
প্রতীকী ছবি
বিশ্ব যতই এগিয়ে যাচ্ছে মানুষ ততই আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। আর আধুনিকায়নের সঙ্গে যেন পাল্লা দিয়ে ভাঙছে ঘর। ফলে বাড়ছে সিঙ্গেল প্যারেন্টিং। অর্থাৎ সিঙ্গেল মাদার ও ফাদারের সংখ্যা। আমাদের সমাজ এখনো নারীবান্ধব হয়ে ওঠেনি। ফলে নারীর ক্ষেত্রে সিঙ্গেল প্যারেন্টিং বিষয়টা বাঁকা চোখে দেখা হয়। একা নারীর পক্ষে সন্তান মানুষ করাটা বলা চলে কঠিন চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় তাদের।
সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করানোর সময় থেকেই শুরু হয় একা মায়েদের সংগ্রাম। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ চায় না নারীরা অভিভাবক হোক। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অভিভাবকের স্থানে মায়ের নাম দেখলেই নড়েচড়ে বসে তারা। নারীর অভিভাবকত্বের কারণসহ বিভিন্ন অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হয় তার উদ্দেশে। এছাড়া তার ব্যক্তিজীবনও নিয়ে আসা হয় প্রশ্নোত্তর পর্বের টেবিলে। পাশাপাশি রাস্তাঘাটেও মানুষজনের নানা রকম কটুবাক্য ছুঁয়ে যায় কান।
সিঙ্গেল প্যারেন্টিংয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরিতে সবচেয়ে অবদান রাখে আত্মীয়-স্বজন ও চেনাজানারা। তারা সুযোগ পেলেই সংসার সন্তান পালনে সঙ্গীর প্রয়োজনীয়তা মনে করিয়ে দিতে বেশ দক্ষতা দেখায়। সেই সঙ্গে ইনিয়ে বিনিয়ে সংসার বাঁধার বা পুরনো সংসারে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। বেশিরভাগ সময়ই সিঙ্গেল মাদারের ক্ষেত্রে তারা যেচে পরামর্শক হয়ে থাকে।
শুধু একা মা নয়, একা বাবার অসুবিধাও কোনো অংশে কম নয়। মা-বাবার ছাড়াছাড়ি হলে ছেলে বা মেয়ে যার কাছে থাকে, তার দায়িত্ব এক ধাক্কায় অনেকটাই বেড়ে যায়।
একাধারে মা ও বাবা দুই-ই হয়ে ওঠার জেদ থাকে। সিঙ্গেল পেরেন্টহুডের এই চাপ নিজেরাই নিজেদের মানতে বাধ্য করেন। ‘সুপারড্যাড’ বা ‘সুপারমম’ হওয়ার বাসনা অজান্তেই তাদের আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে।
এই চাপের ধকল সইতে না পেরে অনেক সিঙ্গেল মা-বাবা চলে যান ডিপ্রেশনে। কিন্তু ওই যে কথায় আছে না জীবন যার তাকেই সামলাতে হয়। চারপাশে পরামর্শদাতা ও টিপ্পনীকারীরা কখনো সে জীবনের দায়ভার নিতে আসে না। ফলে প্যারেন্টিংয়ে প্রথম শর্তই হলো চারপাশের মানুষজনের কথায় কান মোটেই দেওয়া যাবে না। আর এজন্য প্রথমেই নিজেকে একা হিসেবে স্বীকার করতে হবে। শিশুর মানসিক বিকাশের সবটাই নিজের হাতে করতে হবে। সন্তানকে সময় দিতে হবে। অফিস যাওয়ার আগে বা পরে অর্থাৎ সুবিধামতো সময় বের করে শিশুর সঙ্গে সময় কাটাতে হবে।
সন্তানের সঙ্গে নিজের সম্পর্কটা সহজ করে তুলতে হবে। যেন সে বুঝতে পারে সিঙ্গেল প্যারেন্টিং মোটেও খারাপ কিছু না। তবে মা কিংবা বাবা যিনিই হোন একা থাকলে সন্তানকে নিয়ে কিছু সমস্যা পোহাতেই হয়। এজন্য কিছু সাপোর্টিভ মানুষের সহযোগিতা নিন। বিশেষ করে যখন অফিসে বা বাইরে থাকবেন তখন ডে কেয়ার সেন্টারের সহযোগিতা নিতে পারেন। বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখুন।