ্ছে।

কিশোর অপরাধ দমনে তাই পরিবার, সমাজ, স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারকে নতুন করে ভাবতে হবে। প্রশাসনের অবহেলাই দিনে দিনে বাড়াচ্ছে কিশোর অপরাধের সংখ্যা। এখনই যদি কিশোর অপরাধ থামানো না যায়, সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুরা ভবিষ্যতে কী শিখবে?

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫