বিদেশে এসেছি আমাদের দেশে কর্মসংস্থানের অভাব বলে। দেশ ছেড়ে যখন প্রবাসে একা একটি মানুষ কাজ করেন, তখন তার মনটা কিন্তু পড়ে থাকে দেশের মাটিতেই। মনে পড়ে মা-বাবার কথা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানের কথা। তখন তার কাজ করতে ইচ্ছা হয় না। ইচ্ছা হয় সবকিছু ছেড়ে দিয়ে পুনরায় দেশে চলে আসতে।
কিন্তু সময় ও পরিস্থিতি তা করতে দেয় না। কেননা বিদেশ থেকে দেশে এলে আপন মানুষগুলো অর্থকষ্টে ভুগবে। তাই শত যন্ত্রণার পরও প্রবাসে থাকি যেন প্রিয় মানুষগুলো একটু স্বস্তিতে, শান্তিতে থাকে, যেন দেশে ফিরে মানুষগুলোর হাসিমুখ দেখতে পারি।
আমরা আসলে জানি না, একটি দেশের ছেলে অন্য আরেকটি দেশের মাটিতে কেমন কষ্ট করে আয়-উপার্জন করেন। এই বিষয়গুলো কি আমাদের জানা দরকার নয়? দেশে থেকে একটি মানুষ বুকে কতটা কষ্ট নিয়ে দেশের বাইরে যান তা হয়তো যে মানুষটি যায় তার থেকে ভালো আর কেউ বলতে পারবেন না।
কেননা দেশ থেকে মানুষটি সুস্থ অবস্থায় বিদেশে গেল ঠিকই, কিন্তু দেখা যায় ওই ব্যক্তি বিদেশ থেকে অসুস্থ অবস্থায় ফিরে আসেন। তখন তার কিছু প্রিয় মানুষ ছাড়া বাইরের কারো মধ্যে কষ্টের লেশমাত্র দেখা যায় না। কেননা ওই মানুষটি যে শুধু তার আপন মানুষগুলোর জন্যই কষ্ট করছেন তা কিন্তু নয়। মানুষটি কষ্ট করছেন তার দেশের জন্যও, দেশের মানুষের জন্য, জীবনগুলো বেঁচে থাকার জন্য।
তাহলে আমরা কেন প্রবাসে থাকা মানুষটিকে কোনো মূল্যায়ন করছি না বা সম্মান দেখাচ্ছি না বা শ্রদ্ধাবোধের জায়গাটাও হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের সমাজব্যবস্থা, আমাদের দেশ ও দেশের মানুষ প্রবাসীদের ছোট করে রেখেছে, তার কারণ রাজনৈতিক ইস্যু। এই ইস্যু দ্বারা দেশের প্রত্যেকটা মানুষ বিভক্ত হলেও প্রবাসীরা কিন্তু কখনোই বিভক্ত হওয়ার কথা চিন্তা করেন না। কারণ তারা বোঝেন দেশটা আমার, দেশের মানুষগুলো আমার, দেশের মানুষগুলোর এই সুখ-দুঃখ এগুলোও আমার। তাহলে কেন দেশ থেকে বিভক্ত হতে যাব।
আমরা আসলে টের পাই না বা বুঝতে পারি না, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে প্রবাসীদের ভূমিকা কতটুকু। প্রবাসীরা এখানে কতটুকু দায়িত্ব পালন করছেন বা কী করে যাচ্ছেন। আমাদের বুঝতে একটু কষ্ট হয় যে প্রবাসীরা বিদেশে গেলে কেন দেশে আসেন না বা দেশে আসার কথা চিন্তা করেন না। না করার কারণ তারা দেশে ফিরলে তাদের আপন মানুষগুলোর সুখ থাকবে না। তাদের জন্যই বিদেশে থাকা, দেশে না ফেরা।
আমরা দেখতে পাই দেশের প্রতি প্রবাসীদের যে টান, সে টান দেশের মানুষের নেই। কেননা তারা তাদের কাছে থাকা মাতৃভূমিকে অনুভব করতে পারছে না, যেমনটা পারেন দেশের বাইরে থাকা প্রবাসীরা। দেশের মাটির গন্ধ পর্যন্তও তারা শুকতে পান। কেননা তাদের কাজের মধ্যে থাকে আপন মানুষগুলোর হাসি মুখের জন্য অপেক্ষা এবং ভালো থাকার কথা।
তৌহিদুল ইসলাম রুবেল, সৌদিপ্রবাসী
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : প্রবাসজীবনের কষ্ট চিঠি প্রবাস প্রবাসজীবন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh