Logo
×

Follow Us

লাইফস্টাইল

নিজেই যখন নিজের যোগ্যতা নিয়ে সন্দিহান

Icon

অনিন্দ্য শুভ

প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১৪:২১

নিজেই যখন নিজের যোগ্যতা নিয়ে সন্দিহান

প্রতীকী ছবি

রাফির কর্মস্থল বদলানো প্রয়োজন। এরইমধ্যে দুই-এক জায়গা থেকে ডাক পেয়েছে। ব্যাটে-বলে মিললে যাবে; কিন্তু কর্মস্থল পাল্টানোর কথা মাথায় এলেই কেন যেন অজানা ভয় কাজ করে। এমন না যে, রাফি অদক্ষ। কাজের হিসাবে বর্তমান অফিসে বেশ সুনাম রয়েছে তার। তবু নিজের ওপর ভরসা রাখতে পারে না সে। বারবার ভাবে নতুন জায়গায় গিয়ে কাজ করতে পারবে তো! সব ঠিকঠাক থাকবে তো!  যদিও সে জানে সে যথেষ্ট পারদর্শী। তার পরও ভয় কাটে না। এ ছাড়া গত বছর প্রমোশন পাওয়ার পর সবাই যখন তাকে অভিনন্দন জানালো তখন সে উল্টো ভাবছিল এতটা কি তার প্রাপ্য? সে কি আসলেই যোগ্য এসবের? 

রাফির মতো এ রকম সমস্যায় ভোগা লোকের সংখ্যা কম না। অনেকেই আছেন, যারা নিজেরাই নিজেদের যোগ্যতা নিয়ে সন্দিহান। চিকিৎসাশাস্ত্র বলছে- এটি মূলত একটি রোগ, যার নাম ইমপোস্টার সিনড্রোম। যে কোনো অর্জন-সাফল্যকে তারা নিজেদের প্রাপ্য মনে করেন না। তারা বিশ্বাস করেন এটি যোগ্যতাবলে অর্জন করেননি, ভাগ্যক্রমে পেয়েছেন। এই সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের অধিকাংশের আজীবন এটি বয়ে বেড়াতে হয়। কেননা সমস্যাটি নিরাময়যোগ্য না। এ ছাড়া যাদের আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি রয়েছে, যারা মানসিকভাবে দুর্বল তাদের ওপর বেশি করে ভর করে এই সমস্যা। 

এই রোগাক্রান্তরা সবসময় নিজের ঘাটতি খুঁজে বেড়ায়। পেশা ও ব্যক্তিজীবনে পরিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও প্রশ্ন তোলে- আসলেই কি আমি যোগ্যতাসম্পন্ন? সেইসঙ্গে আরও একটি ভয় কাজ করে তাদের মধ্যে। সেটি হলো- পাছে লোকে কিছু জানে। এরা নিজের যোগ্যতা নিয়ে যেমন সন্দিহান তেমনই উদ্বিগ্ন তাদের ঘাটতির কথা, যোগ্যতার অভাবের কথা যদি বাকিরা জেনে যায় তবে কী হবে! এরকম দুশ্চিন্তায় নিমজ্জিত থাকে। এই সমস্যায় ভোগা মানুষদের ব্যক্তিজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সে তার কল্পিত ব্যর্থতাকে স্বাভাবিকভাবে নিতে চায়। সেইসঙ্গে বারবার সফলতার পর হঠাৎ ব্যর্থ হলে সেটাকেই প্রত্যাশিত মনে করে। ভাবে এটাই হওয়ার কথা ছিল। একইসঙ্গে এতদিনের সব অর্জনকে মিথ্যা মনে করে। এভাবে ইমপোস্টার সিনড্রোমের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছলে তা ভয়ানক আকার ধারণ করে। ব্যক্তি গভীর অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে, জীবনকে তার ভীষণ অর্থহীন মনে হতে পারে এবং শেষমেশ সে নিজের মধ্যেই গুটিয়ে যায়।  

এই রোগ থেকে মুক্তিতে সবচেয়ে প্রয়োজন চারপাশের মানুষের মানসিক সমর্থন বা সংবেদনশীলতা। অন্যথায় তাদের আত্মবিশ্বাস যেটুকু থাকে সেটুকুও তলানিতে চলে যায়। এ কারণে আশপাশের কারও মাঝে ইমপোস্টার সিনড্রোমের উপসর্গ দেখা দিলে আমাদের উচিত, তাদের বুঝিয়ে বলা, পাশে থাকা এবং তারা যে অনেকের চেয়ে বেশি যোগ্য, তা বুঝতে সক্ষম করে তোলা। তবেই এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। 

শিশুদের মাঝে যেন এই প্রবণতা গড়ে না ওঠে সেজন্য মা-বাবার সচেতন থাকা উচিত। সন্তানের অর্জন অবমূল্যায়ন করা মোটেই উচিত নয়। মা-বাবার অভ্যাস নিজের সন্তানকে অন্য শিশুদের সঙ্গে তুলনা করা। এতে শিশুদের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা নিজেদের ওপর আত্মবিশ্বাস হারাতে সাহায্য করে। যা ধীরে ধীরে তাকে করে তুলতে পারে ইমপোস্টার সিনড্রোমের ভুক্তভোগী। এই সমস্যা থেকে মুক্তির কোনো ওষুধ-পথ্য নেই। এর জন্য প্রয়োজন যত্নআত্তি, মানসিক সমর্থন। তবেই নিজের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার প্রবণতা কমতে পারে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫