Logo
×

Follow Us

চিঠি

শিশু দিবসের ভাবনায়

বৈশ্বিক উন্নয়নে শিশুরাই হোক অবদানকারী

Icon

মাহাথীর ওসমান মাহিল

প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৩, ১১:৫০

বৈশ্বিক উন্নয়নে শিশুরাই হোক অবদানকারী

শিশুরা একটি দেশের ভবিষ্যৎ। ছবি: সংগৃহীত

মানবজাতির মধ্যে সবচেয়ে অসহায় হচ্ছে শিশুরা। বড় হয়ে ওঠার জন্য বড়দের উপর শিশুদের নির্ভর করতেই হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, দুনিয়ায় যেকোনো দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশুরা। সে দুর্যোগ প্রাকৃতিক কিংবা কৃত্রিম, যে রকমই হোক না কেন। তার ওপর রয়েছে অনেক ক্ষেত্রে শিশুদের প্রতি বড়দের দায়িত্বশীলতার ঘাটতি, সঠিক মনোযোগ এবং সঠিক পরিচর্যার অভাব। 

শিশুরা একটি দেশের ভবিষ্যৎ। তারাই আগামী বিশ্বের দায়িত্বভার গ্রহণ করবে। তাই তাদের সকল অধিকার নিশ্চিত করা অপরিহার্য। শিশু অধিকার হলো একাধিক মৌলিক অধিকারের সমষ্টি যা প্রতিটি শিশুর মঙ্গল, উন্নয়ন এবং মর্যাদা রক্ষা করে। এই অধিকারগুলো জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সনদের অন্তর্ভুক্ত। সুরক্ষা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিশুদের জন্য একটি উপযুক্ত লালনপালনের পরিবেশের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়। এই অধিকারগুলো তাদের মতামত প্রকাশ করার, শোষণ থেকে মুক্ত হওয়ার এবং তাদের শারীরিক, মানসিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বৃদ্ধির সুবিধা দেয় এমন সুযোগগুলোতে অনুমতি পাওয়ার অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়। শিশু অধিকার সমুন্নত রাখা একটি ন্যায্য ও ন্যায়সঙ্গত সমাজ গঠনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে শিশুরা প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠার সাথে সাথে তাদের সম্প্রদায়ে উন্নতি করতে পারে এবং ইতিবাচকভাবে অবদান রাখতে পারে। 

বর্তমানের শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাই তাদের মৌলিক, সঠিক ও প্রাপ্য অধিকারসমূহ নিশ্চিত করতে হবে। এই শিশুদের হাত ধরে আগামী বিশ্বের উন্নয়ন সাধিত হবে। তাই তাদের সঠিক গঠন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সকল অধিকার নিশ্চিত করা দরকার। এখোনো বিশ্বের অনেক দেশে শিশুদের অধিকার সঠিকভাবে আদায় করা হয় না। যার ফলে সে দেশের উন্নয়ন সাধিত হয় না। 

বৈশ্বিক উন্নয়নে শিশুশ্রম একটি বিরাট অন্তরায়। শিশুশ্রম, শিশুদের অধিকার আদায়ের কার্যক্রমকে বিঘ্নিত করে। আমরা জানি ১৮ বছরের নিচে সকলেই শিশু। এই সময় হচ্ছে- শিশুদের শিক্ষা গ্রহণ, গঠন- বৃদ্ধি, সামাজিক ও বৈশ্বিক পরিবেশের ইত্যাদির সাথে পরিচিত হওয়ার সময়। যদি এই সময় শিশুদেরকে কাজে প্রেরণ করা হয় তবে তা শিশুর মৌলিক অধিকারের বিরুদ্ধে এবং শিশু অধিকার লঙ্ঘন করা হয়। এর ফলে শিশুর মন মানসিকতা নষ্ট হয় এবং তারা সামাজিক পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে পারে না। শিশুশ্রম শিশুর স্বাভাবিক জীবনকে বিঘ্নিত করে। তাই শিশুশ্রম প্রতিরোধ করা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘ ১৯৮৯ সালে আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সনদে শিশুদের সকল অধিকার আদায় বাধ্যতামূলক হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং শিশুশ্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ ২০০৬- শিশু আইনে ১৪ বছরের নিচের শিশুদেরকে কাজে নিয়োগ নিষিদ্ধ করেছে। শিশু অধিকার আদায় কার্যক্রমের আরও একটি বড় অন্তরায় হচ্ছে বাল্যবিবাহ। বাল্যবিবাহ একটি বড় সামাজিক সমস্যা। এই বাল্যবিবাহ ছেলে-মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রে হতে পারে। এর ফলে একজন মেয়ে শিশু তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। ১৮ বছর আগে বিবাহ হওয়ার কারণে মেয়ে শিশু স্বাস্থ্যহীনতায় ভোগে, শিশুটি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। এক কথায় তিনি তার স্বাভাবিক জীবনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। ইতিমধ্যে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ এই বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ করেছে। তবুও বাল্যবিবাহের হার ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। তাই এই সমস্যা প্রতিরোধে সরকার, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসমূহের কার্যক্রমের পাশাপাশি শিশুর পরিবারকেও সচেতন হতে হবে। 

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। জাতীয় ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সাফল্য অর্জন করছে। বর্তমান বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশের মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন তবুও আগামীতে বাংলাদেশের সঠিক ও সর্বোচ্চ উন্নয়ন নিশ্চিত করতে শিশুদের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে হবে, তাদের শিক্ষার মান উন্নত করতে হবে যাতে তারা আগামীতে শিক্ষিত ও উন্নত বিশ্ব গড়ে তুলতে পারে। স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল তাই তাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টিকর ও পর্যাপ্ত খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে, তাদের সামাজিক ও নিরাপদ জীবনযাপনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে, শিশুশ্রম প্রতিরোধ করতে হবে ও বাল্যবিবাহ রোধ করতে হবে। এইসকল কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে আগামী বিশ্বের উন্নয়নে শিশুরা অবদান রাখতে পারবে। এক্ষেত্রে আমরা ইউনিসেফ বাংলাদেশ কতৃক পরিচালিত মীনা কার্টুনের মীনা ও রাজু চরিত্রকে অনুসরণ করতে পারি। তারা শিশু হয়েও যেভাবে তাদের সমবয়সী শিশুদের প্রতি সহিংসতা, বাল্যবিবাহ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল, আমাদেরকেও সেভাবে তাদেরকে অনুসরণ করে শিশুদের প্রতি সংঘটিত অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে ও তাদের মৌলিক অধিকারসমূহ সঠিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে তাহলেই একটি শিশু অধিকার বৈষম্যহীন বিশ্ব গড়ে তোলা সম্ভব। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫