প্রতি মুহূর্তেই মৃত্যুর ভয় মানুষকে তাড়া করে। বিছানা থেকে পড়ে প্রাণ হারানোর কথা মানুষ কল্পনাতে না আনলেও পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ বিছানা থেকে পড়ে মারা যায়। তবে এমন মৃত্যুতে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যা বেশি। 

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের (সিডিসি) হিসাবে, দেশটিতে প্রতিবছর বিছানা থেকে পড়ে হাসপাতালে জরুরি বিভাগে যেতে হয় ১৮ জন মানুষকে। আর ৪ লাখের বেশি মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। এ ছাড়া ইউরোপে শুধু যুক্তরাজ্যেই প্রতিবছর ২০ হাজার মানুষ বিছানা থেকে পড়ে আহত হয়। 

বিছানা থেকে পড়ে পাওয়া আঘাতের প্রভাব থাকে দীর্ঘমেয়াদি হওয়ায় এসব দুর্ঘটনায় কতজন মারা যায়, সেই সংখ্যা পাওয়া কঠিন। তবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর বিছানা থেকে পড়ে সাড়ে ৪০০-এর বেশি মানুষ মারা যায় বলে বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা গেছে। 

সিডিসির তথ্য অনুসারে, অন্যান্য কারণে মৃত্যুর সংখ্যা এ তুলনায় অনেক কম হলেও তা একবারে নগণ্য নয়। বিছানা থেকে পড়ে হাড়ভাঙা, মাথায় আঘাত এবং অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণসহ গুরুতর আহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এর পরিণতি দীর্ঘস্থায়ীও হতে পারে। 

বিছানা থেকে পড়ে মৃত্যুর প্রধান কারণ মাথায় আঘাত পাওয়া। এ ছাড়া খাটের কিনারায় পড়ে গেলে গলায় চাপ লেগে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। 

এ ছাড়া বয়স্কদের মধ্যে যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে, তারা বিছানা থেকে পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারালে সাধারণত সময়মতো চিকিৎসা পান না। এতেও মৃত্যু প্রায় অবধারিত হয়। 

পড়ে যাওয়ার কারণ

বিছানা থেকে পড়ে যাওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে কিছু সাধারণ কারণ হলো-

বয়স: বিছানা থেকে পড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বয়স্করা বেশি ঝুঁকিতে থাকে। ভারসাম্যহীনতা বা শারীরিক অসুস্থতার করণে এমনটা হয়ে থাকে। 

ঘুমের সমস্যা: অনেকে ঘুমের মধ্যে হাঁটাচলা করেন। আবার কারও রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম বা পায়ের পেশিতে টান পড়ার সমস্যা হয়। তখন ঘুমের মধ্যে নড়াচড়া করতে তারা পড়েন যান। 

মাদক সেবন: নেশাগ্রস্ত থাকলে শরীরের ভারসাম্য থাকে না। তখন বিছানা থেকে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। 

রেলিং না থাকা: খাটে রেলিংয়ের মতো নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকলে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। 

বয়স্কদের ঝুঁকি বেশি

বিছানা থেকে পড়ে যাওয়া বয়স্কদের জন্য তুলনামূলক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, বয়স্কদের মধ্যে আঘাতের ঝুঁকি বেশি থাকে। বয়সের সঙ্গে হাড়ের ঘনত্ব এবং শরীরের ভারসাম্য কমতে থাকে। এর ফলে যেকোনো দুর্ঘটনায় বয়স্করা তুলনামূলক বেশি আঘাত পান।

বিছানা থেকে পড়ার কারণে দীর্ঘ মেয়াদে ভুগতে হতে পারে। এতে হাড় ভাঙা, মাথায় আঘাত এবং অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হতে পারে। এ আঘাতগুলোর জন্য দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসা, পুনর্বাসন এবং কারোর জীবনমানে প্রভাব পড়তে পারে।

ঝুঁকিতে শিশুরাও

বিছানা থেকে পড়ে যাওয়ার ঘটনা প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বেশি হলেও শিশুরাও এর ঝুঁকিতে থাকে। বিশেষ করে যে শিশুদের দোলনা থেকে বিছানায় স্থানান্তর করা হয়, তাদের মধ্যে এ ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই শিশুদের বিছানায় রেলিং বা গার্ডরেইল স্থাপনের মতো পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। 

ওষুধের প্রভাব

কিছু কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মাথা ঘোরানো, তন্দ্রাভাব বা শরীরে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে। এতে বিছানা থেকে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। ওষুধের এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। 

বিছানা থেকে পড়ে যাওয়াকে তুচ্ছ ঘটনা মনে হলেও এর পরিণতি গুরুতর হতে পারে। এর সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা রাখা এবং প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব।

কি করা যেতে পারে

বিছানাতে রেলিং: বিছানাতে রেলিংয়ের ব্যবস্থা করলে তা শারীরিক বাধা হিসেবে কাজ করে এবং পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করে।

শোয়ার ঘর: বিছানায় যেতে এবং বিছানা থেকে ওঠার সময় বাধার সৃষ্টি করে এমন যেকোনো আসবাব সরিয়ে ফেলতে হবে।

মৃদু আলো: রাতে ডিম লাইট বা মৃদু আলো ব্যবহার করলে রাতের বেলা হোঁচট খাওয়া ও পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমে। 

উচ্চতা কম রাখা: বিছানার উচ্চতা তুলনামূলক কম রাখলে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হওয়ার ঝুঁকি কমে। 

চিকিৎসকের পরামর্শ: ঘনঘন বিছানা থেকে পড়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা হলে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এর কারণ চিহ্নিত করতে হবে এবং সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে।