Logo
×

Follow Us

লাইফস্টাইল

রোমাঞ্চপ্রেমীদের প্রিয় এক বাঁশের সেতু

Icon

তাবাসসুম প্রীতি

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৫, ১০:০১

রোমাঞ্চপ্রেমীদের প্রিয় এক বাঁশের সেতু

বাঁশের সেতু। ছবি: সংগৃহীত

বাঁশের সেতুর কথা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে খাল বা নালার ওপর দুটি বাঁশের তৈরি পথ। তবে আজ যে বাঁশের সেতুটির কথা বলব দূর থেকে দেখলে মনে হতে পারে ভিন্ন কায়দায় সাজানো কয়েকশ কাঠি। তবে কাছে গেলেই ভুল ভাঙবে, কাঠি নয়, এটি আসলে বাঁশের তৈরি আস্ত সেতু! অদ্ভুত এই বাঁশের সেতুটির দেখা মিলবে কম্বোডিয়ায়। বিশ্বের দীর্ঘতম বাঁশের সেতু হিসেবে পরিচিত কম্বোডিয়ার এই সেতুটি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম দীর্ঘ নদী মেকং। সমগ্র এশিয়ার মধ্যে দৈর্ঘ্যে যার অবস্থান তৃতীয়। এ নদীর ওপরই তৈরি হয়েছে বাঁশের অদ্ভুত এ সেতু। মেকং নদীর বুকে বাঁশের তৈরি কোহ পেন সেতুটি  স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক। কম্বোডিয়ার এই সেতুটি প্রতি বছর শুকনা মৌসুমে নির্মাণ করা হয় এবং বর্ষা শুরুর আগে খুলে ফেলা হয়।

মিয়ানমার, লাওস, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া আর ভিয়েতনামের দক্ষিণ অংশকে ছুঁয়ে যাওয়া মেকং নদীটি প্রায় পাঁচ হাজার কিলোমিটার বিস্তৃত। আর এ নদীর বুক চিরে জেগে উঠেছে কোহ পেন দ্বীপ। কম্বোডিয়ার ষষ্ঠ বৃহত্তম শহর ক্যাম্পং চ্যামের সঙ্গে কোহ পেন দ্বীপটির যোগসূত্র রক্ষার একমাত্র দায়িত্ব প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁশের এই সেতুটির। 

প্রতি বছর বর্ষার পর যখন মেকং নদীর পানি কমে যায় তখনই শুরু হয় সেতু তৈরির নতুন আয়োজন। সেই সময়ে অসংখ্য সরু বাঁশ লম্বালম্বিভাবে পুঁতে দেওয়া হয় নদীর ক্লেদাক্ত গর্ভে। কিছু বাঁশ থাকে আড়াআড়িভাবে। তার ওপর বাঁধা হয় সেতুর পাটাতন। দৈর্ঘ্যে সেতুটি প্রায় এক কিলোমিটার হয়। সেই সঙ্গে যথেষ্ট প্রশস্ত যাতে মোটরসাইকেল, সাইকেল এমনকি হালকা যানবাহন চলতে পারে। কোহ পেন বাঁশের সেতুর সবচেয়ে চমকপ্রদ দিক হলো এর পুনর্ব্যবহারযোগ্যতা। বর্ষার সময় নদীর স্রোত এতটাই প্রবল হয়ে ওঠে যে বাঁশের সেতুটি টিকে থাকতে পারে না। তাই স্থানীয়রা বর্ষার আগে সেতুটি খুলে ফেলে, বাঁশ সংরক্ষণ করে রাখে এবং পরের বছর নতুন করে সেটি নির্মাণ করে। এই পদ্ধতিটি পরিবেশবান্ধব। কারণ এতে বাঁশের অপচয় কম হয় এবং বারবার নতুন কাঠামো তৈরি করা যায়।

কাদামাটিতে ডুবে থাকা বাঁশের খুঁটিতে যানবাহন চলাচলের একটু চাপ পড়তেই সেতুটি কেঁপে ওঠে। নদীর জল ছিটকে পিচ্ছিল করে দেয় ওপরের অংশ। অনভ্যস্ত মানুষের পক্ষে তখন ভারসাম্য বজায় রাখা দায়। নদীর ঢেউতে দুলতে দুলতে কোনো রকমে অন্য পারে পৌঁছাতে তাই একটু কসরতই করতে হয়। আর ঠিক এ বিষয়টিই আকৃষ্ট করে রোমাঞ্চপ্রিয় পর্যটকদের। এই অ্যাডভেঞ্চারের অভিজ্ঞতা নিতে তাই প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এসে উপস্থিত হয় মেকং নদীর ধারে। কিন্তু সেতুতে হাঁটার জন্য রীতিমতো টাকা খরচ করতে হয় তাদের। সেতু পার হতে দেশীয় লোকেদের জন্য ফি দিতে হয়, সাধারণত ২৫ সেন্ট। কিন্তু বিদেশি পর্যটকদের কাছ থেকে নেওয়া হয় তার ৪০ গুণ। এই অর্থই সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও পুনর্নির্মাণে ব্যয় হয়। বাড়তি পয়সা গুনতে হলেও বিদেশি পর্যটকদের কাছে এটি দারুণ আগ্রহের বিষয়। মেকং নদীর ওপর বাঁশের সেতু দিয়ে হাঁটা বা যানবাহন চালানোর অভিজ্ঞতা সত্যিই ব্যতিক্রমী। মাঝেমধ্যে দু-একটি বাইক ইচ্ছাকৃত পাশ দিয়ে চলে গিয়ে বাড়িয়ে দেবে সেতু পেরোবার মজা। পর্যটকদের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য স্থানীয়রা তাই বিভিন্ন ধরনের বাজার ও খাবারের দোকান স্থাপন করে, যা এলাকার অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে।

পঞ্চাশ বছর পুরোনো সেতুটির প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে আসছে। বিকল্প ভাবা হচ্ছে আধুনিক কংক্রিটের সেতুর। মেকং নদীর  বুকে  কোহ পেন সেতুটির দুই কিলোমিটার দক্ষিণে তৈরি হচ্ছে অত্যাধুনিক সেতু। প্রায় ৩০ টনের কাছাকাছি বহনক্ষক্ষমতাসম্পন্ন সেতুটি পার হতে লাগবে না কোনো টাকা। নিত্য বাঁশের সেতুটি ব্যবহারকারীদের জন্য সুখবর হলেও, দুশ্চিন্তার ভাঁজ দ্বীপবাসীর কপালে। বিপদের মুখে তাদের অর্থনীতি। অনেকে মনে করেন, বাঁশের সেতুটি ঐতিহ্যের অংশ হওয়ায় এটি সংরক্ষণ করা উচিত। তা ছাড়া, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থাপনার দৃষ্টিকোণ থেকেও এটি গুরুত্বপূর্ণ। কম্বোডিয়ার বিস্ময়কর স্থাপনা কোহ পেন বাঁশের সেতুটি প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্কের এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ। প্রতি বছর এটি নতুনভাবে গড়ে ওঠে, স্থানীয় জনগণের দক্ষতা ও ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবে টিকে থাকে। এখনো অবশ্য তারা আশায় যে পর্যটকরা নিশ্চয়ই আসবেন এখানে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫