ঈদ মানেই বর্ণিল সাজ, নতুন পোশাক আর উৎসবের আমেজ। আরামদায়ক কাপড়, নকশায় সূক্ষ্ম কারুকাজ, উজ্জ্বল ও প্যাস্টেল রঙের সংমিশ্রণ এবং ফিউশন স্টাইলের পোশাক এবারের মূল আকর্ষণ। লিখেছেন সুবর্ণা মেহজাবীন।

প্রতিবারের মতো এবারও ঈদের ফ্যাশনে এসেছে নতুন ট্রেন্ড, যেখানে ঐতিহ্যবাহী পোশাকের সঙ্গে আধুনিকতার ছোঁয়া যুক্ত হয়েছে। দেশীয় সংস্কৃতি, আবহাওয়া ও বর্তমান ফ্যাশন প্রবণতার কথা মাথায় রেখেই সব ফ্যাশন হাউসে দেখা যাচ্ছে বর্ণিল ঈদের পোশাক।

আরাম ও আভিজাত্যের সংমিশ্রণ : ফ্যাশন হাউসগুলো ঘুরে দেখা গেল, এই বছর ঈদের পোশাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে আরামদায়ক কাপড়ের ওপর। গরমের কথা মাথায় রেখে সুতি, মসলিন, লিনেন, কাতান, তসর সিল্ক, ধুপিয়ান, জ্যাকার্ড ও নরম জর্জেট কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে পোশাকে। হালকা ওজনের হওয়ায় এগুলো আরামদায়ক এবং দীর্ঘক্ষণ পরলেও স্বাচ্ছন্দ্য বজায় থাকে। বিশেষ করে মেয়েদের পোশাকে হ্যান্ডলুম কাপড় ও নরম সিল্কের ব্যবহার বেশি দেখা যাচ্ছে, যা ঐতিহ্যবাহী এবং আধুনিক- দুই ধরনের ফ্যাশনপ্রেমীদেরই পছন্দ হবে।

নকশায় বৈচিত্র্য : এবারের ঈদ ফ্যাশনে নকশার ক্ষেত্রে দেশীয় ঐতিহ্যের পুনরুজ্জীবন ঘটেছে। ব্লক প্রিন্ট, স্ক্রিন প্রিন্ট, ডিজিটাল প্রিন্ট, বুটিক ও হস্তশিল্পের কারুকাজ যুক্ত পোশাকগুলো বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে। কারচুপি, জারদৌসি, নকশী কাঁথার সূচিকর্ম এবং অ্যাম্ব্রয়ডারির কাজ বেশ চলতি ধারা হিসেবে দেখা যাচ্ছে। কামিজ ও শাড়িতে সূক্ষ্ম হ্যান্ড অ্যাম্ব্রয়ডারি এবং মুক্তা-চুমকির কাজ নতুন মাত্রা যোগ করেছে। পুরুষদের পাঞ্জাবিতে মিনিমালিস্টিক অ্যাম্ব্রয়ডারি ও ব্লক প্রিন্টের চল দেখা যাচ্ছে, যা ক্লাসিক অথচ ট্রেন্ডি।

উজ্জ্বল ও ম্যাচিউরড টোনের মিশ্রণ : এবারের ঈদ ফ্যাশনে উজ্জ্বল রঙের পাশাপাশি ম্যাচিউরড ও প্যাস্টেল টোনের ব্যবহার চোখে পড়ার মতো। নারীদের পোশাকে গাঢ় নীল, রুবি লাল, মেরুন, পান্না সবুজের পাশাপাশি হালকা পিচ, পাউডার ব্লু, ল্যাভেন্ডার, বেবি পিঙ্কের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে ফিউশন স্টাইলের পোশাকগুলোতে হালকা রঙের সঙ্গে গাঢ় রঙের কনট্রাস্ট বেশ জনপ্রিয়। পুরুষদের পাঞ্জাবি ও ফতুয়ায় সাদা, অফ-হোয়াইট, অলিভ, ধূসর ও নীলের ব্যবহার ট্রেন্ডে রয়েছে।

ট্র্যাডিশনাল ও ফিউশন লুকের সমন্বয় : স্টাইলের দিক থেকে এবারের ঈদ ফ্যাশনে ফিউশন লুকের আধিপত্য দেখা যাচ্ছে ব্র্যান্ডগুলোতে। মেয়েদের কামিজে লং ফ্লেয়ারড কাট, এ-লাইন এবং কুর্তা স্টাইল এ বছর বেশ জনপ্রিয়। পাশ্চাত্য ঢঙের কিছু কাট, যেমন অ্যাসিমেট্রিক্যাল হেমলাইন, বেল স্লিভ, কেপ ডিজাইন ইত্যাদি সংযোজিত পোশাকও চোখে পড়ার মতো। পুরুষদের ফ্যাশনেও এসেছে নতুনত্ব। সাধারণ পাঞ্জাবির পাশাপাশি লম্বা কুর্তা, চায়নিজ কলার, সাইড স্লিট ও স্ট্রেট কাট পাঞ্জাবি বেশি চলছে। আরামদায়ক ফ্যাশনের জন্য কটন ও লিনেনের পাঞ্জাবি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে, যা ট্র্যাডিশনাল এবং ক্যাজুয়াল লুকের সঙ্গে সমানভাবে মানিয়ে যায়।

ঈদের ফ্যাশনে আধুনিকতার ছোঁয়া : ঈদ ফ্যাশনে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন আসছে, কিন্তু ঐতিহ্যের গুরুত্ব কখনো কমে না। তাই এই বছরও পোশাকের নকশা, রং এবং কাটিংয়ে ট্র্যাডিশনাল ও আধুনিকতার সমন্বয় দেখা যাচ্ছে। ঈদ আনন্দকে আরো রঙিন করতে নিজের পছন্দ অনুযায়ী ট্রেন্ডি ও আরামদায়ক পোশাক বেছে নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।