Logo
×

Follow Us

লাইফস্টাইল

শীতে বাড়তে পারে সংক্রামক ব্যাধি

Icon

হামিম উল কবির

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:৩০

শীতে বাড়তে পারে সংক্রামক ব্যাধি

প্রতীকী ছবি।

এগিয়ে আসছে শীত। ঢাকায় এখনো তেমন বোঝা না গেলেও গ্রামে শীত পড়ে গেছে। এই সময়ে নানা ধরনের রোগ মোকাবিলা করতে হয় মানুষকে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের শীতের রোগটা বেশি কাবু করে। শীতে ঠান্ডার কারণে কিছু ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া কার্যকর হয়। যে কারণে মানুষের সাধারণ জ্বর, সর্দি-কাশি, হাঁপানি (অ্যাজমা), নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস হয়ে থাকে। এগুলো এক ধরনের সংক্রামক ব্যাধি। একজনের থেকে অন্যজনের মধ্যে ছড়ায়। ঠান্ডার কারণে এই রোগগুলো বেশি দেখা যায় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। একই কারণে টনসিল ফুলে যায়, সাইনোসাইটিস হয়ে থাকে। এ ছাড়া ত্বকের রোগ বেড়ে অ্যালার্জি হয়ে থাকে। যে কোনো বয়সে এই রোগগুলো হতে পারে। কিন্তু শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে বলে এই বয়সীরা বেশি আক্রান্ত হয়। 

শীত থেকে রক্ষা পেতে তাই এসময় বেশকিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মাথা, কানসহ সমস্ত শরীর ভালো করে ঢেকে রাখতে হবে। বাচ্চাদের ঠান্ডা খাবার খাওয়ানো যাবে না, কুসুম গরম পানি পান করতে দেয়া উচিত। উষ্ণ পানি দিয়ে গোসল করতে হবে। যাদের অ্যাজমা বা হাঁপানি আছে, তাদের চিকিৎসকের পরামর্শে চলতে হবে।

ধুলাবালিতে ভাইরাস ব্যাক্টেরিয়া
কিছু ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া শীতে খুবই সক্রিয় থাকে বলে সহজেই মানুষের শরীরে ঢুকে যায়। এরা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবাণু এবং বাতাসে ভেসে বেড়ায়। আবার কুয়াশা, ধুলাবালির মধ্যেও ভেসে ভেসে মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে নাক দিয়ে ঢুকে যায়, মুখ হাঁ করলে অথবা খাবার গিললে মুখ দিয়ে ভেতরে ঢুকে যায়। যাদের অ্যালার্জির প্রবণতা আছে, একটু ঠান্ডা লাগলে কারও কারও সর্দি লেগে যায়। ধুলাবালিতে হাঁচি ও সর্দি লেগে যায় তাদের শীতে অনেক সাবধানে থাকতে হবে। 

নিউমোনিয়া
চিকিৎসকেরা বলছেন, নিউমোনিয়া থেকে জটিলতা বৃদ্ধি পেতে পারে। শ্বাসতন্ত্র অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। এক সময় শরীরে অক্সিজেন কমে যেতে পারে। এ ব্যাপারে সাবধান না থাকলে শেষ পর্যন্ত আক্রান্তকে (শিশু ও বৃদ্ধদের) আইসিইউতে নিয়ে যেতে হতে পারে। নিউমোনিয়া হলে রোগীকে ঘরে রাখাই উচিত না। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে শ্বাসতন্ত্র অকার্যকর হয়ে মৃত্যুও হতে পারে। চিকিৎসকেরা বলছেন, নিউমোনিয়ার কারণে অনেক শিশুর মৃত্যু হয়। এছাড়া বয়স্ক লোকও নিউমোনিয়ার কারণে শেষ বয়সে মারা যাওয়ার ঘটনা আছে। নিউমোনিয়া সংক্রমণ ঘটলে এটা গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত। জ্বর ভালো না হলে, শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি পেলে, কফের সঙ্গে রক্ত চলে এলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মাসুদুল হাসান বলেন, যাদের অ্যাজমা বা হাঁপানি রয়েছে তাদের যে কোনো সময় শ্বাসকষ্ট হয়ে যেতে পারে। রাতে শ্বাসকষ্টজনিত কারণে ঘুম ভেঙে যেতে পারে। এ ধরনের রোগীকে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে অথবা হাসপাতালে ভর্তি করতে পারলে ভালো হয়। অ্যাজমা, ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ বা সিওপিডির রোগীর শ্বাসকষ্ট অ্যান্টিবায়োটিক বা নেবুলাইজেশনে ভালো না হলেও হাসপাতালে চলে যেতে হবে। সেখানে চিকিৎসকরা অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিয়ে রোগীকে সুস্থ করে থাকেন। এ ধরনের রোগীদের সব সময় চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা উচিত বলে তিনি জানান।

ইনফ্লুয়েঞ্জা
ঠান্ডা একটু পড়তে শুরু করলেই অনেকের ইন ফ্লুয়েঞ্জা হয়ে থাকে। এটাও একটি ভাইরাল সংক্রমণ। শ্বসনতন্ত্রের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন নাক, গলা এবং ফুসফুসে আক্রমণ করে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, এটিকে ফ্লু ভাইরাসও বলা হয়ে থাকে। বেশিরভাগ মানুষ ফ্লুতে আক্রান্ত হলে নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়। কিন্তু মাঝে মাঝে ফ্লু জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে এবং তা কখনো কখনো মারাত্মক হতে পারে। সাধারণভাবে ঠান্ডা লাগলে পানি পড়া, হাঁচি আসা এবং গলাব্যথার মতো সাধারণ সর্দি কাশির লক্ষণ থাকে। সচরাচর এই সর্দি খুবই ধীরগতিতে বিকশিত হয়। অন্যদিকে ফ্লু হঠাৎ করেই এসে আক্রমণ করে এবং সর্দির সঙ্গে মিলে আরও খারাপ অবস্থার সৃষ্টি করে। ফ্লুর কিছু সাধারণ লক্ষণ ও উপসর্গ হলো, জ্বর ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের উঠে যেতে পারে, মাংসপেশিতে ব্যথা, মাথাব্যথা, শুষ্ক কাশি, অবসাদ এবং দুর্বল লাগা, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, গলাব্যথা হতে পারে। 

ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিনিয়ত নিজের মধ্যে পরিবর্তন করে নতুন নতুন রূপ বা স্ট্রেইনে পরিণত হয়ে থাকে। কেউ একবার ইনফ্লুয়েঞ্জাতে আক্রান্ত হলে তার শরীরে নির্দিষ্ট স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু নতুন স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে আমাদের শরীরে অ্যান্টিবডি আগে থেকে থাকে না, তখনই মানুষ ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লুতে আক্রান্ত হয়।

সিজনাল ইনফ্লুয়েঞ্জা সবাইকে আক্রান্ত করতে পারে। যেসব জায়গায় একসঙ্গে অনেক লোকের বসবাস অথবা একই জিনিসপত্র ভাগাভাগি করে ব্যবহার করে সেসব জায়গায় ফ্লুতে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। ক্যানসার আক্রান্ত, স্টেরওয়েড সেবনকারীর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। এ ধরনের মানুষ সহজেই ইনফ্লুয়েঞ্জা দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। গর্ভবতী নারীদেরও ইনফ্লুয়েঞ্জা দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ফ্লুর টিকা রয়েছে। তবে এই টিকা প্রতিবছরই নিতে হয়। যাদের রোগটি বেশি কষ্ট দেয় তাদেরকে চিকিৎসকরা টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। 

সাবান দিয়ে হাত ধুলে সুস্থ থাকা যায়
সর্দি-কাশির ঝুঁকি কমাতে কিছু পদক্ষেপ নিলে তা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এটা হলো সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলা। বাইরে থেকে ঘরে ঢুকলে প্রথমেই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে পরে অন্য কিছু ধরার অভ্যাস করতে হবে। সাবান দিয়ে ঘন ঘন হাত ধুয়ে নিলে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকা যায়। কিছুদিন আগে কোভিড-১৯ সংক্রমণের সময় চিকিৎসকরা ঘন ঘন হাত ধুতে পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হাতের মাধ্যমে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া নাকে ও মুখে প্রবেশ করে। হাত না ধুয়ে চোখ, নাক এবং মুখ স্পর্শ করা এড়িয়ে চলতে বলেছেন চিকিৎসকরা।

ব্যক্তিগত কিছু জিনিস ভাগাভাগি না করাই ভালো। খাবার, কলম, পানীয়। কর্মস্থলের জীবাণুগুলো এড়াতে চাইলে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদেরও একইভাবে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ঠান্ডা পড়লে চিনি ছাড়া চা পান করা যেতে পারে। চায়ের সঙ্গে লবঙ্গ, এলাচি, দারুচিনি দিলে যেমন স্বাদ বাড়বে তেমনি এগুলোর ঔষধি গুণ ব্যবহারকারীকে অন্য রোগ থেকে সুস্থ রাখবে। 

ব্রংকাইটিস
ব্রংকাইটিস আরেকটি ঠান্ডাজনিত রোগ। ব্রংকাইটিস হলো শ্বাসনালির প্রদাহ। শ্বাসনালিতে প্রদাহের কারণে মিউকাস নিঃসরণ হয় বলে শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যাহত হয়। ঠান্ডাজনিত ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে অথবা কোনো ব্যাক্টেরিয়া শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করলে ব্রংকাইটিস হতে পারে। রোগটি শেষ পর্যন্ত নিউমোনিয়ায় রূপান্তর না হলে তা নিজে থেকেই সেরে ওঠে। শুরুতে শুষ্ক কাশি এবং পরে কাশির সঙ্গে কফ বের হতে পারে। এর সঙ্গে মাথাব্যথা, ঠান্ডা ঠান্ডা অনুভূতি, নাক দিয়ে পানি পড়া, হালকা শ্বাসকষ্ট, চোখ দিয়ে পানি পড়া এবং হাঁচি দেওয়া ইত্যাদি হতে পারে। সাধারণত ২ সপ্তাহ পর্যন্ত এসব লক্ষণ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করাই উত্তম।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫