কারণে বা অকারণে আমাদের মন খারাপ হয়। নিজের ইচ্ছে মতো কোনো কিছু না হলেই আমরা মন খারাপ করে বসে থাকি। কখনো জানালার গ্রিল ধরে বাইরের আকাশ দেখি, মনে মনে কথা বলি, কখনো চুপচাপ বসে থাকি। এটাকে অনেকে বিষণ্ণতা বলেন। মন খারাপ এবং বিষণ্ণতা কিন্তু এক নয়। মন খারাপ বা দুঃখবোধ হচ্ছে মানুষের একটি স্বাভাবিক আবেগ।
অন্য দিকে বিষণ্ণতা বা ডিপ্রেশন হচ্ছে সেই আবেগের অস্বাভাবিক বা দীর্ঘমেয়াদি বহিঃপ্রকাশ। অনেক সময় আমরা মন খারাপকে বিষণ্ণতা মনে করে মুষড়ে পড়ি, আবার বিষণ্ণতাকে সামান্য মন খারাপ ভেবে গুরুত্ব দিই না। এই দুটি বিষয়ের কিছু পার্থক্য রয়েছে। সুস্থ মানুষের জীবনে দুঃখবোধ হওয়া এবং মন খারাপ থাকা স্বাভাবিক ঘটনা। চিকিৎসাবিজ্ঞানে ‘বিষণ্ণতা’ বা ‘ডিপ্রেশন’ বলতে যা বোঝায়, তা সাধারণ মন খারাপের চেয়ে কিছু বেশি। বিষণ্ণতার ক্ষেত্রে কোনো কোনো সময় কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না।
বিষণ্ণতা
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ নারী-পুরুষের বিষণ্ণতা রয়েছে। যে কোনো বয়সে, এমনকি শিশুদের মধ্যেও এটি দেখা দিতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সে বিষণ্ণতার লক্ষণ প্রথমবারের মতো দেখা যায়।
এ ছাড়া ১৫ থেকে ১৮ বছর ও ৬০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে এর ঝুঁকি কিছুটা বেশি। ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট, ক্যান্সার, স্ট্রোক, হৃদরোগ, মৃগীসহ দীর্ঘমেয়াদি রোগে যারা ভুগছেন, তাদের বিষণ্ণতা রোগ হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। বেকারত্ব, দারিদ্র্য, একাকিত্ব, পারিবারিক ও সম্পর্কের সমস্যা, গর্ভকালীন ও প্রসব-পরবর্তী সময়, বিবাহবিচ্ছেদ, প্রবাসজীবন, মাদক সেবন ইত্যাদি কারণেও বিষণ্ণতা রোগ হতে পারে। বিষণ্ণতা রোগে বেশ কিছু শারীরিক লক্ষণ, যেমন ঘুমের সমস্যা, রুচির সমস্যা, ক্লান্তিবোধ, শরীরে ব্যথা ইত্যাদি দেখা যায়। এ ধরনের রোগীদের চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
মন খারাপ
মন খারাপ কোনো রোগ নয়। একটি মৌলিক আবেগ। যে কোনো ক্ষতি বা আঘাতের পর মন খারাপ বা দুঃখবোধ একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া এবং এটি ক্ষণস্থায়ী। বেশির ভাগ সময়ই মন খারাপের কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। মন খারাপের জন্য কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। নারী-পুরুষ উভয়েরই মন খারাপ হওয়ার ঝুঁকি সমান।