
প্রতীকী ছবি
প্রাত্যহিক জীবনে অনেক ক্ষেত্রেই ভুল করি, অন্যের মনে কষ্ট দিয়ে ফেলি; কিন্তু ভুল করার পর সহজে ক্ষমা চাইতে পারি না। ক্ষমা চাইতে ভাষার সঠিক ব্যবহার করতে পারি না। কেউ কেউ আবার মুখে ক্ষমা চাইলেও বাহ্যিক ব্যবহারের মাধ্যমে তা ফুটিয়ে তুলতে পারেন না। তাই নিজের ভুল বুঝতে পারলে আর আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার ক্ষেত্রে বাক্য ও শব্দ চয়ন এবং সঠিক ভঙ্গি সম্পর্কে ধারণা রাখা প্রয়োজন। ভুল বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষমা চাইতে আন্তরিকতার সঙ্গে দুঃখিত বলতে হয়।
তবে মুখে দুঃখিত বলা আর ব্যবহারের মাধ্যমে দুঃখ প্রকাশ করার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ‘নেগোসিয়েশন অ্যান্ড কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট রিসার্চ জার্নাল’-এ প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী ভালোভাবে ক্ষমা চাওয়ার সঙ্গে ছয়টি বিষয় সম্পর্কিত যেমন- অনুশোচনা, প্রকাশভঙ্গি, কী ভুল হয়েছে তা ব্যাখ্যা করা, দায়িত্বগ্রহণ, সংশোধনের চেষ্টা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা। এসব বিষয় একত্রে ক্ষমা চাওয়া বা দুঃখ প্রকাশের প্রক্রিয়াকে ফলপ্রসূ করে।
ভুল স্বীকার করে নেওয়া
নিজের ভুল বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্টভাবে তা স্বীকার করতে হবে। এটি ক্ষমা চাওয়ার প্রথম ধাপ। সামনে থাকা ব্যক্তির সামনে নিজের ভুল স্বীকার করে নিলে ভুল বোঝাবুঝির আশঙ্কা কমে যায়। এক সমীক্ষা অনুসারে, ক্ষমা চাওয়ার সময় ভুলের পেছনে থাকা উদ্দেশ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ঘটনা ব্যাখ্যা করা
ভুল স্বীকারের পরই ঘটনার সঠিক ব্যাখ্যা করা জরুরি। ওই ঘটনা ব্যাখ্যা করলে সামনে থাকা ব্যক্তির বুঝতে সুবিধা হয়। কী ঘটেছে সেটি ব্যাখ্যা করার সময় অজুহাত না দেখানোই ভালো।
অনুশোচনা প্রকাশ করা
ক্ষমা চাওয়ার ক্ষেত্রে নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক গবেষণায় দেখা যায়, অন্যরা নেতিবাচক অনুভূতির চেয়ে বরং অনুশোচনাকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। কারণ সামনে থাকা ব্যক্তি নেতিবাচক ধারণার চেয়ে অনুশোচনা শুনলে বেশি আবেগ্লাপুত হয়।
ভুলের দায়িত্ব নেওয়া
ভুল হয়ে থাকলে তা শোধরানোর ক্ষেত্রে অন্যের ওপর দোষ না চাপিয়ে নিজে সব দায়িত্ব নেওয়া উচিত। নিজের ক্রিয়াকলাপের দায়িত্ব নেওয়ার সময় আত্ম-সহানুভূতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে এমন একটা শৃঙ্খলা আছে, যা আত্ম-সহানুভূতি থেকে শুরু হয় এবং ভুল স্বীকারের দিকে ধাবিত হয়।
ভুল সংশোধন করা
ক্ষমা চাওয়ার পরে কীভাবে নিজের ভুল সংশোধন করা যায় সে সম্পর্কে অবশ্যই কথা বলতে হবে। পরিস্থিতি কীভাবে সংশোধন করতে পারেন- এই বিষয়েও কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ।
মন থেকে ক্ষমা চাওয়া
এটা ক্ষমা চাওয়ার চূড়ান্ত ধাপ। ক্ষমা চাইতে হবে মন থেকে। নিজের ব্যাখ্যা অনুযায়ী ক্ষমা করা হবে- এমনটা ধরে নেওয়া যাবে না। বড় ধরনের কোনো ভুল হয়ে থাকলে ক্ষমা পাওয়ার জন্য ধৈর্য ধরতে হবে এবং সামনে থাকা ব্যক্তিকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে।
ক্ষমা চাওয়ার সময় যেসব কথা বলবেন না
দুঃখিত যদি., দুঃখিত কিন্তু., দুঃখিত, আপনি, এটা একটা মজা ছিল, আমি এটা বোঝাতে চাইনি, কেন এটা এত বড় বিষয় হয়ে উঠবে, অবশ্যই, দুঃখজনক ইত্যাদি। তবে ভুল স্বীকার করা ভালো হলেও অনেক সময় ক্ষমা চাওয়া উচিত নয়। ‘দি ইউরোপিয়ান জার্নাল অব সোশ্যাল সাইকোলজি’তে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে না, তখন ক্ষমা না চাওয়া আত্মসম্মান বাড়িয়ে তোলে।