
খাবার খাচ্ছে শিশু। ছবি: সংগৃহীত
শিশুর ছয় মাস বয়স থেকে মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি শিশুকে অন্যান্য খাবার দেওয়া হয়। শিশু বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাদের খাওয়া ও খাবারের পরিমাণ দুটিরই পরিবর্তন হয়। বয়স ভেদে শিশুর খাবারের রুচি পরিবর্তন হতে থাকে। অনেক সময় শিশুদের খাবারের প্রতি অনীহা দেখা যায়, তারা খেতে চায় না। সে ক্ষেত্রে শিশু কী খেতে চায় সেদিকে মা-বাবার বিশেষ মনোযোগ দেওয়া উচিত।
গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের শেষবর্ষের শিক্ষার্থী লামিয়া তাসলিম সাম্প্রতিক দেশকালকে জানান, দুই থেকে তিন বছরের শিশুদের খাবার নরম হতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে নরম বলতে একদম পাতলা স্বাদহীন খাবার যেন না হয়। শিশুর খাবার অবশ্যই বৈচিত্র্যময় হতে হবে। খাবারে দেশীয় ফল-ফলাদি, শাক-সবজি যাতে থাকে সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে। খাবার তৈরির সময় তেল, মসলা ও ঝালও দিতে হবে, যেন খাবারটি সুস্বাদু হয়। এছাড়া খাওয়ানোর সময়টাও লক্ষ্য রাখতে হবে। আধা ঘণ্টার মধ্যে শিশুর খাওয়া শেষ করতে হবে। এ সময়ে যদি খাবার শেষ না হয় তাহলে এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর আবার খাওয়াতে হবে। কিন্তু একই খাবার বাটিতে নিয়ে যেন দুই-তিন ঘণ্টা সময় পার না হয়। এতে করে শিশুর খাবারের চাহিদা নষ্ট হয়ে যায়।
তিন থেকে চার বছর বয়সের শিশুদের গাজর, শসা, টমেটোর মতো সবজি কেটে হাতে দিতে হবে। একই সঙ্গে এ বয়সের শিশুদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বসে সাধারণ খাবার খাওয়ানো অভ্যাস করতে হবে। এ সময় তাদের জন্য আলাদা খাবার নয়, একই খাবার দিতে হবে। আবার চার থেকে পাঁচ বছর বয়স শিশুদের বাড়ন্ত বয়স। এই সময়ে শিশুর প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ভিটামিনের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই তার খাবারে এই পুষ্টি উপাদানগুলো আছে কিনা তা খেয়াল রাখতে হবে।
শিশুর খাবারের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে তাকে সঙ্গে নিয়ে বা উপকরণ দেখিয়ে রান্না করা যায়। আবার তাকে বাজারে নিয়ে গিয়ে ফল, শাক-সবজি, মাছ-মাংস কেনা যায়। এতে শিশুর খাবারের প্রতি আগ্রহ বাড়বে এবং খাবার সম্পর্কেও জানবে। তবে শিশুকে জোর করে বা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো খাবার খাওয়ানো যাবে না। যে খাবার সে খেতে না চায় সেটির পরিবর্তে তাকে অন্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। জোর করে বা লুকিয়ে অন্য খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানো যাবে না।
শিশুরা প্রক্রিয়াজাত, চিনি জাতীয় খাবার, ফাস্ট ফুড, চিপস ও কোমল পানীয় খেতে বেশি পছন্দ করে এবং বারবার খেতে চায়। কিন্তু এই সব খাবার শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ ধরনের খাবার ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়, মেধা বিকাশে বিঘ্ন ঘটাতে ও স্মৃতিশক্তি হ্রাস করতে পারে। চিনিজাতীয় খাবার স্থূলতা, দাঁত ও চোখের সমস্যার জন্যও অনেক ক্ষেত্রে দায়ী।