
প্রেমের জোয়ারে ভাসে ভালোবাসার সপ্তডিঙা। ছবি: সংগৃহীত
চারদিকে ফাগুনের কলরব। ভালোবাসারা বাধাহীন স্রোতের নদীর মতো বেগবান প্রিয় মানুষটার পানে। কী এক অজানা আকর্ষণে সে ছুটে চলে তার প্রিয় মানুষের কাছে। গাছে গাছে শিমুল-পলাশের লাল আভায় রঞ্জিত প্রেমিকযুগলের অন্তর। প্রেমের জোয়ারে ভাসে ভালোবাসার সপ্তডিঙা।
কখনো কি এমন মনে হয় সেই প্রেমের জোয়ারে ভাটা পড়ে? আগের সেই উচ্ছলতা, পাগলামি, খুনসুটি যেন বিয়ের পিঁড়িতে বসলেই জানালা গলে পালিয়ে যায়। আসলেই কি তাই, অনেকেই বলেন বিয়ের পর নাকি প্রেমের মৃত্যু ঘটে। কথাটি কতটা ঠিক?
প্রেম কী- এক কথায় প্রেম এমন এক অনুভূতি, যা মনের গহিন কোণে এক সুখানুভূতির জন্ম দেয়। কেউ যখন প্রেমে পড়ে তখন সেই মানুষটি সম্পর্কে কল্পনায় সে অনেক কিছু ধারণা করে নেয়। বেশিরভাগ প্রেমই এক ফ্যান্টাসির জগতে বিচরণ করে। সেখানে বাস্তবতার হিসেব খুব কম থাকে। তাই হয়তো বিয়ের পর বাস্তবতায় যখন প্রেমকে ভাগ করে নিতে হয় তখন সেখানে প্রেম যেন তার মোহনীয় রূপ ছেড়ে এক অভ্যস্ততায় পরিণত হয়।
সমস্যাটা হয় তখনই প্রেম যখন তার বৈচিত্র্যময়তার খোলস ছেড়ে এক অভ্যাসের আটপৌরে নিয়মে আটকে যায়। দাম্পত্য তখন যেন এক সামাজিক বন্ধন হয়ে যায়। শুধু ভালোবাসি বলে বিছানায় উষ্ণতা ছড়িয়ে দেওয়াটাই প্রেম নয়। বরং প্রেম আরও গভীর, আরও মায়াময় এক অনুভূতি যা দুটি মানুষকে বেঁধে রাখে এক তীব্র আকর্ষণের মায়াডোরে।
আর আকর্ষণ সম্পর্কের জন্য প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। কোনো কারণে যদি আকর্ষণে খামতি পড়ে, তবে সেটা সম্পর্কে ছন্দপতন ডেকে আনতে পারে। একসময় হয়তো একজন আরেকজনকে চোখে হারাতেন; কিন্তু দাম্পত্যে অভ্যস্ততায় সেই অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ কমে গেছে অনেকটাই। সাংসারিক ব্যস্ততা আর বাস্তবতার চাপে সেই সব পাগলামি আর করা হয় না। জীবন আসলে উৎসবের, উদযাপনের। এই উদযাপনের জন্য অনেক কিছুর প্রয়োজন নেই।
শুধু প্রয়োজন মনের ভেতর প্রেমটিকে জিইয়ে রাখা। বিশেষ বিশেষ দিন নয়, প্রতিদিনই সঙ্গীকে একটু একটু করে সারপ্রাইজ দিন ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশে; পাগলামিতে বুঝিয়ে দিন যে তাকে এখনো সেই আগের মতোই ভালোবাসেন। এখনো প্রেম সেই তরুণ, সবুজ আছে।
মানুষের বয়স বাড়ে, বয়স বাড়ে সম্পর্কেরও, কিন্তু প্রেমের বয়স? প্রেমের বয়স কখনো বাড়ে না; বরং সত্যিকারের প্রেম সবসময়ই চিরসবুজ, চিরনবীন। আর এই নবীন প্রেমকে সারাজীবন ধরে রাখতে হলে সবসময় তিনটি জিনিস মনে রাখতে হবে-
. ভালোবাসা প্রকাশ করুন। সব সময়ই জানান যে তাকে কতটা ভালোবাসেন। অনেকেই ভাবেন ভালো তো বাসিই, এটা এত ঘটা করে বলার বা প্রকাশ করার কী আছে! এটা ভুল ধারণা। প্রেমের বহিঃপ্রকাশ সঙ্গীকে নিরাপত্তাবোধ দেয়, যা সম্পর্কের জন্য জরুরি। আর ভালোবাসা দিলে ভালোবাসা পাবেন।
. পাগলামি ছাড়বেন না, বয়স যতই হোক খুনসুটি, পাগলামি ধরে রাখুন। এগুলো প্রেমে এক নতুন মাত্রা দেয়। প্রেমকে জিইয়ে রাখতে হলে ধরে রাখুন ছোট ছোট মুহূর্তকে, রাঙিয়ে দিন ভালোবাসার রঙে।
. বিশেষ দিনগুলোতে প্রিয়জনকে বিশেষ ট্রিট দিন। সেটা হতে পারে একটি গোলাপ বা সঙ্গীর পছন্দের কোনো স্থানে ভ্যাকেশন ট্রিপ। অথবা নিছকই দুজন মিলে একটু রিকশায় ঘুরে আসা। মোট কথা তাকে এই অনুভূতি দিন যে সে কতটা স্পেশাল।
ভালোবাসা যত্ন চায়, চায় সঠিক পরিচর্যাও। আর এই বিষয়টা কখনোই একতরফা নয়। এজন্য দুজনকেই দুজনের ভালোবাসার পরিচর্যা করতে হবে। তাই সম্পর্কে প্রেম জিইয়ে রাখাটা ভীষণ জরুরি। ভুল হতে পারে, কিন্তু সেটাও ভালোবাসার আলোয় ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে হবে। দুজন যখন দুজনকে বুঝতে, শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি জানাতে এবং নিশ্চিত আশ্রয় হয়ে উঠবেন তখন না চাইতেই প্রেম সেখানে বারোমাসই বসন্তকাল ধরে রাখবে।