
বর্ষার স্যুপ। ফাইল ছবি
বর্ষাঋতু পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। উপভোগ্য ঋতুগুলোর মধ্যে অন্যতম এটি। বর্ষার ছন্দবদ্ধ বৃষ্টির শব্দ কিংবা আকাশে মেঘের ঘনঘটায় মন হয় উদাস। তবে একটু অসতর্কতায় এই বর্ষাই হয়ে উঠতে পারে বিপত্তির কারণ। এই ঋতুতে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেশি। কেননা নতুন পানিতে মিশে থাকা নানা রোগ-জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে বিভিন্ন রোগ তৈরি করে। আবহাওয়ায় আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণে হজমশক্তি কমে যায় এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও অনেকটাই কমে যায়।
তবে এ সময় তুলনামূলকভাবে পেটের রোগই বেশি হয়। তাই পেটের রোগ থেকে বাঁচতে খাবার গ্রহণের ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। এই বিড়ম্বনা থেকে নিরাপদ থাকতে হলে চিকিৎসকদের পারামর্শ অনুযায়ী কিছু খাবার গ্রহণ ও খাবার বর্জন করাটা বাঞ্ছনীয়। চলুন জেনে নেই এ সম্পর্কে।
সবুজ শাকসবজি স্বাস্থ্যের জন্য কল্যাণকর। কিন্তু এই বর্ষায় তা হয়ে উঠতে পারে ক্ষতির কারণ। এই ঋতুতে যতটা সম্ভব শাকসবজি বর্জন করতে হবে। অন্যথায় এসবের গায়ে লেগে থাকা জীবাণু যা পেটে গিয়ে পাকস্থলীর ক্ষতির কারণ হতে পারে। পাশাপাশি ডায়রিয়া কিংবা পেটের পীড়ার কারণ হতে পারে। তবে কেউ যদি খেতেই চান তবে গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে শাকসবজি ধুয়ে তবেই খেতে পারেন। এছাড়া কাঁচা সবজি খাওয়া যাবে না।
বর্ষায় পেট সুস্থ রাখতে হলে সামুদ্রিক মাছ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। পাশাপাশি চিংড়ি, কাঁকড়াও খাওয়া যাবে না। আর যদি খেতেই হয় তাহলে টাটকা অবস্থায় খেতে হবে এসব। ঠান্ডা, বাসি হয়ে গেলে তা পেটের রোগকে উসকে দিতে যথেষ্ট।
বাইরের মুখরোচক খাবার সব মানুষের কাছেই লোভনীয়। তবে বর্ষাকালে তা এড়িয়ে চলাই ভালো। বর্ষা মৌসুমে পেট ভালো রাখতে চাইলে তৈলাক্ত খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে। কেননা এ সময় শরীর অতিরিক্ত পানি ধরে রাখে। তৈলাক্ত খাবার খেলে অতিরিক্ত তেল পানির সঙ্গে মিশতে পারে না। আর এই চাপ থেকে তৈরি হতে পারে পেটের রোগ।
এ সময় ঘন ঘন খাবার গরম করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা বর্ষায় জীবাণু দ্রুত ছড়ায়। তাই ঘন ঘন খাবার গরম করলে ওই খাবার থেকে জীবাণু তৈরি হতে পারে যা পেটে গিয়ে পীড়া সৃষ্টি করতে পারে।
এবার চলুন তবে জেনে নেই কোন ধরনের খাবার খাওয়া বারণ নেই বর্ষায়। বর্ষাকালে স্যুপ খুব উপকারী। এ সময় গরম সবজির স্যুপ জ্বর কমানোর পাশাপাশি পেটের অসুখও ভালো করে দেয়। এছাড়া শরীরে পানির মাত্রা বজায় রেখে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।
বর্ষাকালে শুকনো খাবার বেশ উপকারী। এতে স্বাস্থ্য ও মন থাকে ঝরঝরে। বর্ষায় জীবাণু ছড়ানোর অন্যতম মাধ্যম পানি। তাই এ সময় পানি ব্যবহার ও পানি পানের ক্ষেত্রে অবশ্যই পরিষ্কার পানির বিকল্প নেই। হারবাল চা খেতে পারেন। এটি হজমের জন্য উপকারী ভূমিকা পালন করে, এতে পেট ভালো থাকে।
বর্ষাকালে প্রতিদিন মৌসুমি ফল খেতে হবে। আনারস, বেদানা, পেয়ারা, লটকন খেতে পারেন। মৌসুম শেষের আমও পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে। তা না হলে ওজন বৃদ্ধি, ব্রণ ও ফুসকুড়ির সমস্যা দেখা দিতে পারে। ভিটামিন সি যুক্ত ফল ও সবজি খান, এতে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
হজমশক্তি বাড়ায় এমন মসলা যেমন আদা, রসুন, জিরা, ধনে, হলুদ এগুলো বেশি ব্যবহার করুন রান্নায়। মাছ-মাংস রান্নার ক্ষেত্রে অত্যধিক তেল-মসলা দিয়ে না কষিয়ে হালকা স্টু করে রান্না করুন।