Logo
×

Follow Us

লাইফস্টাইল

স্টোনহেঞ্জ: প্রাচীন সভ্যতার এক রহস্যময় সাক্ষী

Icon

সাফিন আহমেদ

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:১১

স্টোনহেঞ্জ: প্রাচীন সভ্যতার এক রহস্যময় সাক্ষী

স্টোনহেঞ্জ পৃথিবীর অন্যতম ঐতিহাসিক এবং রহস্যময় স্থান।

স্টোনহেঞ্জ পৃথিবীর অন্যতম ঐতিহাসিক এবং রহস্যময় স্থান, যা প্রাচীন মানবসভ্যতার এক গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিমে, সোলসবেরি প্লেইনে অবস্থিত এই প্রাচীন স্থাপত্যের বয়স পাঁচ হাজার বছরেরও বেশি। যদিও এর প্রকৃত উদ্দেশ্য এখনো পুরোপুরি নির্ধারিত হয়নি, তবে এটি বহু যুগ ধরে আধ্যাত্মিক, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং সম্ভবত সৌর ক্যালেন্ডার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।

স্টোনহেঞ্জের কাঠামো দুটি প্রধান ধরনের পাথর দিয়ে তৈরি। বৃহত্তম পাথরগুলো, যা ‘সারসেন’ পাথর হিসেবে পরিচিত, প্রতিটি ১৩ ফুট (চার মিটার) উচ্চ এবং ২৫ টন পর্যন্ত ওজনের হতে পারে। ছোট পাথরগুলো, যা ‘bluestones’ নামে পরিচিত, যা ওয়েলসের আয়ারল্যান্ড থেকে আনা হয়েছিল। এই পাথরগুলোর স্থানান্তর এবং ব্যবহারের পদ্ধতি নিয়ে বিভিন্ন বিতর্ক রয়েছে, তবে এটি স্পষ্ট যে প্রাচীন মানুষ তাদের সময়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেছিল। বিশেষভাবে ব্লুস্টোনগুলোর স্থানান্তর অনেক দূর থেকে ঘটানো হয়েছিল, যা প্রাচীন পৃথিবীতে সম্ভাব্য প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা অনুযায়ী এক অভূতপূর্ব কর্মকাণ্ড ছিল।

স্টোনহেঞ্জের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এর সুনির্দিষ্ট সৌর সংযোগ। এর পাথরগুলো এমনভাবে সাজানো রয়েছে, যা শীতকালীন এবং গ্রীষ্মকালীন সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঠিকভাবে মিলে যায়। বিশেষত, শীতকালীন সর্বদক্ষিণ সূর্যাস্তের দিন, যখন সূর্য পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থান করে, স্টোনহেঞ্জের কেন্দ্রের দিকে সূর্যের রশ্মি প্রবাহিত হয়। এটি কৃষিকাজের জন্য সময়সূচি নির্ধারণে সহায়ক ছিল, যাতে কৃষকরা তাদের শস্য চাষের সময় এবং কৃষি কর্মকাণ্ডের জন্য সঠিক সময় জানতে পারতেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, স্টোনহেঞ্জের পাথরের বিন্যাস মূলত সূর্য এবং চন্দ্রের গতির ওপর ভিত্তি করে পরিকল্পিত হয়েছিল। প্রাচীন মানবরা এই সৌর ক্যালেন্ডারের সাহায্যে শুধু দিনের সময় নির্ধারণই করত না, বরং কৃষিকাজের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রস্তুতি এবং বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোর জন্যও সময় নির্ধারণ করত। এটি কৃষকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, কারণ তারা বছরের নির্দিষ্ট সময়ে শস্য উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হতে পারত।

স্টোনহেঞ্জের মহত্ব শুধু তার সৌর ক্যালেন্ডারের কারণেই নয়, এটি ছিল এক ধরনের আধ্যাত্মিক বা ধর্মীয় কেন্দ্রও। বিভিন্ন পুরোনো ও ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি আকাশের শক্তির সঙ্গে সংযোগের একটি মাধ্যম ছিল। ধারণা করা হয়, যে স্টোনহেঞ্জের পাথরের বিন্যাসের মাধ্যমে প্রাচীন সমাজ তাদের দেব-দেবীদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করত এবং তাদের শক্তির প্রতীক হিসেবে এটিকে শ্রদ্ধা করত। তাই এটি শুধু একটি স্থান ছিল না, বরং এক ধরনের আধ্যাত্মিক শক্তির কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো, যেখানে মানুষ ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও আচার-অনুষ্ঠান আয়োজন করত।

বর্তমানে স্টোনহেঞ্জ একটি বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে টঘঊঝঈঙ-এর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। এটি প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার পর্যটককে আকৃষ্ট করে এবং বিশেষ করে ঐতিহাসিক, প্রত্নতাত্ত্বিক এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী গবেষকদের মধ্যে বিশেষ আগ্রহ সৃষ্টি করে। স্টোনহেঞ্জের রহস্য উন্মোচনে গবেষণা এখনো চলছে, কারণ এর পাথরের কাঠামো, তাদের ব্যবহারের পদ্ধতি এবং আধ্যাত্মিক গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক কিছু অজানা রয়ে গেছে।

এ ছাড়া স্টোনহেঞ্জ শুধু একটি ঐতিহাসিক স্থান নয়, মানবসভ্যতার জ্ঞানের অগ্রগতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি প্রমাণ করে যে প্রাচীন মানুষ কতটা উন্নত ছিল এবং তাদের জীবনে প্রাকৃতিক ঘটনার সঙ্গে মিল রেখে সময় নির্ধারণের মতো জ্ঞান ও প্রযুক্তি তারা ব্যবহার করত।

স্টোনহেঞ্জ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক স্থান, যা প্রাচীন মানবসভ্যতার এক মহত্বপূর্ণ সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। এটি শুধু সৌর ক্যালেন্ডার বা আধ্যাত্মিক কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়নি, বরং এটি পৃথিবীজুড়ে মানব ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোর একটি চিহ্ন। স্টোনহেঞ্জের রহস্য এবং এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব আজও আমাদের জ্ঞান ও সংস্কৃতির গভীরতর চেতনাকে উদ্বুদ্ধ করে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫