
প্রতীকী ছবি
বর্তমান নগরজীবনে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের চাকরি করা এখন আর অস্বাভাবিক কিছু নয়। অনেক ক্ষেত্রেই এটি পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতার পাশাপাশি নারীর আর্থিক স্বাধীনতা ও আত্মমর্যাদার প্রতীক। জীবনের ভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জও। তবে এর সঙ্গে আসে কিছু চাপ ও দ্বন্দ্ব, যা সঠিকভাবে সামাল দেওয়া না গেলে সম্পর্কের ভেতরে অস্থিরতা তৈরি হয়। সম্পর্কের ভেতরের সমঝোতাই ঠিক করে দেয় দম্পতির সুখের রূপকথা।
সময়ের টানাপড়েন : সবচেয়ে বড় সমস্যা আসে সময় ব্যবস্থাপনায়। অফিসের কাজ, যানজট, ক্লান্তি-এসবের ভিড়ে একে অন্যকে সময় দেওয়া কঠিন হয়ে ওঠে। অনেকে অভিযোগ করেন, একসঙ্গে থেকেও যেন দূরত্ব তৈরি হয়। পরিবার ও দাম্পত্য সম্পর্ক রক্ষায় এই সময় সংকট একটি বড় বাধা।
গৃহস্থালির দায়িত্ব ভাগাভাগি : চাকরিজীবী দম্পতিদের জীবনে গৃহস্থালির কাজ একটি সংবেদনশীল বিষয়। এখনো অনেক পরিবারে গৃহকর্মকে নারীর কাজ হিসেবে দেখা হয়। ফলে স্ত্রী অফিস থেকে ফিরে আবার ঘরের কাজ সামলাতে গিয়ে দ্বিগুণ চাপের মুখে পড়েন। এতে শারীরিক ক্লান্তির পাশাপাশি মানসিক ক্ষোভ জমতে থাকে।
সন্তানের লালন-পালন : যখন পরিবারে সন্তান থাকে, তখন পরিস্থিতি আরো জটিল হয়। সন্তানের যত্ন, পড়াশোনা বা মানসিক বিকাশে পর্যাপ্ত সময় না দিতে পারার কারণে অনেক সময় অপরাধবোধ তৈরি হয়। আবার সন্তান কাকে বেশি সময় পাচ্ছে বা পাচ্ছে না-এই বিষয়েও দাম্পত্য সম্পর্কে টানাপড়েন দেখা দেয়।
মানসিক চাপ ও ক্লান্তি : টানা অফিস, ঘরের কাজ, সামাজিক প্রত্যাশা-সব মিলে মানসিক চাপ বাড়ে। এর প্রভাব পড়ে দাম্পত্য সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতায়। অনেক দম্পতি বলেন, এই ক্লান্তি থেকে ঝগড়া বা ভুল-বোঝাবুঝির পরিমাণ বেড়ে যায়।
উত্তরণের উপায়
সমঝোতা ও খোলামেলা আলোচনা : প্রথম করণীয় হলো খোলাখুলি কথা বলা। কার কী দায়িত্ব থাকবে, কবে কে ছুটি নিতে পারবে-এসব আগেভাগে আলোচনা করে নিলে অপ্রয়োজনীয় চাপ কমে। একে অপরের সীমাবদ্ধতা বোঝার মধ্যেই আছে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার শক্তি।
কাজের ভাগাভাগি : গৃহস্থালির কাজকে যৌথ দায়িত্ব হিসেবে দেখা জরুরি। কে রান্না করবে, কে বাজার করবে, সন্তানকে কে পড়াবে-এসব দায়িত্ব ভাগ করে নিলে চাপ সমানভাবে কমে। প্রয়োজনে সাহায্যের জন্য গৃহকর্মী রাখা যেতে পারে।
মানসম্মত সময় : অফিস থেকে ফিরে অনেক সময় না পেলেও অল্প সময়কে মানসম্মত করে তোলা যায়। একসঙ্গে খাওয়ার টেবিলে বসা, হাঁটতে যাওয়া কিংবা সন্তানের সঙ্গে সময় কাটানো-এসব ছোট ছোট মুহূর্ত সম্পর্ককে দৃঢ় করে।
নিজের জন্য সময় : দুজনেরই ব্যক্তিগত সময় থাকা দরকার। বই পড়া, সংগীত শোনা বা কোনো শখের কাজ-এসব মানসিক প্রশান্তি দেয়। প্রশান্ত মনের প্রভাব দাম্পত্য সম্পর্কেও ইতিবাচকভাবে পড়ে।
সমর্থন ও সহযোগিতা : সবশেষে দুজনকেই মনে রাখতে হবে যে তারা প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং সহযাত্রী। একে অপরকে সমর্থন করা, ক্লান্তির সময় পাশে থাকা কিংবা ছোটখাটো সাফল্যে উৎসাহ দেওয়া-এসব সম্পর্ককে টেকসই করে তোলে।