
বাসন্তি রঙে সীমাবদ্ধ নেই চাহিদা। ছবি: সংগৃহীত
‘গগনের নভোনীলে মনেরও গোপনে/বাজে ঐ, বাজে ঐ, বাজে ঐ/পলাশেরও নেশা মাখি চলেছি দুজনে/বাসনার রঙে মিশি শ্যামলে স্বপনে/কুহু কুহু শোনা যায়/কোকিলের কুহু তান/ বসন্ত এসে গেছে,/বসন্ত এসে গেছে...’
ফেব্রুয়ারির শুরু থেকেই মনের গোপন কোণে বসন্তের গান বাজতে থাকে। প্রকৃতির রঙের সঙ্গে মিলিয়ে বসন কেমন হবে, পোশাকটি আরামদায়ক কি না, তার থিম-নকশা কেমন হবে, তা নিয়ে চিন্তার ভাঁজ কপালে ফেলে অনেকের। আর এখন তো একই দিনে ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত দিনের উদযাপন, তাই সাজ-পোশাক অনন্য হওয়া চাই। তা সে বসন্তের হলুদ-বাসন্তি রঙে সাজুক কিংবা ভালোবাসার লাল-মেরুন রঙে রাঙাক নিজেকে- সবক্ষেত্রেই প্রণয় বা অনুরাগ মুখ্য। তাই লাল কিংবা বাসন্তি রঙে সীমাবদ্ধ নেই চাহিদা। এ জন্য ফ্যাশন হাউস থেকে শুরু করে অনলাইন-অফলাইনের ছোট-বড় সব ব্র্যান্ড ক্রেতাদের চাহিদা পূরণে নিয়ে আসে বাহারি পোশাক। প্রতিবারের মতো এবারও আড়ং, কে-ক্র্যাফট, বিশ্বরঙ, অঞ্জন’স, লা রিভ, রঙ বাংলাদেশসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডে এরই মধ্যে বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসের পোশাক চলে এসেছে। শুধু শাড়ি, পাঞ্জাবি ও সালোয়ার-কামিজই নয়, লং-কুর্তি, রেগুলার কুর্তি, টপস, কাফতান, টিউনিক, টপস-স্কার্ট, ছেলেদের জন্য রেগুলার ও ফিটেড পাঞ্জাবি, শার্ট, কটি এবং শিশুদের জন্য নানা ধরনের পোশাক নিয়ে এসেছে ব্র্যান্ডগুলো। এনেছে ম্যাচিং ফ্যামিলি পোশাকও।
বিশ্বরঙের স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার বিপ্লব সাহা জানান, এবারের বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসের আয়োজনে হলুদ, বাসন্তী, লাল, কমলা, সাদার মিশেলে পোশাক আনা হয়েছে। পোশাক অলংকরণের মূল উপাদান হিসেবে প্রকৃতি আর ভালোবাসার বিভিন্ন সিম্বল রাখা হয়েছে। শীতের শেষবেলায় পোশাকে ব্যবহার করা হয়েছে সুতি ও খাদি কাপড়। শাড়ি, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, উত্তরীয়, মগ ইত্যাদিতে তুলে ধরা হয়েছে
প্রকৃতির ফুল, পাতা, গাছসহ প্রকৃতিরই বিভিন্ন অনুষঙ্গ। পাশাপাশি ভালোবাসার বিভিন্ন সিম্বলিক উপাদান এসেছে ডিজাইনের অনুষঙ্গ হিসেবে। কাজের মাধ্যম হিসেবে এসেছে টাইডাই, ব্লক, বাটিক, অ্যাপলিক, কাটওয়ার্ক, স্ক্রিন প্রিন্ট ইত্যাদি।
চিরায়ত রঙের পাশাপাশি অন্যান্য রঙের প্রাধান্য : বসন্তের প্রথম দিনের জন্য কাঁচা হলুদ, বাসন্তি, কমলা, গাঢ় সবুজ, কলাপাতা সবুজসহ চিরায়ত বিভিন্ন রঙের পোশাক এনেছে ব্র্যান্ডগুলো। ভালোবাসা দিবসের জন্য লাল, খয়েরি, মেরুনকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি সাদা, ম্যাজেন্টা, মভ, নীল, বেগুনি ও অন্যান্য রঙের সংমিশ্রণ রাখা হয়েছে।
বাহারি থিম, বৈচিত্র্যময় নকশা : ‘রং
বাংলাদেশ’-এর স্বত্বাধিকারী সৌমিক দাস জানান, বসন্ত বাঙালির অন্যতম উৎসব। আর সেই উৎসবের পোশাক ডিজাইনে এবার থিম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ‘আমেরিকান নেটিভ পটারি’ বা আমেরিকান আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিভিন্ন নকশাকে, যা সেই অঞ্চলে মূলত মৃৎশিল্পের নকশা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
অনলাইন উদ্যোগ ‘হরিতকী’র কো-ফাউন্ডার অনিক কুণ্ড বলেন, ‘আমরা শাহবাগের ফুলের দোকানের থিমে শাড়ি করেছি। শাড়িতে নীলের শেডগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে মাল্টিকালারে কাজ করা হয়েছে। নকশিকাঁথার থিমে প্যাচওয়ার্ক ডিজাইনে সাদা ও হলুদ রঙের দুটি শাড়ি এনেছি। রিকশার মোটিফ নিয়ে হলুদ রঙের শাড়ি করা হয়েছে। জমিনে হলুদ ও পাড় মাল্টিকালার করা হয়েছে। আদিবাসী থিম, আদিবাসী নৃত্যকলা ডিজাইন, সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা, সন্দেহর প্রচ্ছদ, ওয়ার্লি চিত্রকলা, হাতি ও বিভিন্ন ফুলের থিমে নকশাও করেছি।’
আরামদায়ক ফেব্রিক : ব্যতিক্রমী নকশার পাশাপাশি ফেব্রিকেও আছে বৈচিত্র্য। হাফসিল্ক, কটন, জ্যাকার্ট কটন, মারসালাইস কটন, স্লাব ভিসকস, খাদি, লিনেন, সিল্ক, অরগাঞ্জা, ধুপিয়ান, টু-টোন কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে। ফ্লোরাল, ট্র্যাডিশনাল, মানডালা, ওরিয়েন্টাল, মিক্সড মোটিফ, মোগল, বেলারুশ, জামদানি ইত্যাদি নানা মোটিফ ব্যবহার করা হয়েছে পোশাকে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ও ডিজিটাল প্রিন্টও লক্ষ্যণীয়।