
‘পর্যটনের আনন্দে, তুলশীমালার সুগন্ধে’ শেরপুর জেলার ‘জেলা ব্রেন্ডিং’। জেলার পর্যটন খাতকে ইতিমধ্যে দেশজুড়ে পরিচিত এনে দিয়েছে সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় এলাকার পানিহাতা, মধুটিলা ইকোপার্ক, গজনি অবকাশ, বণরাণী রিসোর্ট, নিয়ারবাড়ি টিলা, রাজার পাহাড়, কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের মতো সীমান্ত সড়কসহ বিভিন্ন মনোরম শাল-গজারি বাগান ও পাহাড়ি দৃশ্য।
এসব দৃশ্যে পাশাপাশি নুতন করে যোগ হয়েছে সর্বোচ্চ চূড়া বা শেরপুর পিক। এখান থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা পাহাড়কে দেখা যায় খুব কাছ থেকে। সেই সাথে বিস্তৃর্ণ গারো পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য যে কোন ভ্রমণ পিপাসুকে মুগ্ধতা এনে দিবে এবং মেঘ-রোদ্দুরের খেলায় ক্ষণিকের জন্য হলেও আপনার শহুরে জীবনের নানা কাজের ক্লান্তি দূর করে দিবে নিমিষেই।
শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বুরুঙ্গা ব্রিজ সংলগ্ন বুরুঙ্গা ও বাতকুঁচি গ্রামের সীমান্ত রেখা বরাবর প্রায় ৭ বছর আগে গাজিপুরের এক ব্যক্তি ৯ একর জমির উপর প্রায় ৭০ থেকে ৮০ ফুট উচু পাহাড়ি টিলার উপর ‘নুর মাস পল্লী’ নামে আম, জাম, কাঠাঁল, লিচু, কলা, মাল্টা, পেয়ারা, নারিকেল, কামরাঙ্গাসহ বিভিন্ন দেশীয় ফল এবং বিভিন্ন মৌসুমের সবজির মিশ্র বাগান প্রতিষ্ঠা করেছে। কয়েক বছর যাবত তিনি আম, লিচু, মাল্টাসহ বিভিন্ন ফল বানিজ্যিক ভাবে বিক্রি শুরু করেছেন। এখানে পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে রয়েছে এসব ফলদ গাছ। ধাপে ধাপে বিভিন্ন টিলার উপর রয়েছে বেশ কয়েকটি বেঞ্চ ও ছাউনি। যেখানে বসে দূরের নয়নাভিরাম প্রকৃতিক দৃশ্য, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা পাহাড় একেবারে কাছ থেকে দেখার সুযোগ।
নূর মাস পল্লীটি এখনও সর্বসাধারণের জন্য সব সময় উন্মুক্ত করা হয়নি ফল বাগানের নিরাপত্তা এবং সেখানে পৌঁছানোর সহজ রাস্তা তৈরি না হওয়ায়। তবে ফলের মৌসুম ছাড়া বিশেষ অনুরোধে সমাজের বিশেষ ব্যক্তিদের এ প্রকল্প দর্শনের সুযোগ দেয়া হয়। বুরুঙ্গা ব্রিজ থেকে ব্রিজের পশ্চিম পাশের হাতের বাঁ দিক থেকে নেমে উত্তরে প্রায় ৫০০ মিটার অদুরে বুরুঙ্গা নদীতে মিশে গেছে একটি খরস্রোতা খাল বা ছড়া। সেই ছাড়ার পার হয়ে হাতের ডান পাশেই প্রকল্পটির প্রবেশ গেইট। ছড়ার উপর দিয়ে সরকারিভাবে এখনও কোন ব্রিজ নির্মাণ না হওয়ায় স্থানীয় এবং প্রকল্পের কর্তৃপক্ষের নিজের অর্থায়নে একটি বাঁশের সাঁকো নির্মান করা হলেও প্রতি বছর পাহাড়ি ঢলে তার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ফলে সব সময় বেশ ঝুকি নিয়ে পাড় হতে হয় সে ছড়াটি।
এখানে সরকারিভাবে ব্রিজ নির্মাণ হলেই সর্বসাধারণের জন্য প্রবেশ এবং একটি রিসোর্ট তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান ‘নূর মাস পল্লী’ কর্তৃপক্ষ। নূর মাস পল্লীর প্রবেশ দ্বার থেকেই পাকা সিঁড়ির ধাপ দিয়ে উপরে উঠার ব্যবস্থা রয়েছে। সেইসাখে বিশ্রামের জন্য রয়েছে বেঞ্চ। সেই সাথে পাহাড়ের ঢালে সাজানো হয়েছে বিভিন্ন ফল-ফুল ও সবজির গাছ। এখানের সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছতে তিন দফা বিশ্রাম নিয়ে উপরে উঠার ব্যবস্থা করা হয়েছে। খাবার পানির জন্য গভির নলকূপের মাধ্যমে পানি সরবরাহ, পল্লী বিদ্যুতের পাশাপাশি রয়েছে সোলার প্লান্ট। ফলে বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার কোন সমস্যার নেই।
বর্তমানে এখানে চূড়ার মাঝামাঝিতে একটি ঘর নির্মাণ করে মালিক পক্ষ এবং বাগানের কেয়ারটেকার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো- এখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দুটো বেশ ভালোভাবে উপভোগ করা যায়। বর্ষা বা গরমের মওসুমে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হাফিয়ে গেলেও শেষ প্রান্তে উঠার পর ঝিরিঝিরি বাতাস আপনাকে সকল ক্লান্তি দূর করে দিবে।
শীতের সময় দূরের আকাশ কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকায় পরিস্কারভাবে প্রকৃতি না দেখা গেলেও শরতকালের মেঘের ভেলার ছুটাছুটি আর মনকাড়া মেঘের নানা রঙের প্রকৃতির ক্যানভাসে মনকে রাঙিয়ে দিবে আর শহরের এক ঘেয়েমি ও ব্যস্ততার গ্লানি ক্ষণিকের জন্য হলেও ভুলিয়ে দিবে।
নূর মাস পল্লীর দায়িত্বপ্রাপ্ত শামীম হোসেন বলেন, আমাদের এই প্রকল্পটি মূলত একটি মিশ্র ফল বাগান। পাহাড়ি টিলার উপরও যে মিশ্র ফল বাগান গড়ে তোলা সম্ভব তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে। এখানে যদিও অনেকেই বেড়াতে আসে তবে এটি বেড়ানো বা পর্যটনের জন্য খুলে দেয়া হলে আমার বাগানের ক্ষতি হবে। তারপরও অনেকেই এখানে বেড়াতে আসে এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করে।