
সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর। ছবি- লেখক
আকাশে বর্ষার লুকোচুরি খেলা। এমন আবহাওয়ায় সবার কোথায় যেতে মন চায় জানি না, তবে আমার বারবার টাঙ্গুয়ার হাওরে যেতে মন চায়। গত বছর এমন সময়ে পরিচিত ভাই-বন্ধু মিলে আটজনের একটা গ্রুপ তৈরি করলাম। গন্তব্য সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর।
চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে সিলেটের উদ্দেশে রওনা দিলাম। আমাদের ট্রেন ছিল রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে। সারা রাত জেগে খোশ-গল্প করতে করতে ভোর ৬টায় সিলেট পৌঁছাই। ট্রেন থেকে নেমে স্টেশনেই ফ্রেশ হয়ে হালকা নাশতা করে নিলাম। আর চায়ের দেশে এসে চা পান করব না তা তো হয় না। চা খেয়ে রওনা দিলাম সুনামগঞ্জের উদ্দেশে। জেনে রাখা ভালো, সিলেট থেকে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ঘাটে যেতে প্রায় ৩ ঘণ্টা লাগে। আমরা দুই হাজার টাকা দিয়ে একটি লেগুনা ভাড়া করি। ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই চলে এলাম তাহিরপুর ঘাটে। এখানে নৌকা ঠিক করলাম, ভাড়া ১০ হাজার টাকা। নৌকাটি প্রথম দিন দুপুরে ছাড়বে এবং বিভিন্ন জায়গা ঘুরে এসে পরদিন সকালে আবার এই ঘাটেই নামিয়ে দেবে। নৌকাটি বেশ বড়, ১২ জনের থাকার ব্যবস্থা আছে। সেই সঙ্গে রয়েছে দারুণ একটি ছাদ।
টাঙ্গুয়ার হাওরে যেতে হলে অবশ্যই তাহিরপুর থানা থেকে অনুমতি নিতে হবে। থানা থেকে অনুমতি নিয়েই নৌকা ছাড়া হয়। আমার দায়িত্ব ছিল অনুমতি নেওয়ার কাজ। আর অন্য বন্ধুরা যায় বাজার করতে। নৌকায় ওঠার সময় অবশ্যই যত বেলা খাবার খাবেন সে পরিমাণ বাজার করে উঠবেন।
নৌকায় উঠে আর দেরি করলাম না। আমাদের প্রথম গন্তব্য ওয়াচ টাওয়ার। বিকেল ৩টার আগেই পৌঁছলাম ওয়াচ টাওয়ারে। ওয়াচ টাওয়ার থেকে চারদিকের দৃশ্য উপভোগ করলাম। পানিতে কিছুক্ষণ খুনসুটিও করলাম। গোসল সেরে নৌকায় উঠতে উঠতে মাঝি বললেন, খাবার তৈরি হয়েছে। ইলিশ মাছের দোপেঁয়াজা, ডাল, আলু ভর্তা, সালাদ আর সাদা ভাত। হাওরের মাঝখানে বসে এই খাবার যেন অমৃত।
খাবার খেয়ে সবাই জানালা দিয়ে হাওরের দৃশ্য অবলোকন করছি। এর মধ্যেই নৌকা চলছে, পরবর্তী গন্তব্য নীলাদ্রি লেকে। নীলাদ্রি লেকের পাড়ে নৌকা থামল। আমরা কিছুক্ষণ নীলাদ্রি লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। সেখানে বেশি সময় নষ্ট করলাম না। কারণ আমাদের লাকমা ছড়া যেতে হবে। একটি অটোরিকশা ঠিক করলাম। লাকমা ছড়ার ঝরনার ঠান্ডা পানিতে সারাদিনের সব ক্লান্তি দূর করে নিলাম। ঝরনায় সন্ধ্যা নামার আগ পর্যন্ত ছিলাম।
এরপর চলে এলাম নৌকায়। নৌকা হাওরের মাঝামাঝি কোথাও গিয়ে নোঙর করল। নৌকার ছাদে চলে গেলাম। হাওরের মাঝে, খোলা আকাশের নিচে আড্ডা দিতে দিতে রাত ১০টা। এমন সময় মাঝি গলা ছেড়ে আমাদের ডাকছেন খাবার খেতে। রাতের খাবার-মুরগির মাংস, পাতলা ডাল, আলু ভর্তা আর সালাদ। জম্পেশ খাবার হয়েছে।
খাবারের পর্ব শেষ করে রাতে সবাই আবারও আড্ডা দিলাম, বৃষ্টিতে ভিজলাম। প্রায় রাত ৩টায় সবাই ঘুমাতে গেলাম। বেশিক্ষণ ঘুমোতে পারিনি, ভোর ৬টায় আমাদের ডেকে দিল মাঝি। বলল, এবার আমরা ফিরে যাচ্ছি। চোখের পলকে সময় শেষ!