Logo
×

Follow Us

লাইফস্টাইল

তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও

Icon

আমীন আল রশীদ

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৮

তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও

ভোলাগঞ্জের সাদা পাথরের রাজ্য।

সিলেটের ভোলাগঞ্জে সাদা পাথরের রাজ্য থেকে পরবর্তী গন্তব্য রাতারগুল। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সিলেটের এই সোয়াম্প ফরেস্ট বা জলাবন বেশ জনপ্রিয়। পর্যটকদের দারুণ আকর্ষণ। বাংলাদেশের একমাত্র মিঠাপানির এই জলাবন অবস্থিত সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায়। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য!

ভোলাগঞ্জ থেকে ফেরার পথে টুকের বাজারে একটি রেস্টুরেন্টে খেতে খেতে স্থানীয় এক সাংবাদিক জানালেন, এখন এই বিকেল ৪টার দিকে রাতারগুলে গিয়ে কিছুই দেখতে পারব না। কেননা গাড়ি রাতারগুল পর্যন্ত পৌঁছাতেই পারবে না। টানা ছুটির কারণে ওখানে পর্যটকের চাপ এত বেড়েছে যে, সেখানে গাড়ির লম্বা লাইন। রাজধানী ঢাকা শহরের মতো জ্যাম। এসব হুজ্জত পেরিয়ে রাতারগুলে পৌঁছাতেই হয়তো দিনের আলো নিভে যাবে। উপরন্তু এত মানুষের ভিড় ঠেলে ওখানে গিয়ে প্রকৃতির সান্নিধ্য খুব উপভোগ্যও হবে না।

ভ্রমণসঙ্গী সাইদুল দেশি মুরগির ঠ্যাংয়ে সজোরে কামড় দিয়ে আক্ষেপ করে বললেন, ‘তাইলে রাতারগুল বাদ?’ তার মন খারাপের অনুভূতি মাটিতে পড়ার আগেই ফ্লোর নিলেন স্থানীয় সাংবাদিক আবুল হোসেন। বললেন, ‘খাওয়া শেষ করেন। আপনাদের রাতারগুলের বাপের কাছে নিয়ে যাব।’

রাতারগুলের বাপ কে? বাপ এখানে সৌন্দর্য বুঝাতে। অর্থাৎ এটি এমন এক জায়গা যেখানে গেলে রাতারগুলে যেতে না পারার কষ্ট শেষ হয়ে যাবে। কী নাম তার? উৎমাছড়া। কত দূর? কাছেই। ১৫ কিলোমিটারের মতো। কিন্তু রাস্তা খারাপ। মাঝেমধ্যে গাড়ি থেকে নেমে হাঁটতেও হতে পারে। উপরন্তু বৃষ্টিতে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দও তৈরি হতে পারে। সেসব মাথায় নেওয়া যাবে না।

খাওয়া শেষ করে গাড়ি স্টার্ট নিয়ে পুনরায় ভোলাগঞ্জের দিকে যাত্রা শুরু করে। অর্থাৎ কিছুক্ষণ আগেই যেখান থেকে ফিরেছি। ভোলাগঞ্জের কিছু আগে একটি সরু রাস্তা ঢুকে গেছে হাতের ডান দিকে। সেদিকেই আমাদের গন্তব্য। চরার বাজারে গিয়ে গাড়ি যখন থামে, তখন সন্ধ্যা হয় হয়। ছবি তোলার মতো পর্যাপ্ত আলো নেই বলে মন দ্বিতীয় দফায় খারাপ। বাজারে সাংবাদিক আবুল হোসেনের একজন পরিচিত লোক সবাইকে চায়ের নেমন্তন্ন করলেও সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। কেননা গাড়ি থেকে নামার পরেও কয়েক মিনিট হেঁটে ওই স্বর্গে পৌঁছাতে হবে। আমাদের সামনে অন্ধকারের চোখরাঙানি। আমরাও হাঁটছি বেশ দ্রুত পায়ে। এবড়োখেবড়ো রাস্তা। ছোট-বড় পাথর। ফলে অসতর্ক হলে দুর্ঘটনার সমূহ শঙ্কা।

তারপর একটি উঁচু টিলায় দাঁড়িয়ে যখন বিশাল পাহাড়ের নিচে সুন্দর পাথুরে নদী আর তাতে ছোট-বড় অজস্র পাথর ছুঁয়ে বয়ে যাওয়া জলের ঝিরঝির শব্দ শুনি, তখন সময়ের সেই আক্ষেপ বারবার আহত করছিল, আহা আর একটা ঘণ্টা আগে কেন এখানে আসা গেল না!

অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে দ্রুত। আমরাও জুতা পায়ে দিয়েই হাঁটছি ঝিরির ভেতর দিয়ে। কোথাও গোড়ালিসমান, কোথাও হাঁটুসমান পানি। পানি এতই স্বচ্ছ যে ওই আধো অন্ধকারেও পানির নিচের পাথরগুলো জ্বলজ্বল করছিল। কোনো কোনো পাথর পিচ্ছিল। তাতে পা দিয়ে সঙ্গীদের কেউ কেউ পড়ে যান। ঝিরি পার হয়ে চলে যাই পাহাড়ের খুব কাছে। পাহাড়ের ওপারেই ভারতের মেঘালয়। তার মানে আমরা সীমান্তে। এখানে দাঁড়িয়ে হাতের বাম দিকে চোখে পড়ে একটা ঝুলন্ত সেতু। কী অসাধারণ। অথচ সেখানে যাওয়ার উপায় নেই। কেননা ওটা ভারতের সীমান্তে।

এই যে জলের ধারা, সেটি এসেছে ওপার থেকে। তার সঙ্গে চলে আসে বিচিত্র সব পাথর। নদী ও পাথরের কোনো পাসপোর্ট-ভিসা লাগে না। মানুষের লাগে। তবে পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই চলে যেতে পারবেন সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার একপ্রান্তে এই অপরূপ নিসর্গে। কাশ্মীর অথবা নিউজিল্যান্ডে যাওয়ার সাধ মেটাতে উৎমাছড়া হতে পারে একটি উত্তম বিকল্প। আর এখানে দাঁড়িয়ে বলতেই পারেন, ‘তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও, আমি এই বাংলার পারে রয়ে যাব।’ তবে সে জন্য ভোলাগঞ্জ থেকে এই স্পট পর্যন্ত রাস্তাটি চওড়া করা এবং তার আগে দ্রুত এটি সংস্কার করা জরুরি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫