
আজকাল তরুণদের ডিকশনারিতে একটা শব্দ খুব শোনা যায়। শব্দটি হলো ‘ট্রিট’। পরীক্ষায় ভালো ফল, চাকরিতে যোগদান, জন্মদিন কিংবা শুধু বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা অথবা যেকোনো উপলক্ষেই এখন ট্রিট দেওয়া যেন বাধ্যতামূলক। ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট বা ফাস্টফুডের টেবিলে জমে ওঠে এই ট্রিটের আসর।
এই সংস্কৃতির একটা ইতিবাচক দিক আছে। এতে বন্ধুত্ব আরো দৃঢ় হয়, একসঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ তৈরি হয়, ছোটখাটো সাফল্যও উদযাপনের মতো মনে হয়। অনেক তরুণের মতে, ট্রিট হলো স্মৃতি তৈরির একটি মাধ্যম। পড়াশোনার তুমুল চাপ বা জীবনের দৌড়ঝাঁপের মাঝে এই ট্রিট সংস্কৃতি আনন্দের খোরাক দেয়।
তবে প্রশ্ন হলো, এই ট্রিটের মূল্যে আনন্দের দাম কতটা চড়া? অনেক তরুণই মনে করছে, মাস শেষ হওয়ার আগেই তাদের টিউশনি কিংবা হাত খরচের টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে। অথবা চাপ পড়ছে মা-বাবার রোজগারের ওপর। অধিকাংশ তরুণ
মা-বাবার দেওয়া হাতখরচ থেকে ট্রিটের টাকা জোগাড় করেন। এতে পরিবারে আর্থিক চাপ বাড়ে। আবার চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রেও পরিকল্পনাহীন এই খরচ ভবিষ্যতের সঞ্চয়ে বড় প্রভাব ফেলে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রিট কালচারের পেছনে কাজ করছে সামাজিক স্বীকৃতির চাহিদা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি পোস্ট করে বন্ধুদের দেখানো, ‘আমি কিন্তু পিছিয়ে নেই’-এই মানসিকতা তরুণদের বেশি খরচ করতে প্রলুব্ধ করছে। মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, এটি এক ধরনের ‘সামাজিক চাপ’, যেখানে সামর্থ্যরে বাইরে গিয়ে অনেকেই ট্রিট দিতে বাধ্য হন।
তবে এর বিকল্পও আছে। ট্রিট মানেই দামি রেস্টুরেন্টে যাওয়া নয়। ঘরে ছোট আড্ডা, পার্কে মিলনমেলা কিংবা সাশ্রয়ী কোনো আয়োজনও আনন্দ দিতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, খরচের একটা মাসিক পরিকল্পনা করা। যেখানে কোন মাসে কত টাকা বিনোদনে খরচ করবেন, তা আগে ঠিক করা থাকবে। এতে আনন্দও থাকবে, অযথা চাপও আসবে না। তাই দরকার ভারসাম্য। যেন ট্রিট হয় আনন্দের প্রতীক, চাপের নয়।