
সুস্বাদু খাবার হাতের নাগালে থাকে। ছবি: সংগৃহীত
সবাই খেতে ভালোবাসি এবং সাধারণত আমাদের শরীর নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবার হজম করতে পারে। তবে অনেক সময় দেখা যায়, প্রয়োজনের অতিরিক্ত খেয়ে ফেলি। বিশেষ করে যদি কোনো সুস্বাদু খাবার হাতের নাগালে থাকে। অতিরিক্ত খাবার খেলে শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে এবং স্বাস্থ্যের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলে। এ ছাড়া বেশি পরিমাণ খাবার খেলে তা দেহে যেসব পরিবর্তন আনে তার মধ্যে একটি হলো আরো বেশি ক্ষুধা অনুভব করা। তবে এটি শুধু পাকস্থলীর আকার বাড়ে বলেই এমনটি হয় তা নয়।
বেশি পরিমাণ খাবার খাওয়ার পর ঝিমুনি ভাব, আলসেমি লাগা, পেট পুরো ভর্তি মনে হওয়া এবং হজমে সমস্যা হয়। ফলে পেটে গ্যাস, বমি ভাব দেখা দিতে পারে। যখন এত পরিমাণ খাবার হজম করতে পারে না, তখন এটি পরিপাকতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট করে। আবার বেশি পরিমাণ খাবার হজম করতে শরীরকে অনেক শক্তি খরচ করতে হয়, যার ফলে শরীরের অন্যান্য কার্যকলাপ কমে যায় এবং ক্লান্তি অনুভূত হয়।
কোনো দিন বেশি খাবার খাওয়ার পরও পরদিন আবার ক্ষুধার্ত অনুভব করি। তাহলে অতিরিক্ত খাওয়া কি পাকস্থলীর আকার বাড়িয়ে দেয়। এর উত্তর হচ্ছে, বেশির ভাগ মানুষের ক্ষেত্রে অনেক বেশি পরিমাণ খাবার খাওয়ার জন্য ক্ষুধা অনুভব করেন না। শুধু ক্ষুধার জন্যই ক্ষুধা অনুভব করেন। ক্ষুধার অনুভূতিটা আসলে কী- কোনো কিছু খাওয়ার জন্য যে তাড়না অনুভব করেন এবং তা দেহের ভেতরে বেশ কিছু শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনের কারণে হয়। ক্ষুধার্ত থাকলে পাকস্থলীর আকার পরিবর্তিত হয়। পাকস্থলী সংকুচিত হয় যখন খাবার হজম হয়ে অন্ত্রের দিকে যায়। পেটে গুড়গুড় শব্দ হয় যখন বাতাস আর খাবার একসঙ্গে নিচের দিকে নামতে থাকে। আর ক্ষুধা যে লাগতে যাচ্ছে এই শব্দ হচ্ছে তার প্রথম সংকেত।
শব্দ তৈরির পর পাকস্থলী আবার প্রসারিত হতে থাকে নতুন খাবার গ্রহণের প্রস্তুতি হিসেবে, আর এগুলো হয় হরমোনের প্রভাবে। পাকস্থলী থেকে ঘ্রেলিন ও হাইপোথ্যালামাস থেকে নিঃসৃত হয় এনপিওয়াই বা নিউরোপেপটাইড ওয়াই এবং এজিআরপি নামে ক্ষুধাজনিত হরমোন। পাকস্থলী খালি থাকলে ঘ্রেলিন নিঃসরিত হয় এবং এটি মস্তিষ্কে এনপিওয়াই ও এজিআরপির উৎপাদন শুরু করাতে ভূমিকা রাখে। এই দুটি হরমোনই ক্ষুধার অনুভূতি তৈরির জন্য দায়ী। আর লেপটিন হরমোন ক্ষুধা দমন করে। ঘ্রেলিনের মাত্রা বেড়ে যায়, তখন ক্ষুধা লাগে। খাওয়ার পরে লেপটিনের মাত্রা মস্তিষ্ককে বলে যে পাকস্থলী পূর্ণ। অতিরিক্ত খাওয়া এই ভারসাম্যকে ব্যাহত করে।
অতিরিক্ত খাবার খাওয়া একটি অভ্যাসের মতো, যা অনেকেই মনে করেন যে তারা চাইলে ছেড়ে দিতে পারবেন; কিন্তু অভ্যাসগত খাবার খাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষার কারণে কোনো একটি খাদ্যতালিকা অনুসরণ করাটা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। সাধারণত পাকস্থলীতে যে আলাদা হরমোন ব্যবস্থা রয়েছে, সেটি পাকস্থলী খালি হলেই মস্তিষ্ককে জানান দেয়। তার পরও মানুষের অভ্যাস অনুযায়ী দিনের নির্দিষ্ট সময় এবং ক্ষুধা লাগার শিক্ষাও এই হরমোন পেয়ে যায়। তাই দুপুরে যত বেশিই খাবার খান না কেন, রাতের খাবারের সময় হলে ক্ষুধার্ত অনুভব করবেন।