
সম্পর্কে ফাটলের প্রতীকী ছবি
সম্পর্কে প্রত্যাশা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সে প্রত্যাশা যদি এমন হয় যে সম্পর্কের অন্য পাশের মানুষটা আপনার সব ধরনের প্রত্যাশা পূরণ করে ফেলবে বা আপনার ব্যক্তিত্ব ও চরিত্রের সঙ্গে না গেলেও সঙ্গীর সব প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে, সেটা অস্বাভাবিক বটে! দুটি মানুষ যখন ভালোবাসায়, প্রেমে জড়িয়ে যায় তখন এক ধরনের হানিমুন পিরিয়ড চলে। সেখানে অন্য এক অনুভূতির ভেতরে দুজনেই পাখা মেলে ওড়েন। দুজনই তখন কল্পনার রঙে নিজের মতো করে সাজিয়ে নেন। কিন্তু একবারও তারা ভাবেন না যে অপর পাশের মানুষটার সেই দক্ষতা বা সেই সামর্থ্যটুকু আছে কি না!
অনেকেই চরিত্রগতভাবে ভীষণ অন্তর্মুখী, তারা নিজেদের বিষয়ে খুব একটা বাইরের মানুষকে জানাতে চান না, তাদের ব্যক্তিগত বিষয়গুলো তারা নিজেদের ভেতর রাখতেই পছন্দ করেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলাও করে ব্যক্তিগত বিষয়গুলো জানাতে চান না। অন্যদিকে তার সঙ্গী বা সঙ্গিনী হয়তো অনেক বেশি এক্সট্রোভার্ট বা বহির্মুখী। সে নিজেদের যাপিত জীবনের ছোট ছোট রিলস বানিয়ে সামাজিকমাধ্যমে পোস্ট করতে ভালোবাসেন। এ ক্ষেত্রে এক্সট্র্রোভার্ট সঙ্গিনী হয়তো চান তার সঙ্গীও তার মতো করে সবকিছু প্রকাশ করুক। এই বিপরীতমুখী স্বভাবের কারণে প্রত্যাশা পূরণ নাও হতে পারে। এতে সম্পর্কে প্রভাব পড়তে পারে। তাই সম্পর্কে উভয়ের ব্যক্তিত্বকে বোঝা উচিত।
আবার যে মেয়েটি একা একা বড় হয়েছে তার কাছে যদি শুরুতেই তার জীবনসঙ্গী আশা করে ফেলেন যে যৌথ পরিবারের সকল সদস্যদের চাওয়া, তাদের পছন্দ বুঝে ফেলবে তাহলে এটি একটু অবাস্তবই হবে। হয়তো না বুঝেই হতে পারে, এমন ছোটখাটো ভুলগুলো মেনে না নিয়ে সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে দোষারোপের আঙুল তোলাটা সহজেই তৈরি করে সম্পর্কের দূরত্ব। আর সেই দূরত্ব থেকেই সম্পর্কে তৈরি হয় ফাটল।
দুটি মানুষ এক রকম হবে না, মানুষের ব্যক্তিত্বে, আচরণে ভিন্নতা থাকবে- এটা মেনেই মানুষটাকে শ্রদ্ধা করতে হবে, কখনো কখনো মেনে নিতে হবে, ক্ষমা করতে হবে। হয়তো স্ত্রী না বুঝেই কিছু করে ফেলে এবং সেটা নিয়ে পরিবারের অন্য সদস্যরা সমালোচনা করে, খুঁত ধরে তখন স্বামীর উচিত সবার আগে তার জীবনসঙ্গীর কাছ থেকে সত্যটা শোনা। সেটা না করে তিনি যদি সবার মতোই আচরণ করেন, সেটি স্ত্রীর মনেও ক্ষত তৈরি করে। ঠিক তেমনি স্বামী হয়তো খুব বেশি রোজগার করেন না; কিন্তু স্ত্রী প্রত্যাশা করলেন জন্মদিনে স্বামী তাকে হীরার নেকলেস কিনে দেবেন, ঠিক যেমনটি সিনেমায় দেখা যায়! যখন সেই সিনেমাটিক প্রত্যাশা পূরণ হয় না, তখন স্ত্রীর যতটা না মন খারাপ হয়, তার চেয়ে বেশি মন খারাপ হয় প্রত্যাশা পূরণ না করতে পারা স্বামীর।
যখন দুজন দুজনের ব্যক্তিত্বের বৈচিত্র্য ও ভিন্নতাকে শ্রদ্ধা করবেন, দুজন দুজনের অপারগতা, ভুলগুলোকে মেনে নিয়ে প্রত্যাশার চাপমুক্ত একটি যৌথ জীবন এগিয়ে নিয়ে যাবেন তখন সেখানে সম্পর্কে ফাটলের পরিবর্তে মজবুত এক বন্ধন গড়ে উঠবে।