Logo
×

Follow Us

লাইফস্টাইল

বয়স বাড়ার সঙ্গে বাড়ে রোগ

Icon

রায়্যিদাল কবির

প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৩, ১১:২৬

বয়স বাড়ার সঙ্গে বাড়ে রোগ

সামান্য কিছুতেই বয়স্ক ব্যক্তিরা অচল হয়ে পড়েন। ছবি: সংগৃহীত

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের শরীরে বাসা বাঁধে নানা ধরনের অসুখ। ফলে সামান্য কিছুতেই বয়স্ক ব্যক্তিরা অচল হয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা না পেলে এক অসুখ থেকে আরেক অসুখ ধরে বসে তাদের।

বয়স ৫০ থেকে ৬০ হলেই এ সমস্যা হতে শুরু করে। তখন অল্পতেই কাহিল হয়ে যেতে পারেন এই বয়সীরা বা এর চেয়ে বেশি বয়সী প্রবীণ ও বৃদ্ধরা। পুরুষের চেয়ে নারীদের সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। এ বয়সে উপনীত হলে শরীরে প্রধান যে সমস্যাটি শুরু হয় তা হলো শরীরের বিভিন্ন জোড়ায় জোড়ায় দীর্ঘ মেয়াদি ব্যথা শুরু হয়। চোখে ছানি পড়তে শুরু করে, হাড়গুলো যেন বেঁকে বসতে চায়। তবে আগেভাগেই কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে পারলে এই অসুখগুলো পুরোপুরি ঠেকাতে না পারলেও অনেকটা বিলম্বিত করা যায়। ফলে অনেকটা সুস্থ থাকা যায়। 

চিকিৎসকরা বলছেন, বয়স হলে জোড়ায় জোড়ায় ব্যথা, চোখে কম দেখা, উচ্চ রক্তচাপের কারণে হার্ট অ্যাটাক অথবা স্ট্রোকের ঝুঁকিতে থাকা, ঘন ঘন প্রস্রাব সমস্যা, স্মৃতিভ্রংশ হওয়ার মতো সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে। 

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ রোগগুলো বিলম্বিত করা যায় বা রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারলে শরীরকে ফিট রাখা যায়। শরীরে নির্দিষ্ট অঙ্গকে টার্গেট করে ব্যায়াম করা, নিয়মিত হাঁটা এবং শরীরে যেন যথেষ্ট রোদ লাগে সে ব্যবস্থা করতে পারলে অনেকটা সুস্থ থাকা যায়। ঘাম ঝরিয়ে ব্যায়াম করা হলে শরীরে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। রক্তে থাকে যথেষ্ট অক্সিজেন এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান।

রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকলে শরীরের সব স্থানে অক্সিজেন পৌঁছে যায় এবং একই সঙ্গে পুষ্টি উপাদান পৌঁছে শরীরকে সুস্থ রাখে। এভাবে বার্ধক্যকেও বিলম্বিত করা যায়। আবার চিকিৎসকের পরামর্শে অসুস্থ হলেই চিকিৎসা নিতে পারলে সুস্থ থাকা যায়। বয়স হলে যে রোগগুলো বেশি হয় সেগুলো হলো- 

অস্টিও আর্থ্রাইটিস

এই রোগটি হলে শরীরের জোড়ায় জোড়ায় ব্যথা শুরু হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেহের জোড়ার মধ্যে থাকা তরল (জয়েন্ট ফ্লুইড) পদার্থ কমে যায়। অর্থোপেডিক্স বিশেষজ্ঞ ডা. মুফাখখারুল ইসলাম বলেন, এ কারণে হাঁটুতে ব্যথা হওয়ার কারণে হাঁটু ফুলে যায়, হাঁটুতে গরম অনুভূত হতে পারে, ব্যথার কারণে হাঁটু ভাঁজ করা যায় না এবং কখনো কখনো হাঁটলে হাঁটুতে শব্দ অনুভ‚ত হতে পারে। এসব সমস্যা পুরুষের চেয়ে নারীদের বেশি ঘটতে দেখা যায়। 

তিনি বলেন, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখলে, নিয়মিত শরীরচর্চা করলে, সুস্থ খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা গেলে রোগগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বাংলাদেশে মেঝেতে বসে কাজ করার প্রবণতা বেশি। বিশেষ করে নারীরা হাঁটু গেড়ে ঘর পরিষ্কার, কাপড় কাচা, রান্না করে থাকেন, এতে হাঁটুতে চাপ সৃষ্টি হয় এবং ব্যথা বাড়ে। এছাড়া ধূমপান বড় একটি সমস্যা। ধূমপান এবং অ্যালকোহল ত্যাগ করা উচিত। তাহলে এই রোগটি হলেও অধিকতর ভালো থাকা যাবে এবং অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। 

ঘন ঘন প্রস্রাব: বয়স হলে ঘন ঘন প্রস্রাব বেড়ে যায়। এ সময় অনেক বয়স্ক ব্যক্তি প্রস্রাব ধরে রাখতে পারেন না। ফলে কাপড়ের মধ্যেই ফোঁটা ফোঁটা ঝরে পড়ে। এ সমস্যাটা পুরুষের চেয়ে নারীদের বেশি দেখা যায়।  মূত্রথলির পেশি দুর্বল হয়ে গেলেও পুরুষ ও নারী ভেদে সবাইকে এ সমস্যাটিতে ভুগতে হয়। 

বিশিষ্ট ইউরোলজিস্ট ডা. মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রায়ই হাঁচি ও কাশি দিলে প্রস্রাব বের হয়ে যেতে পারে। এমনকি ভারী কিছু তোলার সময়েও প্রস্রাব পড়ে যেতে পারে। তখন না চাইলেও প্রস্রাব বের হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, অ্যালকোহল, ক্যাফিন যেমন বেশি বেশি চা, কফি পান, ডায়াবেটিস, ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন হলে, কিছু ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায়ও এমন হতে পারে। এ ধরনের অসুখে মূত্রথলির পেশি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি সক্রিয় হয়ে যায় বলে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কাজ করে এবং এর ফলে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়ে থাকে। 

তিনি বলেন, অনেক সময় মূত্রথলি ছিদ্র হয়ে গেলেও ফোঁটায় ফোঁটায় প্রস্রাব পড়তে পারে। এছাড়া পুরুষের প্রোস্টেট গ্রন্থিতে সমস্যা হলেও এমন হতে পারে। আমাদের দেশে মেয়েদের মধ্যে প্রস্রাব আটকে রাখার প্রবণতা বেশি থাকে পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারণে। যথেষ্ট সুযোগ না থাকায় নারীরা প্রস্রাব আটকে রাখেন। দীর্ঘদিন এরকম করলে মূত্রথলিতে ইনফেকশন হয়ে যায়। মূত্রনালির ইনফেকশন হলে সময়মতো বেশির ভাগ নারী চিকিৎসা নিতে পারেন না। এসব কারণে তাদের ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স বা ঘন ঘন প্রস্রাব হয়ে থাকে। আবার তারা ব্যাপারটি লজ্জায় বলতেও চান না বলেও সময়মতো চিকিৎসা হয় না। ফলে শারীরিক সমস্যা নিয়েই দিন কেটে যায়। 

স্মৃতিভ্রংশ: বার্ধক্য হলে স্মৃতিভ্রংশ হতে পারে। এটা কোনো কিছু মনে না থাকার রোগ বা ভুলে যাওয়ার রোগ। নিউরোলজিস্টরা বলছেন, ২০১৫ সালের একটি ছোট জরিপে উঠে এসেছে যে, বাংলাদেশে স্মৃতিভ্রংশের রোগী ৫ লাখের কাছাকাছি। ২০৩০ সালের মধ্যে তা ৯ লাখে উন্নীত হতে পারে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে স্মৃতিভ্রংশের রোগীর সংখ্যা ২২ লাখে পৌঁছতে পারে। সাধারণত ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের স্মৃতিভ্রংশ রোগটি বেশি হতে দেখা যায়। 

এটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দরিদ্র জনগোষ্ঠীতে বেশি দেখা যায়। তবে উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্যদেরও এ সমস্যা রয়েছে। কিন্তু উচ্চবিত্ত পরিবারের লোকেরা খাদ্যাভ্যাস কিংবা লাইফস্টাইল পরিবর্তন করে এবং শরীরচর্চা করে রোগটিকে বিলম্বিত করতে পারলেও দরিদ্ররা সামান্য চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ভাগ্যের কাছে ছেড়ে দেয়। উল্লেখ্য, স্মৃতিভ্রংশের কোনো চিকিৎসা আজো আবিষ্কৃত হয়নি। কারণ এটা মস্তিষ্কের রোগ হলেও ঠিক কী কারণে হয় তা শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। রোগটি হলে মানুষের নাম ভুলে যায়। কোন ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করতে হবে এবং কোন ব্যক্তির কাছে কত টাকা পাওনা তা ভুলে যায়। ফলে সামাজিক সমস্যাও দেখা দেয়। 

এছাড়া কখন কী করতে হবে, কোথায় কী রাখা আছে এবং কোন সময়ে কাজটি করতে হবে তা মনে থাকে না। এমনকি সামান্য আগে যে লোকটির সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা হয়েছে তাকে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ নিয়ন্ত্রণে রাখতে মস্তিষ্কের ব্যবহার বাড়ানো খুব জরুরি। বই পড়া, শব্দ তৈরি করার খেলা, সামাজিক কার্যক্রম বৃদ্ধি, মানুষের সঙ্গে মেলামেশা বৃদ্ধি করা, মস্তিষ্ক সজীব রাখে এরকম কিছু করলে ডিমেনশিয়া নিয়ন্ত্রণে কাজে আসে। সবচেয়ে বড়ো কথা হলো-নিয়মিত শরীর চর্চা করলে বার্ধক্যজনিত রোগ দূরে রাখা যায়।

স্ট্রোক: এটা মস্তিষ্কের রোগ। নারীদের তুলনায় পুরুষের স্ট্রোক বেশি হয়ে থাকে। স্ট্রোক হলে শারীরিক প্রতিবন্ধিতা তৈরি হয়। অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। চিকিৎসকরা বলছেন, মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটলে স্ট্রোক হতে পারে। সাধারণত অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকলে স্ট্রোক হয়ে থাকে। রোগটি হলে হাত-পা, মুখের অংশ অবশ হয়ে পড়তে পারে। অনেক সময় জিহ্বা অসাড় হয়ে কথা জড়িয়ে যেতে পারে। চোখে দেখার ক্ষমতা কমে যায়। 

নিউরোলজি বিশেষজ্ঞ ডা. হুমায়ুন আহসান বলেন, রক্তনালিতে রক্ত জমাট বেঁধে গেলে মস্তিষ্কে স্ট্রোক হয়ে থাকে। ফলে মস্তিষ্কের কোনো একটা অংশের সক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। অনেক সময় রক্তনালির কোনো অংশ ছিঁড়ে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে স্ট্রোক হয়।

ডা. মনোয়ারুল কাদির বলেন, হঠাৎ ভারসাম্য হারিয়ে ফেললে, চোখে না দেখলে অথবা কম দেখলে, মুখের কোনো একটি অংশ দুর্বল হয়ে পড়লে অথবা কখনো হাত-পা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি দুর্বল বা নড়াচড়া করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেললে, হঠাৎ কারোর কথা বলতে সমস্যা হলে বা কথা বলতে না পারলে তখন স্ট্রোক হয়েছে বলে বুঝে নিতে হয়। 

ডা. মনোয়ারুল কাদির বলেন, এমনটা ঘটলে বিলম্ব না করে কাছাকাছি কোনো নিউরোরজিস্টের কাছে যেতে হবে। ভালো হয়, নিউরোলজির চিকিৎসা হয় এমন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। যত তাড়াতাড়ি হাসপাতালে যাবেন তত তাতাড়াড়ি সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। দেরি হলে সুস্থ না হয়ে শরীর অচল হয়ে পড়তে পারে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫