
আত্মবিশ্বাস তৈরির মূল সময় হলো শিশুকাল। ছবি: সংগৃহীত
প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিত্ব ফুটে ওঠে তার আত্মবিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করেই। একজন আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তি সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে স্বমহিমায়। আর এই আত্মবিশ্বাস তৈরির মূল ভিত স্থাপিত হওয়ার সময় হলো শিশুকাল। ছোটবেলা থেকেই একটি শিশুকে নিজের প্রতি আস্থা রাখা এবং আত্মবিশ্বাসী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য মা-বাবার দায়িত্ব অনেক বেশি। এ বিষয়ে মা-বাবার করণীয় ও বর্জনীয় রয়েছে অনেক কিছু।
শিশুকে উৎসাহ দিন: সন্তানের যেকোনো কাজের প্রথম প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করুন। তার প্রথম আঁকা বা প্রথম অক্ষর লেখা। তার এই কাজে তাকে প্রশংসা করুন, উৎসাহ দিন। এতে করে শিশুটির নিজের প্রতি আস্থা বাড়বে এবং সে নিয়মিত অনুশীলন করবে।
ছোট ছোট কাজে দায়িত্ব দিন: দৈনন্দিন কাজের মধ্যে থেকে তাকে ছোট ছোট দায়িত্ব দিন। ছোট ভাই-বোন থাকলে তাকে এভাবে বলতে পারেন- ‘তুমি খেয়াল রেখ, ভাইয়া যেন খাট থেকে পড়ে না যায়।’ এতে করে শিশু নিজে উৎসাহিত হয়ে কাজটি করতে চাইবে। এখানে সে বাড়ির বড়দের মতোই নিজেকে ভাবতে শুরু করে। তার মধ্যে দায়িত্ব গ্রহণের অভ্যাস তৈরি হবে।
বয়স উপযোগী কাজ দিন: শিশুকে কখনই তার আয়ত্তের বাইরের কোনো কাজ দেওয়া উচিত নয় এবং তার কাছ থেকে সব সময় শতভাগ সফলতা আশাও করা ঠিক নয়। তাকে সে ধরনের কাজই দিন, যা তার বয়স ও সামর্থ্যরে সঙ্গে যায়।
কারো সঙ্গে তুলনা নয়: শিশুর আত্মবিশ্বাস তৈরিতে সবচেয়ে বড় যে অন্তরায়, তা হলো অন্যের সঙ্গে শিশুর তুলনা করা। প্রতিটি মানুষেরই রয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট্য। কারো হয়তো খুব সহজেই কোনো বিষয় আত্মস্থ করার ক্ষমতা রয়েছে। কেউ বা ধীরে শেখে। ফলে একজনকে অন্যজনের সঙ্গে তুলনা করা কখনই উচিত নয়। এটি শিশুর মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
শিশুর কৌতূহল মেটানোর চেষ্টা করুন: কৌতূহল শিশুর খুবই সাধারণ ও সহজাত একটি বিষয়। চেষ্টা করুন শিশুর কৌতূহলকে যথাযথভাবে নিবারণ করতে। কোনো মতেই তা দমনের চেষ্টা করা উচিত নয়।
নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ দিন: আত্মবিশ্বাস তৈরির জন্য শিশুকে তার দক্ষতার জায়গাটা বোঝাতে হবে। এটি বোঝানোর জন্য তাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ দিন। একটা মোটা বই হাতে দিয়ে হয়তো তাকে বললেন, দেখি তুমি এটা টেবিলে রেখে আসতে পার কি না? শিশুটি যখন বইটি জায়গামতো রেখে আসতে পারবে, তখন সে তার সামর্থ্য সম্পর্কে জানবে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়বে। ফলে সে এমন চ্যালেঞ্জ সহজেই লুফে নেবে।
সমালোচনা নয়, মতামত প্রকাশ করুন: নেতিবাচক সমালোচনা বরাবরই আত্মবিশ্বাস তৈরির ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়। সন্তানের কাজের কোনো ভুল হলেও সেটি ধরিয়ে দিন ইতিবাচকভাবে। তার কাজের সরাসরি সমালোচনা না করে এ কাজটি সে সঠিকভাবে কী করে করতে পারত সে বিষয়ে পরামর্শ দিন। ভুল থেকেই শিক্ষাগ্রহণ করতে শেখান। এতে তার আত্মপ্রত্যয় বাড়বে।
সন্তানকে নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ এড়িয়ে চলুন: সন্তানের কাছে তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। তোমার রেজাল্ট নিয়ে আমি খুবই চিন্তিত। তুমি এই কাজটা ভালোভাবে পারবে তো?-এমন সংশয়মূলক কথা সন্তানের মধ্যে এক ধরনের ভয় সৃষ্টি করবে। শিশুর আত্মবিশ্বাসের ভীত নাড়িয়ে দিতে এই সংশয়ই যথেষ্ট। সন্তানকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে হলে অভিভাবক হিসেবে এ বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
অভিভাবকই যখন হিরো: প্রতিটি সন্তানের কাছে তার মা-বাবাই হিরো। সে তার মা-বাবাকে আদর্শ মেনে নিয়ে অনুসরণের চেষ্টা করে। তাই সন্তানকে নিজের ভালো দিকগুলো শিক্ষা দিন। যেকোনো কাজ সহজ করে করার উপায় শেখান। কেননা অভিভাবকের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষা সে সারা জীবন মনে রাখবে।
জীবনে পরিশ্রমের গুরুত্ব বোঝান: ছোট বয়স থেকেই সন্তানকে জীবনে পরিশ্রমের গুরুত্ব বোঝান। পরিশ্রম করে জীবনে সফলতা পেয়েছে এমন ব্যক্তিদের গল্প শোনান। শিশুকে এটিও শেখাতে হবে যে, পরিশ্রমের বিকল্প নেই। এ জন্য পরিশ্রমে উৎসাহ দিতে হবে।
কঠোরতা বর্জন করুন: শিশুকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য অভিভাবককে কখনো কখনো কঠোর হতে হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, আপনার কর্তৃত্ব যেন অধিক কঠোরতায় রূপ না নেয়। কঠোরতা সন্তানের জন্য ক্ষতির কারণও হতে পারে। এটি তাকে আত্মবিশ্বাসী না করে উল্টো ভীত করে তুলতে পারে।