Logo
×

Follow Us

লাইফস্টাইল

বৈশ্বিক শহর ‘শিকাগো’

Icon

আমীন আল রশীদ

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৪, ১৮:৩৫

বৈশ্বিক শহর ‘শিকাগো’

শিকাগো। ছবি: সংগৃহীত

শিকাগো যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের একটি শহর। এর উত্তরে রজার্স পার্ক এলাকার পশ্চিম শেরউইন এভিনিউয়ের ছোট্ট তিন তলা বাড়িতে আমার তিন সপ্তাহের ডেরা। বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় দোতলা। কেননা এক তলা মাটির নিচে। এখানের সব বাড়ি-ঘরই মোটামুটি একই ধাঁচের।

নীল মিষ্টি জলের আধার লেক মিশিগান ঘর থেকে হাঁটাপথ। দেখতে সাগরের মতো হলেও মানুষ একে কেন যে লেক বলে! এখানকার বাসিন্দারা বলেন, সাগরের পানি লবণাক্ত। কিন্তু লেক মিশিগানের পানি মিষ্টি। পুরো শিকাগো শহরের মানুষের পানির চাহিদা মেটায় এই লেক। তাই এই লেকের সঙ্গে শিকাগোর নদীর সম্পর্কও ছিন্ন করা হয়েছে কংক্রিটের বাঁধ দিয়ে, যাতে নদীর ময়লা পানি লেকে না পড়ে।

এখানে মানুষের দিন শুরু হয় খুব ভোরে। সাতটা সাড়ে সাতটার মধ্যে কাজে বেরিয়ে পড়েন। অধিকাংশ মানুষই ট্রেনে চড়ে অফিসে যাতায়াত করেন। ব্যক্তিগত গাড়ি থাকলেও সিটিএ (শিকাগো ট্রানজিট অথরিটি) ট্রেন তাদের প্রথম পছন্দ। কারণ রাস্তায় ট্রাফিক জ্যামের আশঙ্কা। ট্রেনে কোনো জ্যাম নেই। তা ছাড়া এর সেবাও চমৎকার। সকলেরই সিটিএ কার্ড আছে। স্টেশনে প্রবেশের পথে কার্ড পাঞ্চ করে ঢুকে যায়, আর কোনো চেকিং নেই। সারা বছর চলে। চাইলে সাপ্তাহিক কার্ডও কেনা যায়। ২৩ ডলার দিয়ে আপনি একটি কার্ড কিনলে পুরো সপ্তাহ যত ইচ্ছা ভ্রমণ করতে পারেন। ট্রেনের ভেতর অত্যন্ত ঝকঝকে। দুরবিন দিয়ে খুঁজলেও একটা চিপসের খোসা পাওয়া যাবে না। ট্রেন স্টেশনও ঝকঝকে।

প্রতিদিন ভোরে এসব মানুষের সঙ্গে আমাকেও রওনা হতে হয় আধা ঘণ্টার দূরত্বে মূল শহরের উদ্দেশে। নামতে হয় লেক স্টেটে। আমার ইন্টার্নশিপের মেনটর হানা একজন ফিলিস্তিনি। জন্ম আমেরিকায় হলেও তার বাবা-মা এখনো থাকেন ফিলিস্তিনে। উৎসব-পার্বণে আমেরিকায় আসেন। আবার হানাও যান মাঝেমধ্যে। এখানে মধ্যপ্রাচ্যের মানুষের জন্য আলাদা কোনো এলাকা না থাকলেও আছে চায়না, গ্রিক, হিস্পানিক টাউন এবং ডেভন নামের একটি এলাকা যেখানে অজস্র ভারতীয় ও পাকিস্তানি নাগরিক থাকেন। সংখ্যায় বেশি না হলেও বেশ কিছু বাংলাদেশিও আছেন। যদিও শিকাগো শহরের যে কোনো প্রান্ত থেকেই যে সিয়ার্স টাওয়ার চোখে পড়ে, তার নির্মাতা ফজলুল আর খান একজন বাংলাদেশি। একসময় এটি ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু ভবন।

পশ্চিম শেরউইনের যে বাসায় আমি থাকি, তার গৃহকর্ত্রী ম্যারেন নেলসন একজন আমেরিকান, মিনোসোটা অঙ্গরাজ্য তার জন্মস্থান। কর্মসূত্রে এখন শিকাগোবাসী। পেশায় শিক্ষক। কলাম্বিয়া কলেজে ফ্যাশন ডিজাইন পড়ান। তার স্বামী ডেভ পেশায় একজন স্থপতি। স্কটল্যান্ডের নাগরিক। আমেরিকান নাগরিকত্ব সহজেই নিতে পারেন। কিন্তু সেটি না নিয়েও এখানে দিব্যি আছেন। ফলে এই ঘরে একই সঙ্গে আমেরিকা এবং ইউরোপের চমৎকার মেলবন্ধন।

ডেভের মতো আরও অনেক বিদেশি, যারা শিকাগোতে কর্মসূত্রে আছেন, তারা সবাই এই শহরটায় নিজের মতো করেই থাকেন। কখনো তাদের কাছে মনে হয় না এটা অন্য দেশ। যেমন গ্রিক টাউনে গেলে সেখানকার বাড়ি-ঘর বা হোটেল রেস্তোরাঁয় সহজেই চোখে পড়বে গ্রিক ধাঁচের নান্দনিকতা। চায়না টাউনের প্রবেশমুখেই হলুদ রঙের প্রাধান্যে নির্মিত চাইনিজ বিশাল গেট। সেখানের রেস্তোরাঁগুলোয় নানা দেশের মানুষের ভিড়।

ডেভনে পা রাখলেই শুনতে পাবেন হিন্দি আর উর্দুর কলকাকলি। ভারতীয় প্রতিটি দোকানের সামনে কাচের ভেতর থেকে হিন্দু ধর্মীয় নানা প্রতীক যেমন গণেশের মূর্তি চোখে পড়বে। কাচের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলে আগরবাতির সুগন্ধ এড়ানো দায়। আর পাকিস্তানি দোকানের ভেতরে ঢুকলে সে দেশের পতাকা কিংবা কলেমা লেখা ব্যানার দেখতে পাবেন। অগুনতি ইংরেজি আর হিন্দি সাইনবোর্ডের ভিড় ঠেলে চোখ আটকে যায় বাংলায় লেখা ‘শাহজালাল স্টোর’ লেখা সাইনবোর্ডে। ভেতরে ঢুকে জানা গেল এর মালিক বাংলাদেশি। এই ডেভন এলাকার একটি সড়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে। চিত্রকলার অধ্যাপক রোনাল্ড কুলা যখন এই তথ্য জানালেন, তখন গর্বে বুকটা ভরে ওঠে। তিন ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঠান্ডায় জমে যাওয়া শরীরের ভেতরে টের পাই রক্তের একটা অদম্য প্রবাহ।  

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫