
বর্তমান যুগে ‘পান্ডা প্যারেন্টিং’য়ের পন্থা বেছে নিচ্ছেন অনেকেই। ছবি: সংগৃহীত
পরিবর্তনের যুগে শিশুকে বড় করে তোলা বিরাট চ্যালেঞ্জ। কেউ কেউ এই বিষয়ে কঠোর হন আবার কেউ কেউ বন্ধুর মতো আচরণ করেন। বর্তমান যুগে তাই ‘পান্ডা প্যারেন্টিং’য়ের পন্থা বেছে নিচ্ছেন অনেকেই। ধীরস্থির পান্ডারা সন্তানদের যেমন সযত্নে লালন করে, তেমনি নিজের মতো বেড়ে ওঠার সুযোগও দেয়। তাদের অভিভাবকত্বের কৌশল থেকেই এমন নামকরণ। পান্ডা প্যারেন্টিংয়ের মূল কথা হলো, সন্তানকে স্বাধীনতা দেওয়া। নিজের মতো করে বড় হতে গিয়ে সে ভুল করবে, সে ভুল থেকে নিজেই শিখবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদ এস্থার ওয়েজিস্কি তার বই ‘হাও টু রেজ সাকসেসফুল পিপল : সিম্পল লেসনস ফর র্যাডিক্যাল রেজাল্টস’ বইয়ে প্রথম পান্ডা প্যারেন্টিংয়ের কথা উল্লেখ করেন। তার বক্তব্য হলো, পান্ডা প্যারেন্টিংয়ের মূল কথা হলো সন্তান ও অভিভাবকের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ও স্বাধীনতার সম্পর্ক গড়ে তোলা। আর সব সময় ছেলেমেয়ের ওপর নজরদারি করার বদলে অভিভাবকের উচিত প্রয়োজনের সময় সন্তানের পাশে থাকা।
পান্ডা প্যারেটিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ দিক
শিশু কোনো কঠিন পরিস্থিতিতে পড়লে সেখান থেকে নিজের মতো করে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে দিন। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখুন সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে যেন বড়সড় কোনো সমস্যায় পড়ে না যায় সে।
শিশুকে তার আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখার শিক্ষা দিতে হবে ছোট থেকেই। তাকে বোঝাতে হবে যে কোনো পরিস্থিতিতে যা ইচ্ছা হলো সেই আচরণ করা যায় না। ফলে জীবনের ওঠানামা নিজেকে সামলে নিতে আর সেভাবে সমস্যায় পড়তে হবে না।
সন্তানকে কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ, তার ফারাক বোঝাতে হবে। মা-বাবা বলেই সন্তানের ওপর সবকিছু চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। শিশুকে খোলাখুলি কথা বলার স্বাধীনতা দিতে হবে। এটি শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং তারা মনে করে তাদের মতামত শোনা হচ্ছে, অর্থাৎ তারা গুরুত্বপূর্ণ।
সন্তানকে ছোট ছোট দায়িত্ব দিন। বাড়িতে কোনো বয়স্ক সদস্য থাকলে তাকে ওষুধ খাওয়ার কথা মনে করিয়ে দিতে শেখান। নিজের জামাকাপড়, বইপত্র গুছিয়ে রাখা, খাওয়ার পর থালা নির্দিষ্ট জায়গায় সরিয়ে রাখার শিক্ষা দিন।
সন্তানকে যখন তার নিজের সিদ্ধান্ত নিতে দেবেন এবং তাকে স্বাধীনতা দেবেন, তখন সে তার সিদ্ধান্ত ও কর্মের দায় নিতে শিখবে। পান্ডা প্যারেন্টিং স্ব-অনুপ্রেরণাকে গুরুত্ব দেয়। এই প্রক্রিয়ায় বেড়ে ওঠা শিশু নিজস্ব লক্ষ্য নির্ধারণ করে এবং তা অর্জনের দায়িত্ব নেয়।
প্রতিটি মানবশিশুই অনন্য। শিশুদের মধ্যে কেউ কেউ একটু জেদি। এমন শিশুকে আবার ভিন্ন উপায়ে বড় করে তুলতে হয়। যে শিশু সহজে সবকিছু গ্রহণ করে, তাদের জন্য পান্ডা প্যারেন্টিং দারুণ।