
করোনা নামক এক ভাইরাসে পুরো পৃথিবী পর্যুদস্ত। এখনো এর বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার করা যায়নি। তাই পৃথিবীজুড়েই চলছে মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর তোড়জোড়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে দেশীয় নিরাপদ খাদ্যাভাসের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
আমাদের দেশের জনপদে বিভিন্ন গোষ্ঠীর রয়েছে বিভিন্ন ধরনের খাবারের চল। এক একটি দেশের খাবারের অভ্যাস গড়ে ওঠে সে দেশের জলবায়ু ও শরীরের সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে। এখানে যে আঞ্চলিক খাবার আছে তাতেই আছে এই জলবায়ুর সঙ্গে মিলিয়ে নিজেকে সুরক্ষা দেবার বিষয়টি।
পেলকা
উত্তরাঞ্চলে গ্রামাঞ্চলে রয়েছে ‘পেলকা’ নামে একটি খাবার। এই খাবারটি তৈরি হয় দশ থেকে বারো ধরনের শাকপাতা দিয়ে। এটি রান্নার জন্য ব্যবহার করা হয় ১০ থেকে ১২ ধরনের শাক। লালশাক, সজিনা শাক, লাউ শাক থেকে শুরু করে মরিচ পাতা সবই এতে দেওয়া হয়।
পুষ্টিবিদরা বলেন, বিভিন্ন ধরনের শাক ও পাতায় পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন। আর যখন এতগুলো পাতা একসঙ্গে ঘণ্ট করে খাওয়া হয়, তখন সেটা পরিণত হয় দারুণ এক ঔষধি গুণে ভরপুর খাবারে। রংপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের যারা অধিবাসী তারা এই খাবারটির কারণে প্রাকৃতিকভাবেই অনেক রোগকে প্রতিহত করতে পারেন।
ছাতু
‘ছাতু’ আরও একটি জনপ্রিয় আঞ্চলিক খাবার, যা কিনা যশোর কুষ্টিয়া অঞ্চলে সবাই খেয়ে থাকে। এটা মূলত গম, ছোলা, বাদাম ইত্যাদি চূর্ণ করে তৈরি এক ধরনের ‘হেলথ পাউডার’, যা এই অঞ্চলের মানুষ গরমকালে আখের গুড় দিয়ে পানি মিশিয়ে মণ্ড তৈরি করে খেয়ে থাকে। এই খাবারটি আমাদের শরীরে ইমিউন সিস্টেম বাড়াতে দারুণ কার্যকর।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বলা হয়েছে, শরীর ঠাণ্ডা রাখতে এবং কফপিত্ত নাশ করতে ছাতুর জুড়ি নেই। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ মনে করে গ্রীষ্মকালে আখের গুড়ের সঙ্গে মিশিয়ে এই ছাতু তাদের সন্তানদের অনেক রোগবালাই থেকে বাঁচাবে এবং তারাও এই খাবার খেয়ে সুস্থ থাকবে।
তাই আপনার বাচ্চার এবং আপনার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বাইরের আমদানিকৃত দামি সিরিয়ালের বদলে খেতে পারেন দেশি খাবার ছাতু। ছাতু ও আখের গুড় একসঙ্গে খেলে শরীরে ব্লাড সেলের পরিমাণ বেড়ে যায় আর ব্লাড সেলের পরিমাণ বেড়ে গেলে শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণও বেড়ে যায়, যার ফলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। বাজারে পাওয়া বিভিন্ন এনার্জি ড্রিংক বা হেলথ ড্রিংকের পরিবর্তে আপনার সোনামণিকে দিন দেশি খাবার আখের গুড় ও ছাতু।
নানান ধরনের ভর্তা
দেশে প্রচলিত বিভিন্ন ভর্তাও এই সময়ে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ কার্যকর। যেমন কালোজিরার ভর্তা, থানকুনি পাতার ভর্তা, ঘিয়ে ভাজা নিমপাতা ভর্তা, সরিষা ভর্তা, কাঁচকলা ভর্তা, আলু ভর্তা ইত্যাদি দেশি খাবার আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে। কারণ এইসব ভর্তার সঙ্গেই ব্যবহার করা হয় দেশি সরিষার তেল। আর খাঁটি সরিষার তেলে রয়েছে এন্টিফাঙ্গাল ও এন্টিব্যাক্টিরিয়াল গুণাগুণ, যা কিনা আমাদের দেহের ভেতরে গিয়ে বাড়িয়ে তোলে এন্টিবডির কার্যক্ষমতা।
কালোজিরা ও মধু
কালোজিরা আর মধুকে বলা হয় সব রোগের মহৌষধ। প্রতিদিন যদি একটু কালো জিরার তেল মধুর সঙ্গে মিশিয়ে বাচ্চাকে খাওয়াতে পারেন তবে সেটা একজন যোদ্ধার মতোই আপনার বাচ্চাকে এবং আপনার পরিবারের সবাইকে দিতে পারে বিশেষ সুরক্ষা। তবে ছোট বাচ্চাদের যেটাই খাওয়াবেন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়াবেন। দেশি নিরাপদ খাদ্যাভাস গড়ে তুলুন এবং নিজে ও পরিবারের সবাইকে নিয়ে করোনা মোকাবেলার শক্তি অর্জন করুন।
ঘি
খাঁটি ঘি এর কদর বলে বোঝানো যাবে না। তবে অনেকে ঘি- কে অস্বাস্থ্যকর খাবার হিসাবে চিহ্নিত করেন। মূলত খাঁটি ঘি সেইসব ফ্যাটি এসিড অথবা স্যাটুরড ফ্যাট ধারণ করে যাতে প্রাথমিকভাবে ৮৯ শতাংশ শর্ট চেইন ফ্যাটি এসিড রয়েছে।, এখানে সেই ঘি এর স্বাস্থ্যকর বিষয় তুলে ধরা হয়েছে যা সাধারণত বাড়িতে প্রস্তুত করা হয় । এতে ওজন বাড়ে না। একজন মানুষ সারাদিনে ১০-১৫ গ্রাম ফ্যাট গ্রহণ করতে পারেন।