
টিনএজের চুল। ছবি: সংগৃহীত
কৈশোর কাল। বড় হয়ে গেছে হাত-পায়ে অথচ তার পরও সবার চোখ রাঙানি আর শাসন যেন কমে না। এ সময় হরমোন পরিবর্তনে মানসিক ও শারীরিক গঠনেও আসে ভিন্নতা। মেয়েরা বিশেষভাবে এ সময় নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে চলতে পছন্দ করে। অনেকে না জেনে-বুঝে অনেক ধরনের বাজে কসমেটিক্সের খপ্পরে পড়ে ত্বকের বারোটা বাজায়।
১৩ থেকে ১৯ -এই সময়টাই টিনএজ সময়। এ সময় ত্বকে এমনিতেই একটি আলাদা আভা থাকে। শৈশবের ঘোর লাগা চোখে অনেক বিস্ময় ও কৌতূহল খেলা করে যেন। শৈশবের শুককীট যেন আস্তে আস্তে প্রজাপতির পাখায় ওড়ে। তবে এ সময়ে হরমোনের কারণে কিশোর-কিশোরীরা অনেক ধরনের ত্বকের সমস্যায় পড়তে পারে। কৈশোর থেকেই নিজের যত্ন ও পরিচ্ছন্নতার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে।
ত্বক ও চুল নিয়মিত পরিষ্কার রাখা
গরমের সময় ত্বক অনেক বেশি তৈলাক্ত হয়ে পড়ে। আর শীতে হয়ে যায় শুষ্ক। মাথার চুলও ঘামে ভিজে অনেক সময় দুর্গন্ধ হয়, খুশকি বেড়ে যায়। শীতেও চুল হয়ে পড়ে শুষ্ক, নিস্তেজ এবং খুশকির সমস্যা বেড়ে যায়। তাই এ সময় ত্বক ও চুল নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। বাইরে থেকে এসে প্রথমেই ক্লেনজার ও ফেসওয়াশ দিয়ে ভালোভাবে মুখ পরিষ্কার করে নিতে হবে। যে টিনএজারদের ত্বক অত্যধিক তৈলাক্ত, তারা মুলতানি মাটির সঙ্গে শসার রসের প্যাক লাগাতে পারে। এতে করে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমে যাবে অনেকখানিই।
গোসলের অন্তত আধঘণ্টা আগে গোড়াসহ পুরো চুলে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন তেল লাগাতে হবে। এরপর মোটা তোয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়ে নিংড়ে নিয়ে তা ১০ মিনিট মাথায় পেঁচিয়ে রেখে ভালোমতো শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে।
মুখে ব্রণে মোটেও হাত দিয়ে খোঁটাখুঁটি করা যাবে না। হাত ও নখের জীবাণু ঢুকে ব্রন আরো বাড়বে, রেখে যাবে স্থায়ী দাগ। নতুন ব্রন উঠলে দু-একটি লবঙ্গ থেঁতলে নিয়ে সেখানে লাগিয়ে রাখলে ব্রন কমে যাবে। প্রথমে একটু জ্বলবে, এটি জীবাণু বিনাশে সহায়ক। এ ছাড়া সপ্তাহে এক দিন নিমপাতা ও হলুদ বেটে ত্বকে লাগাতে পারেন। নিমপাতার রয়েছে এন্টিসেপটিক গুণ, যা ত্বকের উপরিভাগের যেকোনো জীবাণু বা সংক্রমণের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
খাবার ও পানি
টিনএজারদের ত্বক এমনিতেই সুন্দর থাকে আর তাদের হাড়-মাংস-চামড়া প্রতিনিয়তই বাড়ে এ সময়। তাই ত্বকের জন্য তো বটেই, শারীরিক বৃদ্ধির জন্যও প্রচুর পুষ্টিকর খাবার যেমন- দুধ, ডিম, ফল, সবজি ও বিভিন্ন ধরনের বাদাম খেতে হবে। প্রচুর পানি পান করতে হবে। স্কুল বা কলেজে সব সময়ই পানির বোতল ব্যাগে রাখতে হবে।
মেকআপ ব্যবহারে সংযত হওয়া
এ বয়সে এমনিতেই ত্বক অনেক লাবণ্যময় ও কমনীয় থাকে। তাই খুব বেশি মেকআপ দৃষ্টিকটু দেখায়। অনেক সময় বিয়ে বা সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হয়তো কিশোরীরা একটু ভারী মেকআপ করে। তবে বাসায় ফিরে অবশ্যই মেকআপ ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ভালো একটি ক্লেনজার হলো অলিভ অয়েল বা নারকেল তেল। একটি তুলার মধ্যে তেল নিয়ে মেকআপ তুলে ভালো কোনো ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে।
স্বাস্থ্যকর রুটিন মেনে চলা
ত্বকের যত্নে এই সময় একটা রুটিন মেনে চলতে হবে। কোনো কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়। তাই ত্বকের চর্চাও করতে হবে পড়াশোনার ফাঁকে সপ্তাহে দুই বা এক দিন। না জেনে-বুঝে কোনো সৌন্দর্যসামগ্রী ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।
অনেক রাত জেগে পড়াশোনা, ফেসবুকিং, টিভি দেখার অভ্যাস বাদ দিতে হবে। না ঘুমিয়ে চোখের নিচে কালো দাগ ফেলে শসার টুকরা, আইস ক্রিম মাখলেও চোখের সৌন্দর্য ফিরে আসবে না। ত্বক ও চুলও ভালো থাকবে না। তেল-চর্বিযুক্ত খাবার না খেয়ে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে। বাইরে বের হলে পানির বোতল সঙ্গে রাখতে হবে, ছাতা ও সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। ঘুমানোর আগে মুখ ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
ত্বকে বেশি সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তার দেখাতে হবে। এ ক্ষেত্রে অন্য কারো থেকে পরামর্শ না নিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।