দেশ সংস্কারের আগে চাই মস্তিষ্কের সংস্কার

আপনি যদি চলমান ঘটনাগুলো অবলোকন করেন তাহলে কিছু বিষয় আপনার দৃষ্টিগোচর হবে। তা হলো,  শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আগমনের পর থেকেই বিভিন্ন সংস্কারের আওয়াজ তোলা হয় বেশ উচ্চস্বরে। মনে হয় যে যার মতো করে ফায়দা লুটতে চাইছে। এই সুযোগ যেন আর পাওয়া যাবে না।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতায় না থেকেও মানুষকে নিয়ে ভেবেছেন। আর এখন সুযোগ এসেছে সব না হলেও কিছু সংস্কার নিজ হাতে করার। তিনি অবশ্যই তার শেষ বয়সে এসে দেশের জন্য সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করবেন এটিই আমাদের আশা। একজন নতুন কর্মী যখন অফিসের কাজে যুক্ত হয় সেখানেও তো অফিস, অফিসের লোকজন, অফিসে তাকে দেওয়া নির্দিষ্ট কাজ সম্পর্কে অবগত হতে তার কিছুটা সময় লাগে। আর সেখানে তো দেশ! 

স্বাধীনতার ৫৩ বছর আর আওয়ামী লীগের শেষ ১৭ বছর কোথায় ছিল আপনাদের এই দাবি দাওয়া? যৌক্তিক হলে অবশ্যই সরকারি মহল তা মানতে বাধ্য। কিন্তু তাই বলে একটা ভঙ্গুর সরকারি শাসন ব্যবস্থায় আপনারা তাদেরকে দেশ পুনর্গঠনে সাহায্য না করে উল্টো তাদের কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটানো হচ্ছে।

একটি দেশের উন্নয়নের পুরোটাই নির্ভর করে সেই দেশের জনগণের ওপর। জনগণ তার নিজ অধিকার, সম্পদ, মালিকানা, দেশের জন্য তার দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে যত বেশি সচেতন সেই দেশ তত দ্রুত উন্নয়ন লাভ করবে। সে কারণে সব কিছু সংস্কারের আগে চাই মানুষের মস্তিষ্কের সংস্কার। গ্রাম বাংলায়  একটি কথা আছে, 'হুজুগে বাঙালি'। এটি থেকে আমাদের অবিলম্বে বেরিয়ে আসতে হবে।

মানুষের মস্তিষ্কের উন্নয়ন মানুষকে সভ্য মানুষ হতে শেখায়। আমরা বাঙালিরা নিজেদের মেধা খাটাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না। অন্যের উস্কানিমূলক কথাতে কোকিলের মতো গলা মেলাতে ভালোবাসি। ভালোমন্দের বিচার করার ক্ষমতা আমাদের কম। আমাদের মধ্যে গোঁড়ামি ভাব বেশি। আমার দলের লোক, পছন্দের লোক যে অবৈধ কিছু করতে পারে এটি আমাদের মাথায় ধরে না। 

যে জাতি নিজ দেশের সরকারি সম্পদকে নিজেদের সম্পদ মনে করতে পারে না— তারা পিছিয়ে থাকে কয়েক শতাব্দী। আসুন, সরকারি সম্পদের ক্ষতি সাধন বন্ধ করি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করার সুযোগ করে দেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলতে আমরা যেটি বুঝি সেটি হচ্ছে একটি সরকার ব্যবস্থা যাকে কেন্দ্র করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।

দল-বেদলের মধ্যে চলছে বিভিন্ন গুঞ্জন। কিন্তু এতে করে কী আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন লাভ করতে পারি? দীর্ঘকাল ধরে চলমান অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা হাজারো কালো অধ্যায় ভেদ করে আসতে কয়েক মাস কি যথেষ্ট সময়? একটি সুষ্ঠু নির্বাচন পেতে ও দিতে আমাদের উচিৎ সবাই একযোগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সাহায্য করা। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনই পারে দেশের জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করে দেশের সেবায় নিয়োজিত করতে।

তাই আমাদের অধৈর্য হলে চলবে না। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাড়াহুড়া করা দেশটিকে ঠেলে দিতে পারে আরেকটি ভয়ানক অধ্যায়ে। যেখানে সবাই শুনবে মৃত্যুপুরীর গল্প।

তাই আসুন এখনো সময় আছে নিজের, পরিবার ও দেশের ভালোটা বুঝতে শিখি। নদীর স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়েন না। সত্য কে সত্য আর মিথ্যাকে মিথ্যা বলার সাহস রাখুন। কোনো কিছুর প্রতি গোঁড়ামি ভাব নিয়ে বসে থাকবেন না। দেশটা আপনার, আমার, আমাদের। দেশটাকে পূর্ণাঙ্গভাবে আমাদের সাজাতে হবে। দলমতের বাইরে সাধারণ জনগণ হয়ে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাই সবাইকে।

ইমন হাওলাদার 
ইতিহাস বিভাগ (২০২০-২১)
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh