Logo
×

Follow Us

লাইফস্টাইল

নদীগুলোও হতে পারে পর্যটনকেন্দ্র

Icon

আমীন আল রশীদ

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১৭:২৯

নদীগুলোও হতে পারে পর্যটনকেন্দ্র

নদী মানেই সৌন্দর্যের আধার। ছবি: সংগৃহীত

পরিবার বা প্রিয়জনের সঙ্গে যখন কোথাও ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা হয়, তখন প্রথমেই মাথায় আসে কক্সবাজার, কুয়াকাটা, সুন্দরবন, বান্দরবান ইত্যাদির কথা। কিন্তু নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীগুলোও যে বিরাট পর্যটনকেন্দ্র; বিশেষ করে বর্ষায় যখন নদীগুলো ভরাযৌবনা হয়ে ওঠে, তখন নদীই হতে পারে ঘোরাঘুরির সুন্দর ঠিকানা। কেননা এই সময়ে বুড়িগঙ্গা ও তুরাগের মতো দূষিত নদীও নতুন রূপে সাজে। পানিতে দুর্গন্ধ তেমন একটা থাকে না। অতি বৃষ্টি ও বন্যায় কোনো কোনো নদীর দুকূল ছাপিয়ে যায়। কোথাও নদীভাঙনও হয়। সব মিলিয়ে বর্ষায় বাংলার নদীগুলোয় নানা ধরনের খেলা চলে। কিন্তু নদীর যে খেলা, নদীর সেই রূপ আমরা কতজন দেখি বা দেখতে যাই?

নদী মানেই সৌন্দর্যের আধার। পদ্মা মেঘনার মতো আয়তনে বিশাল নদীর এক রূপ, আবার পাহাড়ি এলাকার ভেতরে দিয়ে এঁকেবেঁকে চলা সর্পিল আকারের ছোট নদীগুলোর রূপ ভিন্ন। দেশের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের ছোট ছোট নদী ও খালগুলো ভরা বর্ষায় প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নের ফলে এখন এসব ছোট খাল ও নদীর তীরে মোটরসাইকেল বা ইজিবাইক নিয়েই ঘোরা যায়। আবার ছোট ছোট নৌকা বা ইঞ্জিনচালিত ট্রলারেও ঘুরে আসা যায় মাইলের পর মাইল। এ ধরনের পর্যটনে খরচও বেশ কম। নদী পর্যটন শুধু নদীবিধৌত অঞ্চলের সৌন্দর্যই নয়, বরং তীরবর্তী জনপদের মানুষ, ভাষা, সংস্কৃতি, খাদ্য, ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হতেও সহায়তা করে। 

কথা হয় জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান সারোয়ার মাহমুদের সঙ্গে। তিনি বলেন, নদী পর্যটন আসলে নদী সংরক্ষণেরও একটি উপায়। কেননা মানুষ যখন নদীর কাছে যাবে, নদীর সুন্দর রূপটি দেখবে, তখন নদীর সংকটও তার চোখে ধরা পড়বে। মানুষ যত বেশি নদীর সংকট সম্পর্কে জানবে, নদীর প্রতি তার ভালোবাসা ও সংবেদনশীলতা তত বাড়বে। সেই সঙ্গে মানুষের মধ্যে নদীর ব্যাপারে সচেতনতাও তৈরি হবে। 

বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. মনির হোসেন মনে করেন, নদী পর্যটন বিকাশের মধ্য দিয়ে তীরবর্তী মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। কেননা পর্যটকদের টার্গেট করে নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোয় গড়ে উঠতে পারে কমিউনিটি ট্যুরিজম। দেশ বিদেশ থেকে লোকেরা নদীতে ঘুরতে যাবেন এবং তীরবর্তী মানুষের বাড়িতে খাবেন এবং রাত্রিযাপন করবেন। বিনিময়ে ওই সব বাড়ির মানুষেরা অর্থ নেবেন, যা স্বাভাবিকভাবে বাণিজ্যিক হোটেল রেস্টুরেন্টের চেয়ে অনেক কম হবে। এতে করে ওই জনপদের মানুষ, তার ভাষা, খাদ্যসংস্কৃতির সঙ্গেও অন্য এলাকার মানুষের পরিচিত হওয়ার সুযোগ ঘটবে। 

অবশ্য নদী পর্যটনের প্রধান ঝুঁকি ঝড়ের মৌসুমে। এই সময়টুকু বাদ দিয়ে সারা বছরই পর্যটকরা নদী উপভোগ করতে পারেন। আবার প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সামগ্রী সঙ্গে থাকলে সাহসীরা ঝড়ের মৌসুমেও নদীতে ঘুরতে পারেন। নৌকা বা ট্রলার নদীর তীরে বেঁধে রেখে তার ভেতরে কিংবা নদীর তীরে তাঁবু টানিয়ে রাতযাপনও করতে পারেন। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে এই ধরনের পর্যটনের সুযোগ দিচ্ছে।

নদী পর্যটনের আরেকটা চ্যালেঞ্জ নিরাপত্তা। যারা সাঁতার জানেন না তাদের অনেকেই নদী ভ্রমণে ভয় পান। যদিও বছরের অধিকাংশ সময়ই শান্ত নদীতে নৌডুবির শঙ্কা নেই বললেই চলে। তবে নদীতে নৌকা ট্রলার নিয়ে না ঘুরেও নদী পর্যটন হতে পারে। 

বাংলাদেশের যেসব নিজস্ব সংস্কৃতি এখন ইন্টারনেটের কারণে বিলুপ্তির মুখে, নদী পর্যটনকে কেন্দ্র করে সেই স্থানীয় সংস্কৃতিরও পুনর্জাগরণ হতে পারে। বিশেষ করে বিদেশিদের জন্য নদীপাড়ের মানুষের জীবননির্ভর এসব সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড একটি আকর্ষণীয় বিষয় হতে পারে। সেজন্য উদ্যোগী হতে হবে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনকে।

গোটা বিশ্বই যখন নদীকেন্দ্রিক ইকো ট্যুরিজমকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে, সেখানে নদীমাতৃক দেশ হয়েও বাংলাদেশ যথেষ্ট পিছিয়ে। এর একটি বড় কারণ নদী দখল ও দূষণ। সড়ক যোগাযোগ উন্নত করতে গিয়ে দেশের অসংখ্য নদী ও খাল মেরে ফেলা হয়েছে বা তাদের বিপন্ন করা হয়েছে। ফলে এই জায়গায়ও অনেক কাজ করার আছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫