
‘মুক্তিযুদ্ধে ধর্ষিতা মেয়েদের বাবার নামের জায়গায় আমার নাম লিখে দিও, আর ঠিকানা দিয়ে দিও ধানমন্ডি৩২ নম্বর’- এমন কথা বলতে পারেন কেবল একজন মহাপুরুষ। এরকম মহাপুরুষ পৃথিবীতে আর জন্ম নেবে কি-না আমার জানা নেই- এমন কথা বলছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সুরাইয়া নাজনীন।
নাজনীন আরো বলেন, ‘আমরা তরুণ প্রজন্ম স্বাধীনতা দেখিনি। তবে যুদ্ধে আহত মুক্তিযোদ্ধা দেখে বা বই পড়ে অথবা স্বাধীনতার কোনো চলচ্চিত্র দেখে অনুভব করেছি স্বাধীনতা কি জিনিস। কত কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে সে সময়কার মানুষগুলোকে। পৃথিবীর ইতিহাসে যেসব দেশ যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
আর এই স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে সেদিন যার নির্দেশে লাখো বাঙালি চব্বিশ বছর পাকিস্তানি হায়েনাদের নির্যাতন থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় মৃত্যুকে অনিবার্য জেনেও নেতার আদেশকে শিরোধার্য মনে করে মুক্তির নেশায় মৃত্যুকে আপন করে নিয়েছিলো, তিনি হলেন বাঙালি জাতির অহঙ্কার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি ছিলেন স্বাধীনতাকামী মানুষের এক জীবন্ত আদর্শ।
তিতুমীর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম আকাশ বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হচ্ছে আমাদের কাছে শুধু শোনা গল্পমাত্র। আমাদের নানা, নানি, দাদা, মামা বা আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে শোনা কাহিনি। সেদিন আমাদের জন্ম হয়নি। দেখিনি স্বাধীনতা শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো। ভাবতেও পারি না, মাত্র একজন লোক কী করে কোটি কোটি বাঙালিকে মোহিত করেছিলেন। হোক না তা আমাদের কাছে অন্যের মুখে শোনা গল্প। তবু তো বাস্তব। তাই উপলব্ধি করি কেবল একজন শেখ মুজিব কীভাবে সারাদেশের তরুণ-যুবাদের নাড়া দিয়ে গিয়েছিলেন। নাড়া দিয়েছিলেন পুরো বাংলাকে; কিন্তু কতটুকু জানি আমরা তার কথা, কিংবা তার ভূমিকাকে কতটা স্মরণ করি?’
বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সান্তুনু ঘোষ বলেন, আমি মনে করি, তিনিই এই দেশের জন্মদাতা। তার জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না। আর বাংলাদেশের জন্ম না হলে আমি আজ তাকে নিয়ে কথা বলতে পারতাম না।’
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে; কিন্তু তাকে নিয়েই যখন বিতর্ক হয়, তখন আমাদের তরুণ প্রজন্মের লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করে। যার জন্য এই দেশ স্বাধীন হয়েছে তাকে নিয়ে কোনো সমালোচনা আমরা তরুণরা মেনে নিতে পারব না।’