
সন্তানকে স্বনির্ভর করে তুলুন। ছবি: সংগৃহীত
‘মাথায় রাখি না উকুনে খাবে/মাটিতে রাখি না পিঁপড়ায় খাবে’-সন্তানের প্রতি মা-বাবার ভালোবাসা ঠিক এ রকম। সব রকমের প্রতিকূলতা থেকে আড়াল করে রাখতে চান সন্তানকে। তিল পরিমাণ কষ্ট যাতে ছুঁতে না পারে সে জন্য হাতে ও মুখে তুলে দেন সব। কিন্তু এই অতি ভালোবাসাই সন্তানের চলার পথকে প্রতিকূল করে তোলে। পরনির্ভর করে তোলে এবং স্বাবলম্বী হতে বাধা প্রদান করে। সে কারণেই কিছু ভালোবাসা বুকে চেপে রেখে সন্তানকে বাস্তবতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া উচিত। যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম স্বনির্ভর হয়ে ওঠে।
অনেক মা-বাবা আছেন সন্তানের না পারা নিয়ে গর্ব করেন। এটা পারে না, ওটা পারে না শুনতে আহ্লাদী হলেও সন্তানের জন্য ক্ষতিকর; যা একরত্তিদের মধ্যে কাজের প্রতি অনীহা এবং কর্মবিমুখতা বাড়ায়। এতে করে ভবিষ্যতে পথ চলতে গিয়ে তাদের ভেতর না পারার অজুহাতে অন্যের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার সত্তা বেড়ে ওঠে। যা হতে পারে বাস্তবজীবনে ভোগান্তির কারণ। এ কারণে শিশুদের মধ্যে যে কোনো কিছু পারতে হবে এমন মানসিকতা গড়ে তোলা উচিত। এতে করে ভেতরে আত্মবিশ্বাস ও স্বনির্ভরতা দুটিই গড়ে উঠবে। সন্তানকে কোনো কাজে দমিয়ে না রেখে উচিত তাকে লক্ষ্য পূরণে সাহায্য করা। যেন তার ভেতর একা চলার অভ্যাস গড়ে ওঠে।
নিজের কাজগুলো নিজে করার অভ্যাস গড়ে তোলাটা শিশুকে স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে খুবই সহায়ক। যেমন-নিজের কাপড়, স্কুলের ব্যাগ গোছানোর দায়িত্ব নেওয়া, কোথাও যাওয়ার সময় নিজের ব্যাগ গোছানো এসবে অভ্যস্ত করে তুললে ছোট থেকেই নিজেকে সামলাতে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে শিশুরা।
একরত্তি বয়স থেকেই ছোটখাটো দায়িত্ব পালন সম্পর্কে শিশুদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। নিজের কাজ নিজে করার উপকারিতা বোঝাতে হবে। কথা বলার জায়গা বিস্তৃত করতে হবে। যেন কোনো বিষয় নিয়ে অস্বস্তিতে না ভুগে শিশু মা-বাবার সঙ্গে আলোচনা করতে পারে। এতে যে কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনার টেবিলে বসার অভ্যাস ছোটবেলা থেকেই গড়ে উঠবে।
মেয়ে শিশুদের স্বনির্ভরতার দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। কেননা আমাদের সামাজিক ব্যবস্থার কারণে এমনিতেই নারীদের ভেতরে স্বনির্ভরতার বিষয়টি দুর্বলভাবে বেড়ে ওঠে। সে কারণে তাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ না করে ছোট থেকে অধিকার ও সামর্থ্য সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে যেন হীনমন্যতা পেয়ে না বসে। নিজেকে পরজীবী ভাবার পরিবর্তে যেন পরের আশ্রয় হয়ে ওঠার মানসিকতা নিয়ে বেড়ে ওঠে।
সারাক্ষণ পাঠ্যপুস্তকে চেপে ধরে না রেখে অন্য বইও পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন শিশুদের মধ্যে। এতে বিভিন্ন বিষয়ে সম্যক ধারণা তৈরি হবে। সেই সঙ্গে মানসিক বিকাশও ঘটবে, যা শিশুদের স্বনির্ভর করে তুলতে যথেষ্ট সহায়ক।
আবদার পূরণ করার পাশাপাশি অভাব সম্পর্কেও ধারণা দেওয়া উচিত শিশুকে। যাতে করে জীবন নামক মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ সম্পর্কে বাস্তব ধারণা নিয়ে বেড়ে ওঠে। এতে করে বাইরের পৃথিবীতে খাপ খাওয়াতে খুব একটা সময় লাগবে না। প্রতিকূল পরিবেশের সম্মুখীন হওয়ার সাহস ও আত্মবিশ্বাস বেড়ে উঠবে।
একাধিক সন্তান থাকলে বড় জনের উপর অন্যদের দেখভাল করার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিন। যাতে বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্ববোধও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এভাবে ছোট থেকেই টুকিটাকি কাজ করার অভ্যাস গড়ে উঠবে। এতে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করার মানসিকতা ও সাহস সঞ্চয় হবে; যা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে করে তুলবে স্বনির্ভর।