Logo
×

Follow Us

লাইফস্টাইল

ঘুরে আসুন মিরসরাইয়ের ৭ ঝরনায়

Icon

আজহার মাহমুদ

প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৩, ১২:৩৪

ঘুরে আসুন মিরসরাইয়ের ৭ ঝরনায়

রূপসী ঝরনা ও ট্রেইল। ছবি: সংগৃহীত

মিরসরাই পাহাড় রেঞ্জটি একটি ঝরনার ঝুড়িবিশেষ। এই একটা এলাকায় ঝরনার পাশাপাশি আছে ঝরনা ট্রেইল বা স্থানীয় ভাষায় ছড়া বা ঝিরিপথ। বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঝরনায় পানি বেশি থাকে, তাই পর্যটকরাও এই সময় ঝরনায় এসে বেশ আনন্দ করে। ঝরনার পানিতে শরীর ভেজাতে পর্যটকরা দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন।

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের পাহাড়ের সাতটি ঝরনার বর্ণনা নিচে দেওয়া হলো-

রূপসী ঝরনা ও ট্রেইল : প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর ঝরনার মায়াবী রূপ দেখে স্থানীয় লোকজন এই ঝরনার নাম দিয়েছে রূপসী ঝরনা। আঁকাবাঁকা গ্রামীণ সবুজ শ্যামল মেঠো পথ পার হয়ে পাহাড়ের পাদদেশে গেলেই শোনা যাবে ঝরনার পানি গড়িয়ে পড়ার অপরূপ নূপুরধ্বনি। দুই পাশে সুউচ্চ পাহাড়। সাঁ সাঁ শব্দে উঁচু পাহাড় থেকে অবিরাম শীতল পানি গড়িয়ে যাচ্ছে ছড়া দিয়ে। রূপসী ঝরনা দেখতে যাওয়ার পথে দৃষ্টিনন্দন ছড়া, পাহাড়, সবুজ প্রকৃতি, তিনটি ভিন্ন ভিন্ন অপরূপ ঝরনা রূপসীর সৌন্দর্যকে অন্য ঝরনা থেকে আলাদা করেছে। এই ঝরনায় যেতে মিরসরাইয়ের বড়দারোগাহাট বাজারের উত্তর পাশের ব্রিকফিল্ড সড়ক দিয়ে পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত যেতে হবে। সেখান থেকেই ঝরনার উদ্দেশে হাঁটা শুরু করবেন।

নাপিত্তাছড়া ঝরনা ও ট্রেইল : এখানে মূলত তিনটি ঝরনা রয়েছে। এগুলো হলো কুপিকাটাকুম, মিঠাছড়ি ও বান্দরকুম বা বান্দরিছড়া। আর ঝরনাগুলোতে যাওয়ার যে ঝিরিপথ রয়েছে সেটাকে নাপিত্তাছড়া ট্রেইল বলে। এই ঝরনায় যেতে মিরসরাইয়ের নয়দুয়ারীবাজারে নামতে হবে। সেখান থেকে স্থানীয় গাইড নিয়ে অথবা নিজেই নাপিত্তাছড়া ঝরনায় চলে যেতে পারেন। নয়দুয়ারী থেকে হেঁটে যেতে ৩০/৪০ মিনিট লাগবে।

বাওয়াছড়া লেক ও ঝরনা : বাওয়াছড়া লেকের চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য়ে মুগ্ধ হবেন যে কেউ। যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা কোনো নিখুঁত ছবি। দুইপাশের উঁচু উঁচু পাহাড় থেকে পানি অবিরাম লেকে গড়িয়ে পড়ার অপূর্ব দৃশ্য প্রশান্তি এনে দেয়। সেই সঙ্গে পাহাড়ি সবুজের ফাঁকে পাখির কলতান মন কেড়ে নেয়। ভরা পূর্ণিমা রাতে বাওয়াছড়া লেক ক্যাম্পিংয়ের জন্য আদর্শ জায়গা। মিরসরাইয়ের ছোট কমলদহ বাজারের দক্ষিণে দেড় কিলোমিটার দূরেই বাওয়াছড়া লেক।

মহামায়া লেক ও ঝরনা : মহামায়া লেক বাংলাদেশের অন্যতম কৃত্রিম হ্রদ। এই লেকের টলটলে পানি আর পাহাড়ের মিতালি ছাড়াও এখানে পাহাড়ি গুহা, রাবার ড্যাম ও অনিন্দ্য সুন্দর ঝরনা রয়েছে। বোটে চড়ে লেকে ঘোরার পাশাপাশি পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা ঝরনার শীতল পানিতে ভিজে শরীর ও মনকে অপার্থিব প্রশান্তি দিতে পারেন। মহামায়া লেকে কায়াকিং করার সুবিধা আছে এবং তাঁবুতে রাতে ক্যাম্পিং করে থাকতেও পারবেন। মহামায়া লেকে যেতে মিরসরাইয়ের ঠাকুরদীঘি বাজারে নামতে হবে। সেখানে থেকে সিএনজি বা গাড়িতে করে যাওয়া যাবে মহামায়া ইকোপার্কে। এই ইকো পার্কের ভেতরেই মাহামায়া লেকের অবস্থান।

বোয়ালিয়া ঝরনা ও ট্রেইল : ঝরনা , খুম, ঝিরি পথ বোয়ালিয়া ট্রেইলকে করেছে বহুগুণ দর্শনীয়। বোয়ালিয়া ট্রেইলে আছে বোয়াইল্যা, বাউশ্যা, অমরমানিক্য ঝরনা। দুই দিকে উঁচু পাহাড় আর মাঝখানে গিরিপথ, পাথুরে দুর্গম ঝিরি- যার দুই পাশে গহিন জঙ্গল বোয়ালিয়া ট্রেইলকে করেছে অ্যাডভেঞ্চারাস। মিরসরাই-ফটিকছড়ি সড়কের রেললাইন পার হয়ে ব্র্যাক অফিসের উত্তর পাহাড়ে এই ঝরনার অবস্থান। পাহাড়ের পাদদেশে গাড়ি রেখে ২ কিলোমিটার হাঁটলেই ঝরনার রূপ ধরা দেবে।

খৈয়াছড়া ঝরনা : মিরসরাইয়ে সব কটি ঝরনার মধ্যে জনপ্রিয় হলো খৈয়াছড়া ঝরনা। যার আছে আটটি স্তর। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পর্যটকরা আসছেন এই নয়নাভিরাম ঝরনায়। এই ঝরনায় যেতে মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া বাজারের উত্তর পাশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চার কিলোমিটার পূর্বে এই ঝরনার অবস্থান। এর মধ্যে এক কিলোমিটার পথ গাড়িতে যাওয়ার পর বাকি পথ হেঁটে যেতে হবে। বাঁশের সাকো, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ, ছড়া, অন্তত চারটি পাহাড় পেরিয়ে যেতে হবে এই ঝরনায়।

সোনাইছড়ি ঝরনা ও ট্রেইল : মিরসরাই এলাকায় সবচেয়ে সুন্দর টেইল হচ্ছে সোনাইছড়ি টেইল। ঝরনার সঙ্গে ঝিরি পথ, ছোট ছোট গুহা আর খুমে মিলবে প্রকৃতির দারুণ সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ। এই ট্রেইল পুরোমাত্রায় বুনো ও পাথুরে। বর্ষায় এটি আরও দুর্গম হয়ে ওঠে। এই ট্রেইলে যেতে মিরসরাইয়ের হাদি ফকিরহাট বাজার যেতে হবে। সেখান থেকে হাদি ফকিরহাট জামে মসজিদের গলি ধরে হেঁটে অথবা সিএনজি নিয়ে বড়-পাথর যেতে হবে। সেখান থেকে শুরু হয় ট্র্যাকিং।

সতর্কতা
ঝরনায় দুর্ঘটনা এড়াতে প্রশাসন পর্যটকদের জন্য যে নির্দেশনা দিয়েছে তা অবশ্যই মানতে হবে। এই নির্দেশনা না মানলে যে কোনো সময় দুর্ঘটনারও ঝুঁকি আছে। এছাড়াও ঝরনায় গোসল করতে গিয়ে ওপর থেকে লাফ দেওয়া, পানিতে বেশিক্ষণ না থাকাই শ্রেয়। বিশেষ করে লাফ দিয়ে দুর্ঘটনার শিকার অনেকেই হয়েছে। এছাড়াও বর্ষার সময় পাহাড়ের চূড়া পিচ্ছিল থাকে। তাই পাহাড়ের চূড়া থেকে পড়েও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় ওঠা থেকেও বিরত থাকবেন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫