
প্রতীকী ছবি
পা নাচানো, নাড়ানো বা মেঝেতে গোড়ালি ঠোকা-এই অভ্যাস প্রায় সবার আছে। অনেকের ধারণা যে এটা একটি অভ্যাস। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক চাপ থেকে পরিত্রাণ পেতে শরীর নিজে থেকেই এই ব্যাপারটা ঘটায়। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের মনোবিজ্ঞানী চার্লি কলিন্স ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, ‘মানসিক চাপের হরমোন কর্টিসলের মাত্রা বৃদ্ধির মানে হলো উচ্চ হৃদ গতি। আর এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে দরকার নড়াচড়া করা। কারণ নড়াচড়া করলে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়, উত্তেজনা কমে-যে কারণে মনের অজান্তেই পা নাচানো হয়।’ পা নাচানোর মাধ্যমে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তাই চিকিৎসকরাও পা নাচানো সমর্থন করেন। পা নাচানোর সাধারণ কারণগুলো হলো-
মনোযোগ বাড়াতে : মনোযোগ ধরে রাখতেও অনেক সময় অবচেতন মনেই পা নাচানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মিসিসিপির এক গবেষণায় দেখা গেছে, হাইপার অ্যাক্টিভ ডিজ-অর্ডারে (এডিএইচডি) আক্রান্ত শিশুদের মনোযোগ ধরে রাখতে পুনরাবৃত্তিমূলক নাড়াচাড়া বেশ কার্যকর হয়েছে। একইভাবে কাজের মধ্যে থাকলে পা নাড়ানো মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষেত্রে কাজ করে বলে জানান ডা. কলিন্স। তিনি বলেন, বিশেষ করে বিরক্ত হওয়ার মতো নেতিবাচক অনুভূতি থেকে মনোযোগ সরিয়ে রাখা যায়।
অতিরিক্ত ক্যাফেইন : ক্যাফেইন জাতীয় খাবারের প্রতি আসক্তি থেকেও পা নাচানোর বিষয়টি আসতে পারে। ডা. কলিন্স বলেন, ‘উত্তেজনা বাড়ানোর মতো উপাদান যেমন-ক্যাফেইন, মস্তিষ্কে উত্তেজনা বাড়ায়, যা অনেক সময় অবসাদ বা ক্লান্তির কারণ হতে পারে। আর এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতেও মনের অজান্তে পা নাচানো হয়।’
গুরুতর কোনো কারণ : সাধারণভাবে পা নাচানো আর অস্থির হয়ে পা ঠোকার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। নর্থ ক্যারোলিনার স্নায়ু বিশেষজ্ঞ ড. প্যাট্রিক পোর্টার বলেন, ‘স্নায়ুবিক সমস্যাকে গুরুতর হিসেবে ধরা হয় যখন অতিরিক্ত ঘাবড়ানো, মানসিক চাপ বা বিরক্তি দেখা দেয়। এ জন্য শরীর নড়াচড়া করার জন্য উশখুশ করতে থাকে। যে কারণে একটা পা নাড়াতে ইচ্ছা হয়। যদি অস্বস্তি বা কোনো ব্যথা থেকে পা নাচানো হয় তবে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলা উচিত।’
শারীরিক মুক্তি : মানুষের পক্ষে নড়াচড়া না করে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা প্রায় অসম্ভব। বেশিক্ষণ স্থির হয়ে থাকলে রক্ত চলাচলে সমস্যা হয়, শিরায় টান পড়ে, নানা জায়গায় ব্যথা শুরু হয়। ডা. প্যাট্রিক বলেন, ‘আসলে পা নাচানোকে আমরা শারীরিক মুক্তির অবচেতন উপায় হিসেবে ব্যবহার করছি।’
অভ্যাস ছাড়াতে করণীয়
মানসিক চাপ কমাতে যোগাভ্যাস বা মেডিটেশন করতে পারেন। ক্যাফেইনযুক্ত খাবার ও পানীয় কমিয়ে দিতে হবে। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করুন। এই অভ্যাসটি ক্ষতিকর মনে হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।