Logo
×

Follow Us

লাইফস্টাইল

ভ্রমণে খুঁজি অনুপ্রেরণা

Icon

তানিয়া সুলতানা হ্যাপি

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২০, ০৯:৩৯

ভ্রমণে খুঁজি অনুপ্রেরণা

খৈয়াছড়া ঝর্না

সরকারিভাবে লকডাউন তুলে নিলেও কর্মজীবন স্বাভাবিক না হওয়ায় আমি লকডাউনেই আছি। ফলে খুব বোরিং ফিল করি। কেবলই মনে হয়, আমার মিষ্টি হাসিটা কোথায় গেলো, কিংবা কীভাবে যে খুঁজে পাই! 

লকডাউন শেষে পর্যটন জোনগুলো খুলে দেয়া হলেও ভ্রমণকন্যা সংগঠনটি যখন ইভেন্ট আহ্বান করা শুরু করল, তখন আমিও তাদের আহ্বানে সাড়া দিলাম মিষ্টি হাসির খোঁজে রাতারগুলে। সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর ও রাতারগুল ঘুরে ঘুরে আমার মিষ্টি হাসিটা খুঁজে পেলাম ঠিকই; কিন্তু তবুও কেন যেন স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। 

ভাবলাম পাহাড়ে যাই। জীবন সংগ্রামী মানুষ বলেই কি না ক্লান্তি নিবারণের জন্য পাহাড় বরাবরই আমার পছন্দের জায়গা। এবার বাড়ি গিয়ে পারিবারিক কিছু বিষয়ে প্রচণ্ড মন ও মেজাজ খারাপ হয়। মনে মনে ভাবছিলাম মন-মেজাজ খারাপকে প্রশ্রয় দিলে তো আমি মরেই যাব। আর তখনই ফেসবুকে ঢুকে দেখলাম একটা ইভেন্ট। গুলিয়াখালী বিচ আর খৈয়াছড়া ঝর্না দেখার। সামনূনকে (আমার মামাতো ভাই) জিজ্ঞেস করলাম যাবি পাহাড় দেখতে? ইভেন্ট বুকিং করলাম। ইভেন্ট ম্যানেজার জানালেন, বাসের একদম পেছেনের সিট দুটি আমাদের। তবুও রাজি হলাম। কারণ মাথায় ঘুরছে ঝর্না, সমুদ্র অথবা পাহাড়। 

ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে রাত সাড়ে ১১টায় রওয়ানা হয়ে ভোরে পৌঁছলাম। নাস্তা করলাম সহানীয় এক হোটেলে। তারপর রওয়ানা হলাম গুলিয়াখালী বিচের উদ্দেশ্যে। সঙ্গে থাকা সামনূনের এটা প্রথম ট্যুর। সে খুবই অ্যাডভেঞ্চার মুডে আছে। একটু পর পর জিজ্ঞেস করে আপা আর কতক্ষণ পর পাহাড় দেখব? আর কতক্ষণ পর সমুদ্র দেখব?

গুলিয়াখালী বিচ

অটোরিকশায় করে গ্রামের মেঠোপথ দিয়ে গুলিয়াখালী বিচ দেখতে হলে দীর্ঘ একটা পথ কাদা-মাটি পাড়ি দিয়ে যেতে হবে। দেখলাম ছোট্ট বাচ্চা থেকে শুরু করে মধ্যবয়সী সবাই কাদামাটি ডিঙিয়ে পাড়ি দিচ্ছে গুলিয়াখালী বিচ দেখতে। কি আর করা আমিও কাদাপানিতে নেমে হাঁটা ধরলাম গুলিয়াখালী বিচ দেখতে। গুলিয়াখালী বিচ দেখে আমি মোটেও আনন্দ পেলাম না, যন্ত্রণা ছাড়া। কাঁধ ব্যাগে ঝুলিয়ে যে ইয়োলো রঙের জামদানি শাড়িটি নিয়েছিলাম তা পরে আর ছবি তোলা হলো না। তবে সামনূন খুবই মজা পেয়েছে। অনেক ছবি তুলেছে। বিচ থেকে ফেরার পর প্রত্যেকের শরীর কাদায় মাখামাখি। দেখে যেন মনে হচ্ছে একেকটা জাত জেলে। 

গুলিয়াখালী বিচ দেখা শেষে রওয়ানা হলাম খৈয়াছড়া ঝর্না দেখার উদ্দেশ্যে। যদিও ঝর্নাটি আমি আগেও একবার দেখেছিলাম। প্রায় একঘণ্টা হেঁটে যেতে হয়। গিরিপথ আছে। ঝর্নাটির তিনটি ধাপ রয়েছে। প্রথমটিতে সহজে যাওয়া যায়। তবে ওপরের ঝর্না দেখতেই যতসব বিপদ। পিচ্ছিল পথ। অসংখ্য মানুষ ঝিরিপথে হেঁটে এসে পিচ্ছিল করে ফেলে রাস্তাটি। বৃষ্টি হলে তো আর কথাই নেই।

সামনূন দেখতে নাদুসনুদুস। উপরের ট্রেইলে ওঠার সাহস পাচ্ছে না। সে একটু ভারী বলে আমিও উৎসাহ দিচ্ছিলাম না। টিমের যে সদস্যরা উপরে যাবেন না, তাদের সাথে সামনূনকে রেখে আমি রওনা হলাম ওপরের ঝর্না দেখতে। ভাবলাম যাই। দেখে আসি। একবার দেখেছিলাম। আরেকবার দেখি। জীবনে আর কখনো আসি কি-না। ঝর্নায় যাওয়ার ঝিরিপথটাই অনেক সুন্দর। এত এত অপরূপ। এত নিস্তব্ধতা। অনেক পিচ্ছিল ও আঁকাবাঁকা পথ। তবুও আমার মতো মানুষ যে কি করতে এত নিস্তব্ধ পথ পাড়ি দেয়! কি শান্তি খুঁজে পায়, তা একমাত্র আমার মতো অভিযাত্রীরাই বলতে পারবে।

খৈয়াছড়া ঝর্না

প্রায় একঘণ্টা পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছলাম ঝর্নার দ্বিতীয় অংশটি দেখতে। কী যে সুন্দর! কী যে অপরূপ বিধাতার সৃষ্টি। আসলে লিখে বোঝানো সম্ভব নয়। সত্যি কথা বলতে কি সৌন্দর্য উপলব্ধির বিষয়। ঝর্নার বামপাশে আরও চল্লিশ মিনিট ট্রেকিং করলে আরও একটি ঝর্না রয়েছে সেটি নাকি আরও সুন্দর। আগেরবার সে ঝর্নাটি দেখতে পারিনি। কারণ সে যাত্রায় আমি ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। এর মধ্যে টিম হোস্ট বললেন ঝর্নার সমস্ত সৌন্দর্য নাকি সেখানেই। ঝিরিপথে আবারও হাঁটা শুরু করলাম। 

এবার শুরু হলো বৃষ্টি। বৃষ্টির মধ্যে হেঁটে এক ধরনের মজা পাচ্ছিলাম। সব অপরিচিত মানুষ। তবুও কাউকে অচেনা মনে হয় না। সবাই একই পথে হাঁটছি। একই উদ্দেশ্য হাঁটছি। বৃষ্টি বাড়তে লাগল। বিশাল এবড়ো-থেবড়ো পাথর টপকিয়ে ততক্ষণে পৌঁছে গেছি ঝর্নাতলায়। আর তখনই হোস্ট আমাদের সাবধান করলেন ওপর থেকে পাথর পড়ছে। ঝর্নার কাছে যাওয়া যাবে না। এত কষ্ট করে গেলাম তবু ছবি তোলারও সুযোগ দিলেন না। জায়গাটা নিরাপদ নয় বলে আমাদের সরিয়ে আনলেন; কিন্তু আমাদের চেয়ে দুঃসাহসিক একটি টিম ঝর্নার ওপরে কি আছে, তা দেখার জন্য আরও উপরে উঠে গেলেন। ওপর থেকে ঘোষণা দিচ্ছেন সেখানে নাকি রয়েছে আরও বেশি সৌন্দর্য!

প্রতিবার পাহাড়ে গেলে এত কষ্ট হয় যে, মনে মনে বলি আর কোনদিন পাহাড়ে যাব না। এবারই শেষ; কিন্তু পাহাড় থেকে বেরোনোর পর ছবিতে পাহাড়ের সৌন্দর্য, প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দেখে এত মায়া কাজ করে যে, প্রশান্তির জন্য আবার পাহাড়কেই বেছে নেই।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫