ইমন হাওলাদার
প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:২৫ পিএম
আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:২৯ পিএম
প্রায় দুই শতাব্দীপ্রাচীন ইতিহাস-ঐতিহ্যের বিদ্যাপীঠ ঢাকা কলেজ। ১৮৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বর্তমানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায়। এত প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান হয়েও রয়ে গেছে হাজারো ঘাটতি। যা আজ পর্যন্ত কোনোকিছুই পূর্নাঙ্গভাবে সংস্কার হয়নি বা কেউ করার প্রয়োজন মনে করেনি।
ঢাকা কলেজ বর্তমানে নামে চলে। কাজের কাজ কিছুই না। ঢাকা কলেজের উন্নতি তখনি সম্ভব যদি এটাকে মনে প্রাণে ধারণ করা যায়। আমরা ঢাকা কলেজকে অবহেলা করে। আজ ঠেলে দিয়েছি ধ্বংসের মুখে। যেখানে একসময় মানুষ ভর্তি হবার জন্য কলেজ পছন্দের তালিকায় প্রথম সারিতে রাখত। আজ যারা ভর্তি হয়েছে তারাও কপাল চাপড়াচ্ছে। আর বলছে এখানে ভর্তি হওয়াটা ছিল জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল।
ঢাকা কলেজপড়ুয়া অধিকাংশ শিক্ষার্থী তাদের মস্তিষ্কে বিশ্ববিদ্যালয় শব্দটি ধারণ করে বসে থাকে। তাই তো পড়ালেখা বাদ দিয়ে টিএসসির আশেপাশে ঘুরে। আমরা এখন যারা ঢাকা কলেজে অধ্যয়নরত আছি, তাদের অধিকাংশ ছাত্রই ঢাকা কলেজের বিরুদ্ধে। তাদের অস্থিমজ্জায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে।
আর ঘুরবেই না কেন? যেরকম কলেজ প্রশাসনের দুর্বলতা। ঢাকা কলেজের বিরাজমান বর্তমান কলেজ প্রশাসন হচ্ছে কাপড় পড়েও যেমন মানুষ উলঙ্গ থাকে তেমন কলেজ প্রশাসন। ঢাকা কলেজের প্রশাসনের ভিত্তি পচে গেছে। একে সমূলে উপড়ে ফেলে নতুন ভাবে সবকিছু শুরু করতে হবে।।
ইনশাআল্লাহ, একদিন ঢাকা কলেজ হবে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড, ক্যামব্রিজ-এর মত নামের গুণে। সে জন্য, প্রথমেই সিট সংখ্যা কমিয়ে আনতে হবে। ছাত্রদের ক্লাসে যাওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে। পড়ালেখায় আপোষ নেই, আইন কঠোর করুন। সেমিস্টার সিস্টেম চালু করতে হবে। দক্ষ প্রভাষক নিয়োগ দিতে হবে। ক্লাস রুমের সংকট দূর করার জন্য ভবন নির্মাণ করা খুবই দরকার। ভর্তি পরীক্ষায় নেগেটিভ মার্কিং রাখতে হবে। শিক্ষকদের শিক্ষার্থী ও কলেজ বান্ধব মনোভাব তৈরি করার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নিন।
হল গুলোর দিকে নজর দিন। হল প্রশাসন এর কথা আর কী বলবো! সবাই তো…আলহামদুলিল্লাহ! তারা জানেই না তাদের হলে কয়জন শিক্ষার্থী থাকে। কে কোন রুমে থাকে। যে থাকে সে আদৌ ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী কি না!
ভবন সংস্কারেও নজর দিতে হবে। ভবন গুলো ক্রমেই ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। ক্যান্টিন ও হলের ডাইনিং এর খাবার মান বৃদ্ধিসহ মূল্য কমিয়ে আনতে হবে। ছাত্রবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তুলুন। বিভিন্ন বিভাগের সাথে টুর্নামেন্ট সহ প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করতে হবে। কলেজের সামাজিক সংগঠনগুলোকে নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করার সুযোগ তৈরি করে দিন। ছাত্র সংসদ চালু করতে হবে। পর্যাপ্ত বাসের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে করে শিক্ষার্থীদের আসতে সমস্যা না হয়। বিভাগের ওয়াশরুমগুলো যত্নের সাথে পরিষ্কার রাখতে হবে।
শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করুন। গবেষণার মাধ্যম রাখুন। অনার্স, মাস্টার্স গবেষণার জায়গা, এটা মুখ গুজে থাকা না বইয়ের পাতায়। ক্লাসে বই দেখে দেখে রিডিং পড়ানো বন্ধ করুন। অধ্যক্ষ নিয়োগ বাদ দিয়ে চ্যান্সেলর প্রক্রিয়া চালু করুন। ল্যাব গড়ে তুলুন। বছরে অন্তত একবার বিভিন্ন স্পটে ভ্রমণের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
আয়তনে বড় ধরনের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি তৈরি করুন। ঢাকা কলেজের লাইব্রেরি তো নয়, যেন খুপড়ি ঘর! ছাত্ররা কত দূর থেকে এসে দাঁড়িয়ে থাকে, পড়তে জায়গা পায় না। বিভাগের সেমিনারে বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি করুন। ছেলেরা যাতে বই পড়তে আগ্রহী হয়ে ওঠে, তেমন পরিবেশ তৈরি করুন।
ছাত্ররা কেন ক্লাসে যাবে আর পড়ালেখা করবে? ঢাকা কলেজে কী আদৌ এমন কিছু কলেজ প্রশাসন তৈরি করতে পেরেছে, যা ছেলেদের ক্লাসে যেত আগ্রহী করে তোলে? তারা থাকে তাদের চাটুকারিতা নিয়ে আর বেতন বাড়ানো, প্রমোশন নিয়ে। শিক্ষার্থীবান্ধব স্যার ঢাকা কলেজে নেই। তারা তো তাদের অহংকারে নড়তে পারে না।
সবাই খালি ফাঁকি দেওয়ার ধান্দা। পরীক্ষার হলে গিয়ে গার্ড না দিয়ে উচ্চ শব্দে করে পারিবারিক আলোচনা! যা ছাত্রদের লেখার ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করে। হলফ করে বলতে পারি এমন অনেক বিভাগ আছে যেখানে গিয়ে তাদেরকে প্রতি সেশনের ৫ জন ফার্স্টক্লাস ধারি ছাত্রের নাম বা পরিচয় জানতে চাইলে তারা বলতে অক্ষম হবেন। যেখানে সাত কলেজে ফার্স্ট ক্লাস মানে সোনার হরিণ পাওয়ার মতো অবস্থা। এই হচ্ছে ঢাকা কলেজের ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক।
মাঝে মধ্যে অডিটরিয়ামে ছাত্রদের ডাকতে হবে। শিক্ষক ও কলেজ থেকে তাদের চাহিদা সম্পর্কে জানতে হবে। তাদের সমস্যাগুলো শুনতে হবে। সেই মাফিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
পরীক্ষার আগে শর্ট সিলেবাস দেওয়ার যে বিষয়টি, তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। এতে করে শিক্ষার্থীরা পূর্ণাঙ্গ সিলেবাস অধ্যায়ন করতে অনাগ্রহী হয়ে পড়ছে। যার কারণে বই না কিনে সবাই ঝুঁকছে গাইড বইয়ের দিকে। যা জাতিকে শিক্ষার দিক থেকে পঙ্গু করে দিবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এর অধিভুক্ত নামক শকুনি ছায়া থেকে পরিত্রাণ দিয়ে স্বতন্ত্রীকরণ করা হোক রাজধানীর স্বনামধন্য সাতটি কলেজকে। এদের আছে নিজস্ব ঐতিহ্য। অধিভুক্ত না করে কলেজ প্রশাসনের ভিত্তি মজবুত করুন। কলেজগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু করুন। এই কলেজগুলো অনেক বেশি ভালো করবে। পরিকল্পনা মাফিক কাজ করার জন্য তৎপর হন।
ইমন হাওলাদার
ইতিহাস বিভাগ (২০২০-২১)
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh