
দাম্পত্য জীবনের কলহ। ছবি: সংগৃহীত
দ্বন্দ্ব জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। শত চেষ্টা করলেও একে এড়িয়ে থাকা সম্ভব নয়। সাধে কি রবি ঠাকুর লিখেছেন, ‘হিংসায় উন্মুক্ত পৃথ্বী, নিত্য নিঠুর দ্বন্দ্ব!’ মনের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব, ব্যক্তিবিশেষের মধ্যে সংঘাত, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বা একই গোষ্ঠীর মধ্যে বিভিন্ন ব্যক্তির সংঘাত, এগুলো সবই দ্বন্দ্বের নানান প্রকার। প্রত্যেক মানুষেরই একটা নিজস্ব মতামত, আদর্শ, স্বতন্ত্র বিশ্বাসের জায়গা থাকে। দুটি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিও আলাদা হয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই ভাবনাতেও পার্থক্য গড়ে ওঠে। হাতের পাঁচটা আঙুল তো কখনও সমান হয় না। মতবিরোধ তাই অবশ্যম্ভাবী। পারিবারিক ঝামেলা, কর্মক্ষেত্রে সংঘাত বা সম্পর্কে দ্বন্দ্ব থেকে জীবনে কুপ্রভাব পড়তে পারে। তাই অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।
এড়িয়ে যাওয়া
কিছু মানুষের প্রবণতা থাকে সমস্যা বা বিরোধ হলেই পারতপক্ষে এড়িয়ে যাওয়া। এটা কর্মক্ষেত্রে আরও বেশি প্রযোজ্য। এতে দ্বন্দ্বের অবসান ঘটবে না, কিন্তু ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে। বেশি উত্তেজিত বা আবেগপ্রবণ হয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ার চেয়ে চুপ থেকে বা এড়িয়ে গিয়ে পরিস্থিতি বিচার বিশ্লেষণ করা মঙ্গল। যা পাল্টানো ক্ষমতার বাইরে, সে ক্ষেত্রেও ঝামেলা থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
সমন্বয়
কারও সঙ্গে মনোমালিন্য হলে অনেক মানুষই তাড়াতাড়ি মিটমাট করে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এতে যদি তাদের নিজস্ব বক্তব্য তেমন গুরুত্ব না পায় তাহলেও তাদের তেমন ভ্রুক্ষেপ থাকে না। সমন্বয়টা আসলে লক্ষ্য, দ্বন্দ্বে অমঙ্গল। কিছু ক্ষেত্রে মানিয়ে নিলেই হয়তো সমস্যার সমাধান দ্রুত হয়। তবে তা বারবার এক তরফের থেকে হলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই মানিয়ে নেওয়ার সময় অবশ্যই নিজের অবস্থান পরিষ্কার রাখুন।
সহযোগিতা
বিশেষজ্ঞরা সহযোগিতাকে দ্বন্দ্ব মেটানোর সেরা উপায় বলে অভিহিত করেছেন। এতে একটা ভারসাম্য বজায় থাকে। এখানে নিজের লক্ষ্যকে বিসর্জন না দিয়ে অন্যের দিক থেকে তার সমস্যাটা বোঝার চেষ্টা করা এবং গভীরে গিয়ে সমস্যাকে শিকড় থেকে উপড়ে ফেলা। এতে সব পক্ষেরই মতামত গুরুত্ব পায়। তবে এটা সময়সাপেক্ষ, দ্রুত মুশকিল আসান হয় না।
প্রতিদ্বন্দ্বিতা
অতিরিক্ত প্রতিযোগিতাসুলভ মনোভাব বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উপকারের চেয়ে বেশি ক্ষতি করে। কিছু মানুষ কারও সঙ্গে তুমুল ঝামেলায় জড়ালেও নিজের লক্ষ্যে সর্বক্ষণ স্থির থাকেন। অন্যের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেওয়া তো দূর অস্ত, পাত্তাও দেন না। তাই তাদের সঙ্গে কাজের মাধ্যমে উত্তর দিয়ে বিরোধের ইতি ঘটানো যেতে পারে। নিজেকে সঠিক প্রমাণ করতে কখনো কখনো প্রতিযোগিতাও প্রয়োজন।
তবে দ্বন্দ্ব যেমনই হোক বা যেভাবেই তা দমনের উপশম বের করেন না কেন, মনে রাখতে হবে অন্যের মতামতকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করার সচেষ্টতা থাকতে হবে। তবেই ঘর থেকে অফিস কিংবা সন্তানের সঙ্গে জেনারেশন গ্যাপের মতপার্থক্যের ইতি ঘটবে।