
প্রতীকী ছবি
সাধারণত সবার একটি নির্দিষ্ট গণ্ডি থাকে। যাকে আমরা কমফোর্ট জোন বলে থাকি। এই গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ থাকতেই অনেকে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তারা এখান থেকে বের হওয়াকে বেশি কঠিন মনে করেন। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবন আরও সমৃদ্ধ করতে ও বিশ্বায়নের এই যুগে নিজেকে মানিয়ে নিতে এই সীমা অতিক্রম করার প্রয়োজন হয়। তাই ভয় না পেয়ে নিজের গণ্ডি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করা উচিত। নিজের কমফোর্ট জোন থেকে বের হতে পারলে আত্মবিশ্বাসও বাড়ে। আর কিছু অর্জন করতে পারার মাঝে অন্য ধরনের ভালো লাগা থাকে।
যদি নিজের পরিচিত গণ্ডি থেকে বের হতে চান, তাহলে থাকছে কিছু পরামর্শ।
আত্মবিশ্বাসী মানুষের সঙ্গে মেশা : আত্মবিশ্বাসী মানুষের সঙ্গে চলাফেরা করুন। দেখবেন তারা অনেক ঝুঁকি নিতে পছন্দ করে। এই গুণ আপনার মাঝেও আত্মবিশ্বাস বাড়াবে, ভীতি কাটাতে সহায়তা করবে। আত্মবিশ্বাসী মানুষের সঙ্গ ধীরে ধীরে পরিবর্তন আনবে। আর সেই পরিবর্তন নিজেই বুঝতে পারবেন।
কাজকে কয়েক ধাপে ভাগ করে নেওয়া : নতুন কিছু শুরু করা অত্যন্ত কঠিন মনে হতে পারে। তাই নতুন কোনো কাজ শুরুর আগে একটি পরিকল্পনা করুন। পুরো কাজটি কয়েকটি ধাপে ভাগ করে নিন। শুরুতে প্রথম ধাপে ভালোভাবেই মনোনিবেশ করুন। দেখবেন প্রথম ধাপ শেষ করার পর আগ্রহ বাড়বে। ফলে দ্বিতীয় ধাপ শুরু করতে তখন কোনো ভয় বা সংকোচ থাকবে না। এভাবে বেশ সহজেই কাজটি শুরু এবং শেষ করতে পারবেন। প্রয়োজনে কাজের বিষয়ে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলুন। তারা কী পরামর্শ দিচ্ছে তা জানুন।
খারাপ ও ভালো দিক বিবেচনা করা : সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়। যে কোনো সাহসী উদ্যোগের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস অর্জন শুরু হয়, আর এটি ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে। যদি নতুন কিছু শুরু করতে চান, তাহলে নিজেকে প্রশ্ন করুন- সবচেয়ে খারাপ কী ঘটতে পারে বা সবচেয়ে খারাপ ফল কী হতে পারে। হয়তো এই প্রশ্নের উত্তর বিরক্তিকর হতে পারে। তারপর নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, সবচেয়ে ভালো কী ঘটতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর যদি মঙ্গলজনক হয়, তাহলে কাজটি শুরু করুন।
নিজেকে পুরস্কৃত করা : একটি তালিকা তৈরি করে তাতে বিরক্তিকর কাজগুলো রাখুন। প্রতিটি কাজের পাশে একটি পুরস্কার রাখুন। ওই তালিকা থেকে যে কোনো একটি দৈনিক বা সাপ্তাহিক অনুশীলন করুন। নিয়মিত অনুশীলনে সেই বিরক্তিকর কাজটিই অভ্যাস হয়ে উঠবে। আর যদি এটি করতে পারেন, তাহলে এজন্য নিজেকে পুরস্কৃত করুন। তাহলে আগ্রহ ও আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
ভয়কে স্বীকার করা : বেশিরভাগ মানুষ নিজের কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে আসার সময় অবাক হয়। তারা অনেক সময় কিছু না ভেবেই কোনো কিছুতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু এটা কোনোভাবেই ঠিক নয়। নিজের কমফোর্ট জোন থেকে বের হতে আগ্রাসী হওয়া যাবে না। বরং যা-ই করুন না কেন একটু শান্তভাবে করুন। এজন্য কার্যকর উপায় হলো, নিজের ভয়কে স্বীকার করে নেওয়া। ভয় পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করলে পিছিয়ে পড়বেন না, বরং যে কোনো কাজ অনেক সাবধানী হয়ে শুরু করতে পারবেন।
অনুসরণ করা : এমন কাউকে অনুসরণ করতে পারেন, যিনি কোনো কিছুকে ভয় পান না এবং যাকে পছন্দ করেন বা প্রশংসা করেন। তারপর যেভাবে মনে করেন সেভাবেই শুরু করুন। তবে মনে রাখবেন কারও অনুপ্রেরণামূলক কথা কাজ করে দেবে না, আপনার কাজ আপনাকেই করতে হবে। কেবল তার সাহসিকতাকে অনুসরণ করতে পারেন। একবার মনস্থির হয়ে গেলে উদ্যোগ নিন, কাজ করুন, ভুল থেকে শিখুন। একসময় ঠিকই পারবেন।
নিজের লক্ষ্য মনে রাখা : কী অর্জন করতে চান তা সবসময় মনে রাখুন। যদি ব্যবসা ও ক্যারিয়ারে উন্নতি করতে চান, তাহলে নেটওয়ার্ক আরও বাড়াতে হবে। বেশি সংখ্যক মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে নিজের কমফোর্ট জোনে থাকার কোনো সুযোগ নেই। সেখান থেকে অবশ্যই বের হতে হবে। এজন্য নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে আগের অর্জনগুলোর কথা মনে করুন। আর অবশ্যই নিজের লক্ষ্যকে মাথায় রেখে পরিকল্পনা সাজাতে হবে।
ছোট দিয়ে শুরু করা : ছোট ছোট উদ্যোগ দিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। আমাদের মস্তিষ্ক শক্তি সংরক্ষণের জন্য নকশা করা হয়েছে। যখন মস্তিষ্ক উপলব্ধি করে, কাজটি কঠিন নয় তখন সহজেই এটি সম্পাদন করতে মস্তিষ্ক বার্তা দেয়। যখন কোনো কাজ সফলভাবে শেষ হয় তখন মস্তিষ্কের পুরস্কার সিস্টেম সক্রিয় হয়, যা অনুপ্রেরণা জোগায়। এভাবে যখন বারবার সফলভাবে কোনো অভ্যাস গড়ে তোলা যায় তখন মস্তিষ্কও সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাই ছোট ছোট উদ্যোগ দিয়ে শুরু করতে হবে। তাহলে মস্তিষ্কও সেই চাপটা সহজেই নিতে পারবে।