
তাপমাত্রা বেড়ে গেলে মানুষের শরীরও গরম হয়। ছবি: সংগৃহীত
তাপমাত্রা বেড়ে গেলে মানুষের শরীরও গরম হয়ে যায়। ফলে রক্তনালিগুলো খুলে যায়। এতে রক্ত চাপ কমে যায়, যে কারণে সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন করা হৃৎপিণ্ডের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। এসব কারণে মৃদু কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে- ত্বকে ফুসকুড়ি পড়া, চুলকানি ও পা ফুলে যাওয়া, যা রক্তনালি উন্মুক্ত হয়ে যাওয়ার কারণে হয়ে থাকে।
এ ছাড়া প্রচুর ঘাম হওয়ার কারণে শরীরে তরল পদার্থ ও লবণের পরিমাণ কমে যায়; গুরুতর ক্ষেত্রে দেহে এই দুটি জিনিসের মধ্যে যে ভারসাম্য আছে তাতেও পরিবর্তন ঘটে। এসব কিছু একসঙ্গে মিলিয়ে গরমে শরীর পরিশ্রান্ত হয়ে যেতে পারে এবং তার লক্ষণগুলো হচ্ছে- মাথা চক্কর দেওয়া, বমি বমি ভাব, নিস্তেজ হয়ে পড়া, মূর্ছা যাওয়া, কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়া, পেশি সংকুচিত হওয়া, মাথাব্যথা, প্রচণ্ড ঘাম হওয়া ও ক্লান্তি। আর রক্তচাপ খুব বেশি কমে গেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
আমাদের শরীর সব সময়ই তার তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখতে চেষ্টা করে। কারণ এই তাপমাত্রার মধ্যেই দেহ ঠিকমতো কাজ করতে পারে। কিন্তু আবহাওয়া যখন গরম হয়ে যায়, তখন দেহের ভেতরের তাপমাত্রা কমিয়ে রাখার জন্য শরীরকে অনেক কাজ করতে হয়। শরীর থেকে তাপ ছেড়ে দেওয়ার জন্য চামড়ার কাছাকাছি যেসব রক্তনালি আছে সেগুলো খুলে যায় এবং দেহে ঘাম হতে শুরু করে। ওই ঘাম যখন জলীয় বাষ্প হয়ে উড়ে যায়, তখন নাটকীয়ভাবে আশপাশের তাপমাত্রা আরো বেড়ে যায়, কিন্তু এর ফলে ত্বক ঠান্ডা হয়ে আসে।
নিরাপদ থাকতে যা করতে হবে
১. ঘরের ভেতরে অবস্থান করুন। যেসব জানালা সূর্যের দিকে মুখ করে আছে সেগুলোর পর্দা টেনে দিন।
২. প্রচুর পানি পান করুন।
৩. কাউকে বিশেষ করে শিশুদের কোনো ঘরে বা গাড়িতে একা রেখে যাবেন না।
৪. বেলা ১১টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত নিজেকে সূর্যের আলো থেকে দূরে রাখুন। এই সময়ে সূর্যের রশ্মি সবচেয়ে তীব্র হয়।
৫. ছায়ার মধ্যে আশ্রয় নিন। সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
৬. মাথায় লম্বা ঘেরওয়ালা টুপি পরুন।
৭. দিনের সবচেয়ে গরম সময়ে শরীর চর্চা বা ব্যায়াম করা পরিহার করুন।
৮. কোথাও গেলে সঙ্গে করে পানি নিয়ে যাবেন।
৯. কোথাও পুকুর বা খাল-বিল দেখলেই নিজেকে ঠান্ডা করার জন্য সেখানে নেমে পড়বেন না, কারণ এতে আরো অনেক বেশি বিপদ হতে পারে।
আক্রান্তদের চিকিৎসা
এমন পরিস্থিতিতে কাউকে যদি আধঘণ্টার মধ্যে ঠান্ডা করা যায়, তাহলে বড় ধরনের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে ঠান্ডা জায়গায় সরিয়ে নিয়ে শুইয়ে দিন এবং পা দুটো সামান্য উপরে তুলে ধরুন। প্রচুর পানি বা অন্যান্য ধরনের পানীয় খেতে দিন। আক্রান্ত ব্যক্তির ত্বক ঠান্ডা করার ব্যবস্থা করুন, যেমন- শরীরে ঠান্ডা পানি ছিটিয়ে দেওয়া বা স্পঞ্জ দিয়ে গা মুছে দেওয়া। বাতাস করতে হবে, ঘাড়ে এবং বগলের নিচে বরফের প্যাকেট রেখে শরীর ঠান্ডা করতে হবে। আধঘণ্টার মধ্যে স্বাভাবিক না হলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। তখন জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
কেউ হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তার শরীরে ঘাম নাও হতে পারে। তাদের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে এবং তারা জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারেন।
যারা ঝুঁকিতে
বয়স্ক মানুষ অথবা যারা দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগের মতো অসুখে ভুগছেন, গরমের কারণে তাদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। তাদের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিশুদের মধ্যেও এই ঝুঁকি বেশি।
যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের শরীরের পানি খুব দ্রুত কমে যেতে পারে। এ ছাড়া এই রোগের কারণে রক্তনালিতে পরিবর্তন ঘটতে পারে, যার ফলে শরীরে ঘাম হওয়ার ক্ষমতাও কমে যেতে পারে।
যারা ডিমেনশিয়ার মতো মস্তিষ্কের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত তারা হয়তো গরমের বিষয়ে অসচেতন থাকতে পারেন এবং এ বিষয়ে কিছু করতেও তারা অক্ষম।