Logo
×

Follow Us

চিঠি

মায়া ও ভালোবাসার ঈদ

Icon

নাসরিন সুলতানা

প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২৫, ১৭:২১

মায়া ও ভালোবাসার ঈদ

প্রতীকী ছবি

স্নেহের শিক্ষার্থীরা, আমি তোমাদের হেড ম্যাডাম। আমার স্কুল ছিল কামারপাড়া, পুর্ব শোলনা, আস্তাকাঠী ও টিয়াখালি। তোমরা কে কোথায় আছ আমি জানি না। তাই তোমাদের কাছে খোলা চিঠি দিলাম। 

তোমরা যারা টাকা উপার্জন করো আমার এই চিঠি তাদের উদ্দেশে। প্রতি বছর আমরা ঈদ উপলক্ষে মানুষের বাড়ি ফেরা দেখি। সবার ফেরা হয় না। ফেরার পথে কারও কারও মৃত্যুও হয়। এটি জেনেও সবাই যাত্রা করে। প্রিয় মানুষের কাছে না গেলে ঈদ হয় না। 

ঈদের শাব্দিক অর্থ উদযাপন। কোনো কিছুই একা উদযাপন করা যায় না। যত বেশি মানুষ নিয়ে উদযাপন করা যাবে তত বেশি আনন্দ হবে। সে জন্যই তো বাড়িতে যাওয়া। সেখানে তোমাদের মা-বাবা আছেন। আছেন ভাই, বোন, আত্মীয়, প্রতিবেশী, শিক্ষক, সহপাঠী ও অন্যরা। যারা বিয়ে করেছ তাদের স্ত্রী ও সন্তানও আছে। কার কার জন্য তোমরা ঈদ উপহার কিনেছ? 

ঈদ উপহার পাওয়ার সবচেয়ে বেশি দাবিদার কে? তোমরা হয়ত সন্তানের কথাই বলবে। বলো। এটিই পৃথিবীর নিয়ম। মা-বাবার কথাও ভুলে যেও না। তোমাদের যদি সামর্থ্য থাকে আর তাদেরকে যদি কিছু না দাও তারা কষ্ট পাবেন। এক সময় তোমাদেরকে মানুষ করার জন্য তারা ঈদের কাপড় কিনতে পারেননি। আজ তাদের নতুন কাপড় পরার ইচ্ছে নেই। কিন্তু দিয়ে দেখো, তাদের চোখে তোমার জন্য স্বর্গ নেমে আসবে। তোমাদের চাচা, ফুফু, মামা আর খালার জন্য কিনেছ? না, তাদের সংখ্যা বেশি। আচ্ছা, একটু ভেবে চেখো তো, তোমাদের জীবনে সবার অবদান কি সমান? 

কোভিড উনিশের সময় তোমাদের মুখোমুখি পাঠ বন্ধ ছিল। তুমি অনলাইন পাঠে যুক্ত হতে পারছিলে না। তোমার এক মামা বা খালা তোমাকে একটা স্মার্ট ফোন কিনে দিয়েছিলেন। তোমার বাবার যখন চাকরিটা চলে গিয়েছিল তখন তোমার এক চাচা বা ফুফু তোমার পরীক্ষার ফিটা দিয়েছিলেন। তোমার বড়ো ভাই নিজের পড়া বন্ধ করে চাকরি নিয়েছিলেন শুধু তোমাকে পড়াবেন বলে। একজন শিক্ষক তোমাকে বিনে টাকায় পড়াতেন। এদেরকে অন্যদের সঙ্গে মিশিও না। হয়তো বলবে তোমার বাবা তাদের জন্য করেছিলেন বলে তারা তোমার জন্য করেছেন। এটা বললে সম্পর্ক এখানেই শেষ হয়ে যায়। আর যদি তুমি ঈদ উপলক্ষে তার জন্যও কিছু কেনো তা হলে তোমাকে ভালোবাসার জন্য আর একজন মানুষ থাকবেন। মানুষের ভালোবাসা চাও না? স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছ? বলা যায় না কখন কোথায় ঠেকে যাও। 

একজন অবসরপ্রাপ্ত মানুষও তোমার উপকারে আসতে পারেন। তুমি অনেককে ঈদ উপহার দিচ্ছ অথচ যে মানুষটা তোমাকে কোলেপিঠে করে বড়ো করেছেন তাকে কিছু দিচ্ছ না। যে মানুষটা তোমাকে এক দিন স্কুলে পৌঁছে দিয়েছেন বা স্কুল থেকে বাড়িতে এনে দিয়েছেন তাকেও তোমার মনে রাখা উচিত। উপহারই সব নয়। তার সঙ্গে দেখা করো অথবা একটা ফোন করো। খোঁজ নাও তিনি কেমন আছেন। তাতে তো টাকা লাগে না। 

এখন ইন্টারনেটের যুগ। বিনে টাকায় কথা বলা যায়। তোমার টাকা, উপহার বা ফোন না পেলেও তারা বাঁচবেন। তবুও তারা তোমার অপেক্ষায় আছেন। বয়স্ক মানুষের চোখে একটুতেই পানি এসে যায়। কারো চোখের পানির কারণ হয়ো না। যারা তোমাকে উপহার দিতেন তাদেরকে উপহার দাও। কার সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক আছে, কার সঙ্গে নেই এগুলো চিন্তা করো না। মানুষের দোয়া নাও। দোয়ার চেয়ে বড়ো উপহার আর নেই। যার একটা জামা সুন্দর বললেই তোমাকে দিয়ে দিতেন তাকে ভুলে যেয়ো না। যিনি আজ অবসরে গিয়েছেন তিনি এক দিন তোমাকে ঈদের জামা দিয়েছিলেন, তোমাকে চায়নিজে নিয়ে অনেক কিছু খাইয়েছিলেন। আজ তাকে তোমার আনন্দের অংশ করো। 

কাউকে অবহেলা করো না। যার টাকা আছে তাকে সবাই দেবে, যার টাকা নেই তাকে কেউ দেবে না, এই নিয়ম থেকে বের হও। মানুষ হও। মানুষকে না ভালোবাসলে মানুষ হওয়া যায় না। ভালোবাসা হচ্ছে ভালো রাখার চেষ্টা করা। তুমি যদি কাউকে ভালো রাখার চেষ্টা করো সে তোমার জন্য দোয়া করবে। মায়া আর ভালোবাসায় জড়ানো থাকুক তোমাদের ঈদ। ঈদ মোবারক।

লেখক: প্রধান শিক্ষক, উত্তর কাউনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বরিশাল

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫